আলী বলল, হাতটা ছাড়।
না, ছাড়লেই মারবে।
আলী মৃদু হেসে বলল, নারে মারব না। তোর সঙ্গে আমি একমত। এবার ছেড়ে দে, এক হাতে গাড়ি চালাতে অসুবিধা হচ্ছে, এ্যাকসিডেন্ট করে ফেলব।
টিকলী হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল, ও তোমাকে স্কুল লাইফ থেকে ভালবাসে।
আলী কিছু বলল না, শুধু মৃদু হেসে গাড়ি চালাতে লাগল। তখন তার মন অজানা এক আনন্দে ভেসে বেড়াচ্ছে।
কিছু বললে না যে?
কি বলব?
জিনিয়া তোমাকে স্কুল লাইফ থেকে ভালবাসে শুনে কিছু একটা তো বলবে।
আমি তো তা জানতাম না; কি বলব?
এখন তো জানলে।
আগে অনেকবার দেখলেও আজ দেখে সত্যিই আমি খুব মুগ্ধ হয়েছি।
শুধু মুগ্ধ হলে? ভালবাসতে ইচ্ছা করছে না?
তুই টোপরকে ভালবেসে খুব পেকে গেছিস। এবার চুপ কর নচেৎ আবার চাটি খাবি।
বাসায় ফিরে আলী কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারল না। জিনিয়া স্কুল লাইফ থেকে তাকে ভালবাসে শোনার পর থেকে কেবলই তার অনিন্দ্য সুন্দর মুখের ছবি মনে পড়তে লাগল। হঠাৎ কবিতা লেখার প্রেরণা পেল। যদিও জীবনে কোনো দিন কবিতা লেখেনি। মনের আবেগ চেপে রাখতে না পেরে খাতা কলম নিয়ে লিখতে শুরু করল।
তুমি চতুর্দশীর চাঁদ
অথবা সূর্য,
যা কিছু হওনা কেন
তোমার তুলনা শুধু তুমি।
তুমি শুকতারা
অথবা সন্ধ্যা তারা,
যা কিছু হওনা কেন।
তোমার তুলনা শুধু তুমি।
তুমি উষা লগ্নে পূব আকাশের রক্তিম আভা
অথবা পশ্চিম আকাশের সূর্যাস্তের গোধুলী লগ্ন,
যা কিছু হওনা কেন
তোমার তুলনা শুধু তুমি।
তুমি বিশ্বের শেষ্ঠা সুন্দরী।
অথবা বেহেস্তের হুর,
যা কিছু হওনা কেন।
তোমার তুলনা শুধু তুমি।
তুমি অতি মূল্যবান কোহীনুর হীরক খন্ড
যা শোভিত হয়েছিল শাজাহানের ময়ূর সিংহাসনে,
যা কিছু হওনা কেন।
তোমার তুলনা শুধু তুমি।
কবিতাটা লিখে বারবার পড়ে ও আলীর বিশ্বাস হচ্ছে না, এটা তার নিজের লেখা। ভাবল, মানুষ প্রেমে পড়লে বোধ হয়, অসাধ্য সাধনও করতে পারে। আরো কয়েকবার। পড়ে নিচে নিজের নাম ও তারিখ লিখল। তারপর কাগজটা খাতা থেকে কেটে ভাঁজ করে রেখে দিয়ে ভাবল, সময় সুযোগ মতো জিনিয়াকে দেবে।
পরেদিন কলেজে অফ পিরিয়ডে গল্প করতে করতে এক সময় টিকলী জিনিয়াকে। বলল, তোকে একটা সুখবর দেব, কি প্রেজেন্ট করবি বল।
জিনিয়া বলল, সেটা নির্ভর করছে সুখবরটার গুরুত্বের উপর।
এর থেকে গুরুত্ব তোর জীবনে আর কিছু নেই।
তা হলে মূল্যবান কিছু একটা দেব। এবার সুখবরটা বল।
ভাইয়া এতদিন তোকে দেখলেও কাল দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছে।
সত্যি বলছিস?
হারে সত্যি। মিথ্যে করেই বা বলব কেন? আমিও তো তোকে ভাবি করতে চাই।
যাহ্ গুল মারছিস।
আমার কথা বিশ্বাস না হলে আজই আমাদের বাসায় গিয়ে ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করলেই সত্যি মিথ্যা প্রমাণ পেয়ে যাবি।
ঠিক আছে তাই যাব; তবে আজ নয়, কয়েক দিন পরে। এবার চল ক্লাসে যাই। সময় হয়ে গেছে।
টিকলীর কাছে কথাটা শোনার পর থেকে জিনিয়া আলীর সঙ্গে দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে উঠল। কয়েকদিনের কথা বললেও দুদিন পর টিকলী যখন বলল, চল না আজ আমাদের বাসায়, তখন প্রতিবাদ না করে তার সঙ্গে এল।
জিনিয়া প্রায় আসে টিকলীর সঙ্গে কলেজ থেকে। এলে খাওয়া দাওয়াও করে। সাজেদা বেগম তাকে মেয়ের মতই দেখেন। জিনিয়াকে তার খুব পছন্দ। তাই একদিন স্বামীকে সে কথা বলে বৌ করার কথা বলেছিলেন। হালিম সাহেব বলেছিলেন, মেয়েটাকে আমারও পছন্দ। তবে আলী এখন পড়াশোনা করছে। তাছাড়া এখনো ওদের বিয়ের বয়স হয়নি। এখন ওসব চিন্তা মাথায় এনো না। আল্লাহ ওদেরকে জোড়া করে থাকলে, আলীর পড়াশোনা শেষ করার পরও হবে।
আজ এসে প্রতিবারের মতো জিনিয়া সাজেদা বেগমকে সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছেন খালাআম্মা?
সাজেদা বেগম সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছ? তোমার মা বাবা ভালো আছেন?
জিনিয়া বলল, আমরা সবাই ভালো আছি।
সাজেদা বেগম বললেন, যাও মা তোমরা মুখ হাত ধুয়ে এস, খেতে দেব।
খেতে বসে টিকলী মাকে জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া ফিরেছে?
হা ফিরেছে। এই তো কিছুক্ষণ আগে খেয়ে গেল।
খাওয়ার পর রুমে এসে টিকলী জিনিয়াকে বলল, আমার কথাটা সত্য মিথ্যা যাচাই করতে চাইলে ভাইয়ার রুমে যা।
জিনিয়া তাই চাচ্ছিল। তবু লজ্জা পেয়ে বলল, তোর ভাইয়া যদি কিছু মনে করে?
তা করতে পারে, তবে খারাপ কিছু করবে না, বরং ভালো কিছু করবে।
যদি খারাপ কিছু ভাবেন?
যদির কথা ভেবে প্রেমের পথে এগোন যায় না, তুই যা তো। তারপর তার একটা হাত ধরে ভাইয়ার রুমের দরজার কাছে এসে ফিস ফিস করে বলল, তেমন খারাপ কিছু হলে, আমি সামলাব। কথা শেষ করে টিকলী ফিরে এল।
জিনিয়া দুরু দুরু বুকে পর্দা ফাঁক করে বলল, আসতে পারি।
আলী খেয়ে এসে খাটে শুয়ে জিনিয়াকে কিভাবে কবিতাটা দিবে চিন্তা করতে করতে তার তন্দ্রামত এসেছিল। হঠাৎ মেয়েলি কণ্ঠে আসতে পারি শুনে তন্দ্রা ছুটে গেল। চোখ খুলে দরজায় জিনিয়াকে দেখে চমকে উঠল। তাড়াতাড়ি উঠে বসে বলল, আপনি?
জিনিয়া সালাম দিয়ে কয়েক সেকেন্ড তার চোখের দিকে তাকিয়ে রাগের বদলে। অনুরাগ দেখে ভিতরে ঢুকে বলল, কেন আসতে নেই বুঝি?
আলী সালামের উত্তর দিয়ে বলল, না, মানে আপনি কখনো আমার রুমে আসেন নি তো, তাই আর কি? তারপর একটা চেয়ারের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, বসুন।