সে দেখা যাবে, বলে আলী নিজের রুমে চলে গেল।
বিকেলে টিকলী ভাইয়াকে নিয়ে নিউ মার্কেটে এসে দেশী বিদেশী তিন চারটে গল্পের ও একটা হাদিসের বই কিনল। তারপর ভাইয়াকে বলল, তুমি কিছু কিনবে না?
আলী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু কিনতে চায়। তবু বলল, আমি কিনে কি করব?
কেন, তুমি যাবে না?
সেদিন যাব না বললাম, আজ যাওয়াটা কি ঠিক হবে?
কেন, সেদিন তো জিনিয়া তোমার প্রোগ্রামের পরও যেতে বলল।
আলী একটা বিশ্বনবী কিনল। তারপর ফেরার সময় কাঁটাবন থেকে একগুচ্ছ রজনী গন্ধা ও একটা গোলাপের তোড়া কিনে বাসায় ফিরল।
মাগরিবের নামায পড়ে দুভাই বোন জিনিয়াদের বাসায় রওয়ানা দিল।
জিনিয়া মা বাবার একমাত্র সন্তান। তার বাবা মোয়াজ্জাম সাহেব হার্ট স্পেশালিস্ট। সরওয়ার্দি হাসপাতালে আছেন। এলিফেন্ট রোডে বাড়ি করেছেন। বাড়ির নিচ তলায় চেম্বার।
জিনিয়া ক্লাস নাইনে পড়ার সময় বান্ধবী টিকলীদের বাসায় যেত। সেই সময় তার ভাইয়ার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে ভালবেসে ফেলে। কিন্তু সে কথা কাউকে বলে নি। ক্লাস টেনে উঠার পর টিকলী বুঝতে পারে। তাই একদিন চাপাচাপি করতে স্বীকার করে। জিনিয়া আজ বার্থডে পার্টির নিমন্ত্রণ করে এসে, বাবাকে বলল, ঐদিন একটা ছেলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। তার ইন্টারভিউ নিবে। যদি পাশ করে, তা হলে তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেব। অবশ্য ছেলেটা যদি আসে।
মোয়াজ্জাম সাহেব মৃদু হেসে বললেন, কিন্তু মা, চেম্বারের জন্য যে বিজ্ঞপ্তী দিয়েছিলাম, তার ইন্টারভিউ হয়ে গেছে। দুই জনকে এ্যাপয়েন্টমেন্টও দেওয়া হয়ে গেছে।
জিনিয়া বলল; আমি তো তোমার চেম্বারের জন্য কারো ইন্টারভিউ নিতে বলছি না। মোয়াজ্জাম সাহেব বেশ অবাক হয়ে বললেন, তবে কিসের জন্য? আগে ইন্টারভিউ নাও, পরে বলব।
মোয়াজ্জাম সাহেব মেয়ের মনের খবর একটু টের পেলেন। গম্ভীর স্বরে বললেন, জিনিয়া তোর বয়স কত হল বলতে পারিস?
তা পারব না কেন? উনিশ পেরিয়ে বিশে পড়েছে। তোমরা আদর করে ঘরে বসিয়ে না রেখে যদি আমাকে ঠিক সময়ে স্কুলে ভর্তি করতে, তা হলে এতদিনে বি.এ. পাশ করে এম.এ. পড়তাম।
মেয়েরা ম্যাচিওর হয় কত বছরে জানিস?
তোমাদের ডাক্তারী মতে তো কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই। স্বাস্থ্য ও জ্ঞানের তারতম্য অনুসারে পনের থেকে আঠার বছর, তাই না বাবা?
তুই কি আউট বই অনেক পড়িস?
অনেক পড়ার সময় কোথায়? তবু কিছু কিছু পড়ি। এত কথা জিজ্ঞেস করছ কেন? শোন, যা বললাম মনে রাখবে কিন্তু।
তোর মাকে ছেলেটার ইন্টারভিউ নিতে বলবি না?
জিনিয়া হেসে উঠে বলল, বলব, তবে তোমার কাছে পাশ করার পর। তারপর আমি এখন যাই বলে চলে গেল।
মোয়াজ্জাম সাহেব এতদিন মেয়ের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করেন নি। আজ তার কথা শুনে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলেন, সে ম্যাচিওর হয়েছে।
সন্ধ্যে সাড়ে সাতটার মধ্যে নিমন্ত্রিত অতিথিরা এসে যাওয়ার পর জিনিয়ার মা মুকাররামা বেগম মেয়েকে বললেন, দেরি করছিস কেন? কেক কেটে পার্টির কাজ শুরু কর।
জিনিয়া বলল, টিকলীর জন্য অপেক্ষা করছি।
মুকাররামা বেগম জানেন, টিকলী ওর খুব অন্তরঙ্গ। অনেক বার এসেছে। অন্যান্য বান্ধবীদের চেয়ে সে যে অনেক ভালো তাও জানেন। তাই বললেন, ঠিক আছে, আর একটু অপেক্ষা কর।
প্রায় দশ মিনিট পর টিকলী ও আলী এসে পৌঁছাল।
আলীকে দেখে জিনিয়ার মন আনন্দে ছলকে উঠল। এগিয়ে এসে সালাম দিয়ে টিকলীকে উদ্দেশ্য করে বলল, দেরি করলি কেন?
টিকলী সালামের উত্তর দিয়ে বই ও রজনীগন্ধার প্যাকেট তার হাতে দিয়ে বলল, ট্রাফিক জামে পড়েছিলাম।
জিনিয়া সেগুলো একজনের হাতে দিয়ে আলীর দিকে তাকিয়ে বলল, আসুন।
আলী জিনিয়াকে আগে অনেক বার দেখলেও আজকের অপরূপ সাজে সজ্জিতা জিনিয়া যেন অন্যজন। এক দৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। বাস্তবে ছিল না। জিনিয়ার কথায় বাস্তবে ফিরে এসে বইয়ের প্যাকেট ও গোলাপের তোড়াটা তার হাতে দেওয়ার সময় বলল, দোওয়া করি, আল্লাহ যেন এই দিন আপনার জীবনে শতবার পার করান।
ধন্যবাদ বলে জিনিয়া তাদেরকে নিয়ে কেকের টেবিলের কাছে এল।
নাস্তা খাওয়ার পর জিনিয়ার বান্ধবীদের দুএকজন গান গেয়ে শোনাল। জিনিয়া একটা নজরুল সংগীত গাইল। এক ফাঁকে জিনিয়া বাবাকে ঈশারা করে আলীকে চিনিয়ে দিয়ে বলল, আমার বান্ধবী টিকলীর ভাইয়া।
ফাংসান শেষে সবাই চলে গেলে। টিকলী চলে যেতে চাইলে জিনিয়া বলল, আর একটু বস। তোর ভাইয়া আজ প্রথম এলেন, মা বাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। তারপর মা-বাবাকে ডেকে নিয়ে এসে আলীকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমার মা-বাবা।
আলী ওদের দেখে দাঁড়িয়ে সালাম দিল।
মোয়াজ্জাম সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে আলীকে বসতে বলে নিজেরাও বসলেন।
তোমরা গল্প কর আমরা এক্ষুণী আসছি বলে জিনিয়া টিকলীর হাত ধরে তাকে। নিয়ে ভিতরে চলে গেল।
ওরা চলে যাওয়ার পর মোয়াজ্জাম সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি, বাবা?
আলী নাম বলল।
পড়াশোনা নিশ্চয় করছ?
জ্বী ম্যানেজমেন্টে অনার্স করছি?
তোমার বাবার নাম?
হালিম সাহেব।
উনি কি করেন?
সেক্রেটারীয়েটে চাকরী করেন।
আমি এক হালিম সাহেবকে চিনি। উনি মিনিষ্ট্ৰী অব হেলথে আছেন। তোমার বাবা কিসে আছেন?