আরে তুই নপুংসক না কি? মেয়েরা এ ব্যাপারে অগ্রভূমিকা নেয় না। পুরুষদের নিতে হয়। টিকলীকে তুই কখনো জড়িয়ে ধরে চুমোও খাসনি?
না।
কেন, খেতে ইচ্ছা করে না?
করে, তবে টিকলী আমাকে খারাপ ভাবতে পারে মনে করে সংযত থাকি।
আরে বোকা, সে তোকে খারাপ ভাববে কেন? বরং খুশিই হবে। তুই কি জানিস, একটা যুবক তার প্রেমিকার কাছে যা চায়, একজন যুবতীও তার প্রেমিকের কাছে তাই চায়? আমার কথা সত্য না মিথ্যা যাচাই করে দেখ। একদিন তাকে জড়িয়ে ধরে চুমো খা, দেখবি সেও প্রতিদানে মেতে উঠবে।
টিকলী খুব ধার্মীক, হিতে বিপরীত হতে পারে।
আরে রাখ তোর ধার্মীক। এই বয়সে কে কতটা ধার্মীক তা আমার জানা আছে। যা বললাম, তা যদি করতে পারিস, তা হলে দেখবি অল্পদিনের মধ্যে তোদের দৈহিক সম্পর্কও গড়ে উঠবে। আর তা যদি না পারিস, তা হলে বুঝবো সত্যি সত্যি নপুংসক।
টোপর উঠতি বয়সের যুবক। তার উপর ধর্মের জ্ঞান নেই। সিনেমা ও ভি.সি.আর দেখে নায়ক নায়িকাদের মতো তারও টিকলীকে জড়িয়ে ধরে চুমো খেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু সাহসে কুলায় না। আজ সাগরের মুখে নাপুসংক কথাটা শুনে পৌরুষে আঘাত লাগল, নিজেকে অপমানিত বোধ করল। ভাবল, কাল ওকে কোনো পার্কে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে চুমো খাবে।
তাকে চুপ করে থাকতে দেখে সাগর বলল, কিরে, কিছু বলছিস না কেন? তা হলে সত্যিই কি তুই নপুংসক।
টোপর রেগে উঠে বলল, দেখ, বারবার নপুংসক বলবি না।
সাগর হেসে উঠে বলল, তা যদি না হস, তা হলে কাজ করে দেখা।
নিশ্চয় দেখাব, বলে টোপর রাগে ফুলতে ফুলতে সেখান থেকে চলে যেতে লাগল।
সাগর হাসতে হাসতেই বলল, এই টোপর দাঁড়া যাসনি, আরো কথা আছে।
টোপর কিন্তু দাঁড়াল না।
যেখানে প্রতিদিন টিকলীর সঙ্গে দেখা করে, কলেজ ছুটির পরে টোপর আজ সেখানে যাচ্ছিল। পথে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছিস কেন?
টিকলী বলল, আজ মা কলেজে আসতে নিষেধ করেছিল। রাজশাহী থেকে খালা, খালু ও খালাত ভাই কাল এসেছেন। খালাত ভাই আমেরিকায় থাকেন। আজ চলে যাবেন। তাকে সি-অফ করতে এয়ারপোর্টে যেতে বলেছিল। আজ আমাদের কলেজে বিজ্ঞানের উপর সেমিনার ছিল। সে কথা জানিয়ে বললাম, আমাকে কলেজে যেতেই হবে। মা বলল, তা হলে তাড়াতাড়ি ফিরিস। তাই তোকে কথাটা জানাব বলে এখানে অপেক্ষা করছিলাম।
তুই এখন বাসায় গিয়ে এয়ারপোর্টে যাবি?
এগারটায় প্লেন ফ্লাই করার কথা, এতক্ষণে সবাই বাসায় চলে এসেছে।
তা হলে এখন বাসায় গিয়ে কাজ নেই, চল আজ কোনো পার্কে বেড়াতে যাই।
আমি যে মাকে কথা দিয়ে এসেছি তাড়াতাড়ি ফিরব।
তাতে কি হয়েছে, বলবি সেমিনার শেষ হতে দেরি হয়েছে।
আমি কখনো মিথ্যা বলি না।
আজ আমার জন্য না হয় বলবি।
টিকলী জানে টোপরের কথা না রাখলে রেগে গিয়ে পনের দিক দেখা করবে না। এরকম ছোট বেলা থেকে অনেক বার ঘটেছে। একটু চিন্তা করে বলল, ঠিক আছে চল।
টোপর বলল, খিদে পেয়েছে, আগে কোনো হোটেলে খেয়ে তারপর পার্কে যাব।
হোটেলে খেয়ে ওরা রমনা পার্কে এসে ঝোঁপের আড়ালে একটা পাকা বেঞ্চে বসল।
বসার পর টোপর অনেক্ষণ টিকলীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
টিকলী বোরখা ব্যবহার করে। রাস্তায় চলা ফেরা করার সময় চোখ দুটো ছাড়া নেকাব দিয়ে মুখ পেঁচিয়ে ঢেকে রাখে। তবে টোপরের সঙ্গে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ সম্পূর্ণ মুখ খোলা রাখে। তাকে অনেকক্ষণ মুখের দিকে চেয়ে থাকতে দেখে বলল, চুপচাপ কি দেখছিস?
তোকে।
এত দেখছিস তবু সাধ মেটেনি?
না, তোকে যত দেখি তত দেখতে ইচ্ছা করে।
টিকলী লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে বলল, আমারও।
তা হলে বোঝা যাচ্ছে আমরা দুজন দুজনকে ভীষণ ভালবাসি, তাই না?
শুধু ভালবাসি বললে ভুল হবে, আমরা দুজন দুজনের জন্য উৎসর্গকৃত।
তুই ঠিক কথা বলেছিস। সেই ভালবাসার দাবিতে আজ তোর কাছে কিছু চাইব, দিবি তো?
অফকোর্স। তোকে অদেয় আমার কিছু নেই। তবে এমন কিছু চাইবি না, যা ইসলামের পরিপন্থি।
ইসলামের পরিপন্থি হবে কিনা জানি না, তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে কোনো লোকজন নেই দেখে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমো খেতে গেল।
টিকলী কল্পনাও করেনি, টোপর এই কাজ করবে। তাড়াতাড়ি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বেশ রাগের সঙ্গে বলল, এ-তুই কি করলি? এত বড় গোনাহর কাজ করতে পারলি! পবিত্র ভালবাসার মধ্যে পাপ ঢুকিয়ে দিলি। তুই জানিস না, বিয়ের আগে এসব করা জঘন্যতর অন্যায়? তারপর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
তার কান্না দেখে ও কথা শুনে টোপর খুব অবাক হয়ে বলল, এটা আর এমন কি অন্যায়, আমি বুঝতে পারছি না। এত কাঁদছিস বা কেন? বিয়ে না হলেও তুই তো এক্ষুণী বললি, আমরা দুজন দুজনের জন্য উৎসর্গকৃত।
টিকলী কান্না থামিয়ে চোখ মুখ মুছতে মুছতে বলল, তুই তো ধর্মীয় বই পুস্তক একদম পড়িসনি, পড়লে জানতে পারতিস, এটা কত বড় অন্যায়।
টোপর বলল, আমার বন্ধু সাগর তার গার্লফ্রেন্ডদেরকে এভাবে কত আদর করে। কই তারা তো তোর মতো কান্নাকাটি করে না। বরং তারাও সাগরকে আদরের প্রতিদান দেয়।
টিকলী বুঝতে পারল, বন্ধুর পাল্লায় পড়ে টোপর আজ এই রকম করেছে। বলল, তোর বন্ধু ও তার গার্লফ্রেন্ডরা ধর্মের কিছু যেমন জানে না, তেমনি মানে না। তারা যে সমাজের, সে সমাজে ধর্ম নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। প্রথম বার বলে মাফ করে দিলাম। ভবিষ্যতে বিয়ের আগে এরকম আর কখনো করবি না। আর শোন, ঐ বন্ধুর সঙ্গে একদম মেলামেশা করবি না। কথা দে, যা যা বললাম, করবি?