টোপর বিরক্ত কণ্ঠে বলল, আমরা ওদের দলে নই। আমাদের ব্যাপারটা তো তোকে বলেছি।
ওদের দলে এতদিন ছিলি না তো কি হয়েছে? এখন হয়ে যা।
তা সম্ভব নয় সাগর।
তা হলে আর কি করবি, টিকলীর ডাক্তারী পাশ করা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আর তুই যদি চাস, তা হলে আমরা, মানে বন্ধু বান্ধবরা রাজশাহী গিয়ে তোদের বিয়ের ব্যবস্থা করে আসতে পারি।
ভেবে দেখি, তারপর তোকে জানাব।
তাই ভেবেই জানাস। এখন শোন, পরশু আমরা ভার্সিটিতে হরতাল ডেকেছি। ভিসির বাসাও ঘেরাও করা হবে। মিছিল মিটিং হবে। তুইও থাকবি। তারপর একটা পিস্তল এনে তার হাতে দিয়ে বলল, এটা রাখ, কাজে লাগতে পারে।
টোপর আতঙ্কিত স্বরে বলল, না না, এটা লাগবে না।
আরে রাখতো, কখন কি হয় বলা যায়। তারপর জোর করে প্যান্টের পকেটে দিয়ে বলল, তুই একদম কাপুরুষ।
সাগরের কথা শুনে টোপরের রক্ত গরম হয়ে গেল। বলল, দেখ কাপুরুষ বলবি।
কাপুরুষ নয় তো কি? তা না হলে প্রেমিকার কথা শুনে ফিরে আসতিস না। এখন দেখছি তোদের ব্যাপারটা আমাকেই মেটাতে হবে।
এমন সময় একটা কাজের মেয়ে চা-নাস্তা দিয়ে গেল। সাগর বলল, এখন ওসব কথা বাদ দিয়ে নাস্তা খেয়ে নিই আয়, আমাকে একটু বেরোতে হবে।
হরতালের দিন সাগরের পার্টির ছেলেরা ক্যাম্পাস ঘিরে রেখেছিল। বিপক্ষ পার্টির ছেলেরা হরতাল করতে দেবে না বলে শ্লোগান দিতে দিতে ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করলে দুদলে যুদ্ধ বেধে গেল। বোমা ও গোলাগুলির শব্দের ভার্সিটি কেঁপে উঠল। পুলিশরা আগের থেকে পাহারায় ছিল। তারা প্রথমে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করল। শেষে রাঠি চার্জ শুরু করল। ছাত্ররা অনেকে আহত হয়ে ধরা পড়ল। পুলিশরাও অনেকে আহত হল। অনেক ছাত্র পালাতে পারলেও টোপর পারল না। কারণ সে আহত হয়ে পড়েছিল। পুলিশ তাকে এ্যারেস্ট করে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে গেল। সার্চ করে তার কাছে পিস্তল পেয়ে হাজতে পাঠিয়ে দিল।
সাগর তাকে ছাড়াবার জন্যে অনেক চেষ্টা করল। কাহহার সাহেবও অনেক চেষ্টা; করলেন। কিন্তু কোনো কাজ হল না।
অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে টোপরের তিন মাসের জেল হল।
শাফিয়া বেগম জানতে পেরে স্বামীর উপর খুব রেগে গেলেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, লোক কৃপণ হয় শুনেছি, তাই বলে টাকা খরচের ভয়ে নিজের ছেলেকে থানা থেকে ছাড়াবার ব্যবস্তা করবে না, একথা কখনো শুনিনি।
শাফিয়া বেগমের অনুমান ঠিক, থানা কাহ্হার সাহেবের কাছে এক লাখ টাকা চেয়েছিল। কাহ্হার সাহেব রাজি হননি। তাই স্ত্রীর কথায় কিছু না বলে চুপ করে। রইলেন।
জেলে টোপরের সঙ্গে আসলাম নামে একটা ছেলের পরিচয় হল। সে বড় লোকের শিক্ষিত ছেলে। চাকরী না পেয়ে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে মিশে খুন, ছিনতাই ও রাহাজানী করে বেড়াত। কিছুদিন আগে ধরা পড়ে জেলে এসেছে। সে হিরোইনের নেশা করে। জেলের মধ্যেও গার্ডদের একজনকে হাত করে প্রতিদিন নেশা করে। আগে সন্ত্রাসী করে বেড়ালেও হিরোইনের নেশা ছিল না। একটা মেয়ে কয়েক বছর তার সঙ্গে প্রেম করে অন্য ছেলেকে বিয়ে করে। তাকে ভুলে থাকার জন্য হিরোইন নেশা শুরু করে।
টোপর একদিন তাকে নেশা করতে দেখে ফেলে। সে কথা জানিয়ে আসলামকে নিষেধ করল।
আসলাম তাকে তার সব কথা বলল। তারপর টোপরের সবকিছু জানতে চাইল।
টোপরও অকপটে সব কিছু বলল।
আসলাম বলল, আপনার সঙ্গে আমার অনেক মিল। আপনার বাবার মত আমার বাবাও কৃপণ। আপনিও প্রেমে ছ্যাক খেয়েছেন, আমিও খেয়েছি। সব কিছু ভুলে থাকার জন্যে আমি হিরোইনের নেশা করি। আপনি একদিন একটু করে দেখুন, কিভাবে সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয়।
টোপরের তখন টিকলীর কথা মনে পড়ল। সে কি সত্যি সত্যি আমাকে ছ্যাক দিবে। তার মন বলে উঠল, না না তা দিতে পারে না। টিকলী সেরকম মেয়েই নয়। আবার ভাবল, ডাক্তারী পাশ করতে পাঁচ-ছ-বছর সময় লাগবে। এতদিন তার অপেক্ষায় থাকব কি করে?
তাকে চুপ করে থাকতে দেখে আসলাম বলল, কি এত ভাবছেন? হিরোইনের নেশা করলে সব রকমের চিন্তা ভাবনা হারিয়ে যাবে। মনে অনাবিল শান্তি পাবেন।
টোপর কোন কথা না বলে তার কাছ থেকে চলে গেল। কয়েকদিন ধরে টোপর চিন্তা করল, বাবা ইচ্ছা করলে থানায় টাকা দিয়ে তাকে ছাড়াতে পারত; কিন্তু অনেক টাকা দিতে হবে ভেবে ছাড়ায়নি। আর সৎ মা না হয়ে যদি নিজের মা হত, তা হলে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে হলেও ছাড়াবার ব্যবস্থা করত। সে জন্যে মা বাবার ওপর প্রচণ্ড অভিমান হল। টিকলীও তার সঙ্গে বেইমানী করল। প্রাণের বন্ধু হয়েও সাগর তাকে ছাড়াল না। দিনের পর দিন এইসব চিন্তায় তার মনে ক্ষত বিক্ষত হয়ে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগল। সেই জ্বল সহ্য করতে না পেরে একদিন আসলামকে বলল, আমি হিরোইনের নেশা করব।
আসলাম মৃদু হেসে তার পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল, আমাদের গ্রাম দেশে একটা কথা প্রচলন আছে, পেঁকি যতই মাথা চালাক, গড়ে তাকে পড়তেই হবে। আমি জানতাম, আপনি হিরোইনের নেশা করতে বাধ্য হবেন।
সেদিন থেকে টোপর হিরোইনের নেশা শুরু করলো। সেই সাথে আসলামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠল। মা-বাবা দেখা করতে এলেও দেখা করল না।
টোপর রাগ করে চলে যাওয়ার পর টিকলীর মন খুব খারাপ হয়ে গেল। কয়েক দিন গোপনে কান্নাকাটি করল। তারপর সব কিছু জানিয়ে জিনিয়াকে চিঠি লিখল। সেই সাথে টোপরকে লিখল