কিন্তু শুনে তুমি খুব রেগে যাবে।
তবু তুমি বল। টিকলীর সঙ্গে টোপরের সম্পর্কের কথা জেনেও গোপন করছ কেন? তুমি কি টিকলীর ভালো চাও না?
আগে কথা দাও রাগবে না।
ঠিক আছে রাগব না।
চিঠিটা টিকলীর। রাজশাহী থেকে আমার চিঠির সাথে টোপরকেও দেয়। আমাকে লিখেছে চিঠিটা যেন অবশ্যই তাকে দিই। টোপরের চিঠি তুমি পড়েছিলে?
না। টিকলী তোমাকে কি লিখেছে?
জিনিয়া সব চিঠি সঙ্গে এনেছে। ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে নিজের দুটো বার করে তার হাতে দিয়ে বলল, টিকলী তোমাকে জানাতে নিষেধ করেছিল। তাই সেদিন বলিনি, আজ তুমি বলতে বাধ্য করালে।
আলি চিঠি দুটো পড়ে বুঝতে পারল, মা কেন তাকে নিয়ে রাজশাহী গিয়েছিল। সে ওদের সম্পর্কে একদম রাজি না থাকলেও ছোট বোনের মনে আঘাত লাগবে ভেবে জানা সত্ত্বেও বাধা দেয়নি। তবে এক্ষুণী তারা বিয়ে করতে চেয়েছিল জেনে রেগে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে পারল না।
জিনিয়া তা বুঝতে পেরে ভয়ে ভয়ে বলল, তুমি কিন্তু কথা দিয়েছ, রাগ করবে না।
আলি রাগ সামলে নিয়ে বলল, টিকলী আমার একমাত্র বোন। আমিও যেমন তাকে ভালবাসি, সেও তেমনি আমাকে ভালবাসে। তাই ওদের ব্যাপারটা আমি মেনে নিতে না পারলেও বাধা দিইনি। তা ছাড়া টোপরকে ভালো ছাত্র বলে জানতাম, কিন্তু সে যে পার্টির খারাপ ছেলেদের সঙ্গে এইসব করত, তা জানতাম না। এখন আর বাধা না দিয়ে থাকতে পারছি না। ভাবছি, রাজশাহী গিয়ে তার সবকিছু জানিয়ে ওকে বুঝিয়ে বলে আসব। আর তুমিও চিঠি দিয়ে জানাও, টোপরের সঙ্গে যেন কোন সম্পর্ক না রাখে।
টিকলী যে চিঠিটা টোপরকে দিয়েছিল, সেটা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে বার করার সময় বলল, টিকলী টোপরের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। তাকে আমিও ভালো ছাত্র হিসাবে জানতাম। তারপর চিঠিটা দিয়ে বলল, যে দিন এটা পায়, তার পরের দিন পেপারে টোপরের ঘটনা পড়ে সেই থেকে মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে। এখন আবার তোমার কাছে তার তিন মাসের জেল হয়েছে শুনে আরো বেশী খারাপ লাগছে।
এমন সময় মাকে নাস্তা নিয়ে আসতে দেখে আলি চিঠিটা পকেটে রেখে দিল।
সাজেদা বেগম কিন্তু দেখে ফেলেছেন। ভাবলেন, ওরা হয়তো প্রেমপত্র বিনিময় করছে। মুচকি হেসে নাস্তা খেতে বলে আয়াকে নিয়ে চলে গেলেন।
আলি চিঠি পড়তে গেলে জিনিয়া বাধা দিয়ে বলল, আগে নাস্তা খেয়ে নাও তারপর পড়ো।
আমি নাস্তা খেয়ে বেরিয়েছিলাম, তুমি খাও। আমাকে শুধু চা দাও বলে আলি চিঠি খুলে পড়তে লাগল।
জিনিয়া তাকে চা দিয়ে অল্প নাস্তা খেয়ে চা খেল।
চিঠি পড়তে পড়তে আলি চা খাওয়ার কথা ভুলে গেল। পড়া শেষ করে টোপরের প্রতি বোনের গভীর ভালবাসার কথা জানতে পেরে অনেকক্ষণ চুপ করে রইল।
জিনিয়া বলল, চা খেলে না যে, ঠান্ডা হয়ে গেল তো। তারপর সেই চা ফেলে দিয়ে কেতলী থেকে আর এক কাপ ঢেলে দিল।
আলি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, টিকলীর কপালে দুঃখ আছে। আল্লাহ ওকে তুমি হেফাজত কর। তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, টোপরকে আগে চিনতে পারলে টিকলীকে এতটা এগোতে দিতাম না। কি জানি, আল্লাহ ওর তকদিরে কি লিখেছে।
জিনিয়া ম্লান মুখে বলল, এতদিন টিকলী নিশ্চয় টোপরের কথা জেনেছে। তার মনের অবস্থাটা একবার চিন্তা করে দেখ।
হাঁ সেই চিন্তাই তো করছি। ও জেনে কি করছে কি জানি।
আমার মতে রাজশাহী গিয়ে ওকে শান্তনা দিয়ে আসা তোমার উচিত।
তুমি ঠিক কথা বলেছ। বাবাকে বলা যাবে না, মাকে বলে যাব।
অনেকক্ষণ এসেছি, এবার আসি বলে জিনিয়া দাঁড়িয়ে পড়ল।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আলি বলল, বারটা বাজতে যায়, দুপুরে খেয়ে গেলে হত না?
প্লীজ আজ নয়, বাবা তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছিল। এমনি অনেক দেরি হয়ে গেছে।
তা হলে বল, আমাকে ক্ষমা করেছ। সেদিন তোমাকে ভুল বুঝে অন্যায় করেছি।
জিনিয়া মৃদু হেসে বলল, সেদিনের ব্যাপারে ভুল বোঝাই স্বাভাবিক। তোমার জায়গায় আমি হলেও তাই করতাম। তবে একটা কথা আমাদের মনে রাখা উচিত, যে কোনো সন্দেহজনক ব্যাপার সত্য মিথ্যা যাচাই করা দরকার, তাই না?
আলিও মৃদু হেসে বলল, হ্যাঁ তাই। আর সে জন্যেই অপেক্ষায় ছিলাম। তবে। তোমার সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে অন্যায় করেছি। তাই ক্ষমা চাইছি।
ক্ষমা তুমি আগেই পেয়েছ। এর থেকে বড় কিছু অন্যায় করলেও পাবে। তবে আমার খুব কষ্ট হবে।
কথা দিচ্ছি, আর কখনো তোমাকে কষ্ট দেব না। তবে অজান্তে যদি দিয়ে ফেলি, তা হলে তুমিও কথা দাও, কষ্ট না পেয়ে আমার ভুল ভাঙ্গিয়ে দেবে।
দিলাম, এবার আসি হলে?
মায়ের সঙ্গে দেখা করবে না?
তোমার মতো উনিও খেয়ে যেতে বলবেন। তাই আমার হয়ে তুমি মায়ের কাছে। ক্ষমা চেয়ে নিও।
ঠিক আছে, চলো তোমাকে গাড়িতে তুলে দিই।
.
প্রায় পনের দিন অপেক্ষা করেও জিনিয়ার কোন চিঠি না পেয়ে টিকলী ঢাকা এল। একদিন মা-বাবার অগোচরে টোপরের সঙ্গে দেখা করতে গেল। টোপর তার সঙ্গেও দেখা করল না। টিকলী কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে জিনিয়াদের বাসায় গেল।
সালাম ও কুশল বিনিময় করে জিনিয়া বলল, টোপর ভাইয়ের কথা তুই পেপারে জেনেছিস ভেবে চিঠি দিইনি। শুনেছি, থানা তার বাবার কাছে এক লক্ষ টাকা চেয়েছিল। কারো বাবা যে এত কৃপণ হয় তা জানতাম না। টিকলী চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল, এখন আমি কি করব বলতে পারিস? ওর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, করেনি।