জ্বী উনিই আমার বাবা।
তাই নাকি? জান বাবা, আমি স্কলারসিপ নিয়ে ডাক্তারী পাশ করার পর ফরেনে উচ্চ ডিগ্রী নিতে যাওয়ার ব্যাপারে উনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। একদিন যাব তোমার বাবার সঙ্গে দেখা করতে। আলী বলল, বেশ তো যাবেন।
এমন সময় জিনিয়া টিকলীকে নিয়ে ফিরে এসে বলল, তোমাদের আলাপ শেষ হয়েছে?
মোয়াজ্জাম সাহেব কিছু বলার আগে আলী দাঁড়িয়ে উঠে বলল, এবার আসি।
মোয়াজ্জাম সাহেব বললেন, আবার এস।
জ্বী আসব বলে আলী সালাম বিনিময় করে টিকলীকে বলল, চলরে অনেক দেরী হয়ে গেল।
জিনিয়া ওদেরকে গাড়িতে তুলে দিতে গেল।
মোয়াজ্জাম সাহেব স্ত্রীকে বললেন, দুতিন দিন আগে জিনিয়া আমাকে বলেছিল, বার্থডে পার্টিতে একটা ছেলেকে আসতে বলেছি, এলে তার ইন্টারভিউ নিও। ছেলেটা যে টিকলীর ভাই সে কথা বলেনি। আমার মনে হচ্ছে, ছেলেটাকে জিনিয়া পছন্দ করে।
মুকাররামা বেগম বললেন, ছেলেটাকে তো বেশ সুন্দর বলে মনে হল। জিনিয়ার সঙ্গে মানাবে ভাল। তোমার কি মনে হয়?
আমার ও খুব পছন্দ। কিন্তু——?
এমন সময় জিনিয়াকে ফিরে আসতে দেখে মোয়াজ্জাম সাহেব থেমে গেলেন।
বাবার পাশে বসে জিনিয়া জিজ্ঞেস করল, ইন্টারভিউ নিয়েছ?
মোয়াজ্জাম সাহেব মেকী রাগ দেখিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, হ্যাঁ।
রেজাল্ট বল।
ফুল মার্ক পেয়ে ফেল।
জিনিয়া বুঝতে পারল বাবা জোক করছে। হেসে উঠে বলল, ফুল মার্ক পেয়ে কেউ ফেল করে বুঝি?
করে করে, আর কেউ না করলেও এই ছেলেটা করেছে।
কোন ডিভিশানে?
ফেলের আবার ডিভিশান আছে নাকি?
ফুল মার্ক পেয়ে যদি কেউ ফেল করে, তা হলে সেই ফেলের ডিভিশানও আছে। এবার সত্যি করে রেজাল্টের খবরটা বলত?
ফুল মার্ক যখন পেয়েছে তখন রেজাল্ট ভালো। ওর বাবাকে চিনি। তোকে তো একদিন আমার বাবার দুরাবস্থার কথা বলেছিলাম। আমি যে কত কষ্ট করে ডাক্তারী পাশ করেছি, তাও বলেছি। স্কলারশীপ পেয়ে ফরেনে পড়তে যাওয়ার জন্য অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। ওর বাবা সে সময় সাহায্য না করলে আমার যাওয়াই হত না। ঘটনাটা বলছি শোন, আমাদের সঙ্গে এক মন্ত্রীর মেয়ে পাশ করেছিল। সেই মন্ত্রী নিজের মেয়েকে পাঠাবার জন্য মিস্ত্রিী অব হেলথে ফোন করে আমার যাওয়া ক্যান্সেল করে দিয়েছিলেন। হালিম সাহেব, মানে ঐ ছেলেটার বাবা হেলথ মিনিষ্ট্রারের সঙ্গে এক রকম যুদ্ধ করে আমাকে পাঠাবার ব্যবস্থা করে দেন। আমি ওর ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারব না। আজ আমি যে এত বড় হয়েছি তা ওরই দয়াতে।
জিনিয়া খুব আনন্দিত হল। বলল, ফরেন থেকে এসে ওঁর সঙ্গে দেখা করনি?
তা আবার করিনি। তবে কাজের ব্যস্ততায় পরে আর অনেক বছর হল দেখা করতে পারিনি। আমি তো বাসা চিনি না। একদিন তোর সাথে যাব। এবার বল ছেলেটা তোকে পছন্দ করে কিনা?
তা কি করে বলব? টিকলীর সঙ্গে ওদের বাসায় অনেক বার গেলেও ওর সঙ্গে তেমন একটা আলাপ হয়নি বললেই চলে।
তুই ওদের বাসায় অনেকবার গেছিস বললি, ওরা যে খুব ধার্মীক তা নিশ্চয় জেনেছিস।
হ্যাঁ জেনেছি।
ধার্মীকরা কিন্তু মেয়েদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার উপর খুব কড়াকড়ি করে থাকে। মেয়েরা নিজের ইচ্ছায় কোথাও যেতে পারে না। তুই স্বাধীন ভাবে মানুষ হচ্ছিস। ওদের ফ্যামিলীতে গিয়ে কি এ্যাডজাষ্ট করতে পারবি? ঐ ধরনের লোকেরা গোড়া প্রকৃতির।
তোমার অনুমানটা ভুল। ধর্ম মানুষকে সঠিক পথে চলার নির্দেশ দেয়। মানুষ ধর্ম থেকে দূরে সরে গেছে বলেই না, আজকাল মানুষ যত রকমের অসৎকাজ লিপ্ত হয়ে পড়েছে। সারা পৃথিবীর সমাজে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। সমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচাতে হলে কড়াকড়ি কিছু নিয়ম-কানুন তো থাকবেই। তবে গোঁড়ামির স্থান যে ইসলামে নেই, তা জানি। আর সুবিধাবাদিরা স্বার্থের কারণে ঐ কড়াকড়ি নিয়ম কানুনকেই গোঁড়ামী বলে থাকে। এটা তাদের একটা অহমিকা অথবা অজ্ঞতা।
মোয়াজ্জাম সাহেব মেয়ের কথা শুনে খুব অবাক হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ইসলাম সম্বন্ধে তুই এত কথা জানলি কি ভাবে?
জিনিয়া মৃদু হেসে বলল, টিকলীর কাছ থেকে। মাঝে মাঝে ওর থেকে ইসলামিক বই নিয়ে পড়াশোনা করি।
তোর কথা শুনে খুব খুশি হলাম মা। আমরা ধর্ম কর্ম যেমন জানি না তেমনি মানি না। আর তোকেও আমরা ঐসব শিক্ষা দিইনি। তুই যদি ঐ ফ্যামিলীতে গিয়ে সুখি হবি মনে করিস, তা হলে আমি হালিম সাহেবের সঙ্গে কথা বলব।
জিনিয়া বলল, না বাবা, এখন কিছু বলার দরকার নেই। আগে আলীর মতামতটা আমাকে জানতে দাও। যদি পজিটিভ হয়, তা হলে আমি তোমাদের জানাব। তারপর যা করার তোমরা করবে। তবে ও পাশ করার পর।
মোয়াজ্জাম সাহেব বললেন, ঠিক আছে, তুই আমাদের একমাত্র সন্তান। তোর অমতে কিছু করব না।
ঐদিন ফেরার পথে টিকলী ভাইয়াকে বলল, তুমি জিনিয়াদের বাসায় ঢুকেই, যেভাবে তার দিকে তাকিয়ে ছিলে যেন কখনো তাকে দেখনি।
আলী তার মাথায় আদরের একটা চাঁটি মেরে বলল, ভাইয়ার সঙ্গে ফাজলামী করছিস?
টিকলী গাল ফুলিয়ে বলল, সত্যি কথা বলতে মারলে,, এবার মিথ্যা কথা বলি তা হলে? আমার বান্ধবীকে অপরূপ সাজে সজ্জিত দেখে তুমি মুগ্ধ হয়ে বাস্তব জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলে।
আলী আবার তাকে মারতে গেল।
টিকলী হাতটা ধরে ফেলে বলল, আমি জিনিয়াকে ভাবি হিসাবে পেতে চাই। আর আজই মা-বাবাকে সে কথা জানাব।