তুই আবার কি করবি? তোর করারই বা কি আছে। তুই তো জানতিস, টোপর ভাই কলেজ লাইফ থেকে পার্টি করে, নিষেধ করিসনি কেন?
অনেক করেছি। করলে বলত, আমি পার্টির কাজ করলেও মিটিং, মিছিল কখনো করি না। কি জানিস, আমার মনে হয় বিয়েতে রাজি হইনি বলে আমার উপর রাগ করে এবারে মিছিলে গিয়েছিল। চিঠিটা ওকে দিয়েছিলি?
কি করে দেব। চিঠি পাওয়ার পরের দিনই তো ভার্সিটিতে গোলমাল হল।
চিঠিটা দে।
জিনিয়া সেদিন আলিকে চিঠিটা পড়তে দিয়েছিল, ফেরৎ নিতে ভুলে গেছে। তাই চুপ করে রইল।
কই দে।
কাল তোদের বাসায় গিয়ে দিয়ে আসব।
কেন? এখনই দে না, কাল সকালের ট্রেনে আমি রাজশাহী চলে যাব।
সত্য মিথ্যা কিছু বলতে না পেরে জিনিয়া চুপ করে রইল।
কি ব্যাপার বলতো, চিঠিটা দিচ্ছিস না কেন?
আমি তোর কাছে খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি।
কি যা তা বলছিস, আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।
চিঠিটা এখন আমার কাছে নেই।
টিকলী খুব অবাক হয়ে বলল, কার কাছে আছে?
তোর ভাইয়ার কাছে।
কি বলছিস তুই? নিষেধ করা সত্ত্বেও দিলি? তোর সঙ্গে এত দিনের বন্ধুত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারলি? ছিঃ ছিঃ ভাইয়াকে আমি মুখ দেখাব কি করে?
বিশ্বাস কর দিতে চাইনি, তোর ভাইয়া বাধ্য করিয়েছে।
থাক, আর সাফাই গাইতে হবে না। তোকে চিনতে আমারই ভুল হয়েছে বলে টিকলী চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল।
জিনিয়া তার হাত ধরে বসিয়ে ভিজে গলায় বলল, কেন তোর ভাইয়াকে চিঠিটা দিতে বাধ্য হয়েছি, শোনার পর আমাকে যা কিছু বলতে পারিস। প্রথম চিঠিটা ভার্সিটিতে টোপর ভাইয়াকে দিতে তোর ভাইয়া দেখে ফেলে। তারপর সে আমাকে জিজ্ঞেস করে। আমি বললাম, একটা মেয়ে আমার হাতে টোপর ভাইকে দিতে দিয়েছিল। তোর ভাইয়া তোদের দুজনের সম্পর্কের কথা জানে। তাই মেয়েটার পরিচয় জানতে চায়। আমি বলিনি। ফলে টোপর ভাইয়ার সঙ্গে আমার সম্পর্ক আছে ভেবে আমাকে সন্দেহ করে খুব রেগে গিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে তোর দ্বিতীয় চিঠি পাই। পেপারে ভার্সিটির গোলমালের ঘটনার পড়ে চিঠিটা টোপর ভাইকে দেওয়া হল না। এদিকে আমার উপর তোর ভাইয়ার সন্দেহ আমাকে অস্থির করে তুলল। শেষে থাকতে না পেরে তিন দিন আগে তোদের বাসায় যাই। তারপর কিভাবে আলিকে চিঠিটা দিল এবং টোপরের সম্বন্ধে যা কিছু কথাবার্তা হয়েছিল সব বলে বলল, তোর ভাইয়া তোকে ভীষণ ভালবাসে। টোপর ভাইয়ের কার্যকলাপে খুব দুঃখ পেয়েছে। বলল, টোপর স্বাবলম্বি হওয়ার পর আমি মা-বাবাকে বুঝিয়ে ওদের বিয়ে দেওয়ার কথা বলব ভেবে রেখেছিলাম। কিন্তু এখন আর তার সঙ্গে টিকলীর সম্পর্ক থাকা উচিত নয়। আরো বলল, রাজশাহী গিয়ে তোকে সে কথা জানিয়ে সান্তনা দিয়ে আসবে। কথায় কথায় চিঠিটা নিতে ভুলে গিয়েছি। তা তুই এসেছিস কবে?
কাল।
তোর ভাইয়ার সঙ্গে দেখা হয়নি?
তোর সঙ্গে আলাপ করার পর করব বলে করিনি। তা ছাড়া ভাইয়া কাল কোথায় যেন গিয়েছিল। অনেক রাতে ফিরেছে। আজ সকালে তোর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। বলে শুধু মাকে বলে বেরিয়েছি।
আমার মনে হয়, আজ তোর ভাইয়া নিজেই তোর সঙ্গে আলাপ করবে। এরপরও যদি আমাকে দোষী মনে করিস, তা হলে মাফ চাইছি।
এক্ষেত্রে তোর অন্যায় হয়নি। তোর জায়গায় আমি হলেও তাই করতাম। এবার
আসি রে।
থাক না, দুপুরে খেয়ে বিকেলে যাবি।
নারে, বাসায় সবাই চিন্তা করবে।
তা হলে সামান্য কিছু খেয়া যা।
চা-নাস্তা খেয়ে বিদায় নেওয়ার সময় টিকলী বলল, চিঠি দেব, উত্তর দিস।
৭. মাগরিবের নামায
মাগরিবের নামায পড়ে আলি পড়তে বসেছে, এমন সময় বুয়া চা নিয়ে এল। যখনই সে পড়তে বসে তখনই তার এক কাপ চা চাই। এটা তার ছোটবেলা থেকে অভ্যাস। চা না খেলে পড়ায় মন বসে না। বুয়া চা দিয়ে চলে যাচ্ছিল। আলি তাকে বলল, টিকলীকে ডেকে দাও।
টিকলী মায়ের সঙ্গে কথা বলছিল। বুয়া এসে বলল, আপনাকে ভাইয়া ডাকছেন।
টিকলীর তখন জিনিয়ার কথা মনে পড়ল। আজ তোর ভাইয়া তোকে কিছু বলতে পারে। ভয়ে ভয়ে ভাইয়ার রুমে এল।
আলি পড়া শুরু না করে তার জন্য অপেক্ষা করছিল। তাকে দেখে বলল, আয়। বস। কয়েকটা কথা বলব বলে ডাকলাম।
আলি পড়ার টেবিলের সামনে চেয়ারে বসেছিল, টিকলী খাটে বসল।
আলি বলল, তোর আর টোপরের ব্যাপারটা জানি বলে তার পরিণতি দেখে খুব দুঃখ পেয়েছি। এবারে যে চিঠি তুই টোপরকে দেওয়ার জন্য জিনিয়াকে দিয়েছিলি, সেটা আমি পড়েছি। পড়ে তোদের গভীর সম্পর্কের কথা জানতে পেরে সেই দুঃখ আরও বেড়ে গেছে। শোন্, মানুষ তকদিরের হাতে বন্দী। তাকে কেউ রদবদল করতে পারে না। তাই বলছি, টোপর যদি নিজের ভুল বুঝতে পেরে শুধরে যায়, তা হলে আমি তোকে বাধা দেব না। কিন্তু তা না হয়ে যদি আরো খারাপ হয়ে যায়, তা হলে খুব শক্ত ভাবে বাধা দেব। আর তোকেও তকদিরের উপর সবর করে তাকে ভুলে যেতে হবে। তুই আমার একমাত্র বোন। তোকে কতটা ভালবাসি, তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তুইি ভবিষ্যৎ জীবনে দুঃখ কষ্ট বা অশান্তি পাবি, এটা আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারব না। তারপর চিঠিটা তাকে দিয়ে ভিজে গলায় বলল, জিনিয়াকে দিতে বাধ্য করিয়েছিলাম। তাকে তুই ভুল বুঝিস না। এবার যা, আমার আর কিছু বলার নেই।
ভাইয়ার কথা শুনতে শুনতে টিকলীর চোখে পানি এসে গেছে। চোখ মুছে বলল, ভাইয়া, তুমি দোওয়া করো, আমি যেন তোমার দুঃখের কারণ না হই। তারপর গুটি গুটি পায়ে সেখান থেকে চলে গেল।