তাই যদি হয়, তবে আজই বাবাকে বলে টিকলীর সঙ্গে আমার বিয়ের ব্যবস্থা কর।
তা না হয় করলাম, কিন্তু তুই তো জানিস ওদের সঙ্গে আমাদের অনেক দিন থেকে মনোমালিন্য। ওরা কি রাজি হবে? তা ছাড়া টিকলী ডাক্তারী পড়ার জন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে।
বিয়ের পরও টিকলী পড়বে। তোমরা ওর মা বাবার কাছে প্রস্তাব দাও। রাজি না হলে অন্য ব্যবস্থা করা যাবে।
ঠিক আছে, তোর বাবা ফিরে এলে বলব, এখন যা জামা কাপড় পাল্টে হাত মুখ ধুয়ে আয়, আমি নাস্তা রেডি করছি।
কাহহার সাহেব অফিস থেকে বিকেলে ফিরলেন।
শাফিয়া বেগম চা-নাস্তা দিয়ে বললেন, টোপর ফিরেছে।
কাহহার সাহেব বললেন, তাড়াতাড়ি ফিরল যে?
ও বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে যায় নি।
কোথায় গিয়েছিল তা হলে?
রাজশাহী।
রাজশাহী?
হ্যাঁ আমাদের কাছে মিথ্যে করে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে হালিম সাহেবের মেয়ে টিকলীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। তার কাছে চিঠির কথা জেনে এসে আমাদেরকে দোষি করে যা-তা বলল। আরো বলল, আমরা যেন হালিম সাহেবের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিই।
কাহহার সাহেব রেগে উঠে চিৎকার করে বললেন, ওর এত বড় সাহস? দুষমনের মেয়েকে বিয়ে করতে চায়? নিজেকে কি মনে করে? কোথায় মন দিয়ে লেখাপড়া করবে, তা না করে বিয়ে করতে চায়। আমি ওর বিয়ে করা বের করছি, ওকি এখন। বাসায় আছে?
তুমি অত চেঁচাচ্ছ কেন? যা বলার আস্তে বল।
কি বললে, আমি চেঁচাচ্ছি। তুমি, হ্যাঁ তুমিই তো ওর মাথা খেয়েছ। তোমার, আস্কারাতেই ওর এত সাহস। তারপর হন হন করে টোপরের রুমে গিয়ে তাকে শুয়ে থাকতে দেখে বললেন, তুই নাকি হালিম সাহেবের মেয়েকে বিয়ে করতে চাস?
টোপর উঠে বসে মাথা নিচু করে রইল।
চুপ করে আছিস কেন উত্তর দে।
টোপর ভয় পেলেও সামলে নিয়ে বলল, মাকে তো সে কথা বলেছি।
ওদের সঙ্গে আমাদের অনেক দিনের মনোমালিন্য। সে জন্য যখন তুই তার মেয়ের সঙ্গে মেলামেশা করতিস তখন নিষেধ করেছি। তবু ঐ মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছিস?
প্রতিবেশির সঙ্গে মনোমালিন্য কি চিরকাল রাখতে হবে?
খুব তো উপদেশ দিচ্ছিস, এখন বিয়ে করলে বৌকে পালবি কি করে? মনে করেছিস, বাবার টাকা আছে চিন্তা কি? শোন, এখন বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে মাষ্টার্স শেষ কর। তারপর তোকে যে ফরেনে পাঠাব, সে কথা তো বলেছি। ফরেন থেকে ফিরে এসে উপার্জন করতে শেখ। তারপর বিয়ের ব্যাপারে চিন্তা করবি।
শোন বাবা, আমি কয়েক দিনের মধ্যে হালিম সাহেবের মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। বিয়ের পর সে যেমন পড়ছে পড়বে। আর আমার ব্যাপারে তুমি যা বললে তাই হবে। ফরেন থেকে এসে উপার্জন করতে শিখে ওকে ঘরে তুলব।
কাহহার সাহেব আরো বেশি রেগে গিয়ে বললেন, খুব সেয়ানা হয়ে গেছিস তাই? নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করেছিস। আরে মুখে বলা আর কাজে পরিণত করা যে। কত দুঃসাধ্য, তাতো জানিস না।
আমি দুঃসাধ্যকে সাধন করে দেখাব।
খুব বড় বড় কথা বলতে শিখেছিস দেখছি। তুই আমার কথা শুনবি, না আমি তোর কথা শুনব? লেখাপড়া করে বাবার সঙ্গে তর্ক করতে তোর লজ্জা করছে না? আমার শেষ কথা, এখন বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে লেখাপড়া কর। আর যদি নিজে কিছু কর, তা হলে এ বাড়িতে তোমার জায়গা হবে না। তারপর তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন।
শাফিয়া বেগম এতক্ষণ দরজার আড়ালে ছিলেন। এবার ভিতরে এসে বললেন, তুই পাগলামী করিসনি বাবা। তোর বাবাকে তো চিনিস, যা এক রোখা মানুষ, রাগের মাথায় কি করতে না কি করে বসে।
টোপর বলল, তুমি এখন যাও, তোমরা কেউ আমাকে বোঝার চেষ্টা করনি। আমিও বলে রাখছি, ঐ মেয়েকেই আমি এ বাড়ির বৌ করে নিয়ে আনবই।
তিন চার দিন টোপর বাসা থেকে বের হল না। শুয়ে বসে কি করবে না করবে ভেবে কাটাল। ভেবেছিল, বিয়ে করে টিকলীকে নিয়ে এক সপ্তাহ হোটেলে আনন্দ ফুর্তি করবে। তার বদলে, টিকলী তাকে ফিরিয়ে দিল?
শাফিয়া বেগম বার বার কি হয়েছে জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর না পেয়ে স্বামীকে কথাটা জানাল।
কাহহার সাহেব ছেলের রুমে এসে বললেন, তোর কি হয়েছে? অসুখ বিসুখ হলে ডাক্তার দেখা। চুপচাপ বাসায় বসে শুয়ে থাকলে অসুখ সারবে।
টোপর মিথ্যে করে বলল, তেমন কিছু হয়নি, ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ এনে খাচ্ছি।
ওষুধে কাজ না হলে ডাক্তারকে রিপোর্ট দে।
ঠিক আছে যাব।
যাব বলছিস কেন? এক্ষুণী যা, তারপর তিনি চলে গেলেন।
বাবা চলে যাওয়ার পর টোপর ড্রেস চেঞ্জ করে সাগরের বাসায় গেল।
সাগর বাসায় ছিল। তাকে দেখে বলল, কি ব্যাপার, কদিন পাত্তা নেই যে? মনে হচ্ছে অসুখ-বিসুখ করেছিল।
টোপর বলল, না ওসব কিছু হয়নি। তোকে একদিন বলেছিলাম না, খুব শিঘ্রী আমি টিকলীকে গোপনে কাজি অফিসে বিয়ে করব।
হ্যাঁ, বলেছিলি তা হল না বুঝি?
হয়নি। টিকলী রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পড়ছে। সেখানে যাওয়ার আগে এখানে করতে চাইলে বলেছিল, রাজশাহীতে করবে। তোকে সারপ্রাইজ দেব বলে এক সপ্তাহ আগে গিয়েছিলাম। তারপর যা কিছু ঘটেছে সব বলল।
সাগর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তুই বড় বদরাগী। আরে বাবা, প্রেমের ব্যাপারে বদরাগী হলে সাকসেসফুল হওয়া যায় না। মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হয়। টিকলীর কথা শোনার পর তার কথায় রাজি হয়ে জড়িয়ে ধরে খুব আদর করা তোর উচিত ছিল। যদি করতিস, তা হলে বিয়েতে সে নিজেই রাজি হয়ে যেত। তোকে একটা কথা বলি শোন, আজকাল প্রায় সব ছেলেরই একাধিক প্রেমিকা থাকে। আরে এক টিকলীকে নিয়ে অত দুর্ভাবনা করছিস কেন? আরো কতো টিকলী রয়েছে। তাদের দিকে মন দে। দেখবি তখন আর আগের টিকলীর কথা মনে পড়ছে না। আর মেয়েরাও এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই। তাদেরও একাধিক প্রেমিক আছে। অবশ্য মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে চালাক। কয়েকজনের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে যার বাবার আর্থিক অবস্থা সব থেকে ভালো, তাকে বিয়ে করে।