জিনিয়া যে অসামান্য সুন্দরী সে কথা ছোট বেলা থেকে শুনে আসছে। তাই লজ্জা পেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তুইও কিন্তু কম না। তা না হলে টোপর ভাইয়ের মতো ছেলের মন কাড়তে পারতিস না।
আমাদের ব্যাপারটা আলাদা, আমরা ছোটবেলা থেকে একে অপরকে ভালবাসি। আসল কথাটা এবার বলে ফেলতো দেখি।
তুই টোপরের সঙ্গে প্রেম করে একেবারে গোল্লায় গেছিস। আমাকেও ঐ পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিস।
তা না হয় হল। এবার কথা না ঘুরিয়ে আমার প্রশ্নের উত্তর দে।
তোর ভাইয়ার সঙ্গে ভালো করে আলাপ করি, তারপর বলব।
টিকলী বলল, ঠিক আছে তাই বলিস।
প্রায় বছর দেড়েক পর ইন্টারে ভর্তি হয়ে জিনিয়া নিজের বার্থডে পার্টিতে টিকলীকে নিমন্ত্রণ করার সময় আলীকেও করল।
আলী বলল, মাফ করবেন ঐদিন আমার একটা প্রোগ্রাম আছে।
জিনিয়া অপমান বোধ করে মাথা নিচু করে নিল।
সেখানে টিকলী ছিল। জিনিয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে বলল, ভাইয়া, আমার বান্ধবী তোমাকে নিমন্ত্রণ করল, আর তুমি ডিনাই করে অপমান করলে। কাজটা কি উচিত হল?
আলী বলল, আমি অপারগতার কথা বলে মাফ চেয়েছি, এতে অপমান করার কি হল? তারপর জিনিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনি আমার বোনের বান্ধবী, আপনাকে অপমান করার উদ্দেশ্য নিয়ে কথাটা বলিনি। যদি সত্যি সত্যি অপমান বোধ করে থাকেন, তা হলে আমি দুঃখিত এবং সে জন্য আবার মাফ চাইছি।
জিনিয়ার বদলে টিকলী বলল, তুমি বড় হলে কি হবে, আমার থেকে জ্ঞান তোমার অনেক কম। তারপর জিনিয়ার দিকে চেয়ে বলল, ভাইয়া প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করে নিমন্ত্রণ গ্রহণ না করা পর্যন্ত তুই মাফ করবি না।
জিনিয়া বলল, আমি তোর ভাইয়ার কে যে, আমার জন্য প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করবেন। তারপর আলীর দিকে চেয়ে বলল, দয়া করে প্রোগ্রামের পর যদি আসেন, তা হলেও কৃতার্থ হব। কথা শেষ করে টিকলীকে বলল, এখন চলি রে, আরো কয়েক জায়গায় যেতে হবে।
জিনিয়া চলে যাওয়ার পর টিকলী বলল, ও তোমার উপর খুব মনে কষ্ট পেয়েছে। আলী বলল, উনি যদি শুধু শুধু মনে কষ্ট পান আমি কি করব?
তুমি এখনো টিনার এজে রয়ে গেছ। ভার্সিটিতে পড়ছ, অথচ একটা মেয়ের মন বুঝতে পারলে না।
আলী রেগে উঠে বলল, দেখ, আজে বাজে কথা বলবি না। দেব এক থাপ্পড়।
টিকলী একটু দূরে সরে গিয়ে বলল, ঐ একটা কথাই শুধু জান দেব এক থাপ্পড়। আর একটা মেয়ে যে তোমাকে কেন নিমন্ত্রণ করল, তা জানতে পারলে না।
আলী আরো বেশি রেগে গিয়ে ওকে মারার জন্য এগিয়ে আসার উপক্রম করলে, টিকলী হাত তুলে বলল, দাঁড়াও, আগে আমাকে কথা শেষ করতে দাও, তারপর না হয় মেরো। জিনিয়া তোমাকে খুব পছন্দ করে, বলে ছুটে পালিয়ে গেল।
ছোট বোনের বান্ধবী হিসাবে আলী তাকে এতদিন দেখে এসেছে। আজ টিকলীর কথা শুনে রেগে গেলেও তার শেষের কথা শুনে মনে হোঁচট খেল। ভাবল, তাই বোধ হয় জিনিয়া যখনই বাসায় আসে তখনই আমার সঙ্গে দেখা করে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস। করে, চোখে চোখ পড়লেই ফর্সা মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। সে সময় মনে কিছু না। হলেও এখন সেই সব কথা চিন্তা করে জীবনে এই প্রথম মনের মধ্যে কি রকম এক রকমের আনন্দ অনুভব করল। ভেবে রাখল, ওর জন্মদিনে যাবে। যাবে না বলে মিথ্যে প্রোগ্রামের কথা বলেছিল।
জিনিয়ার বার্থডে পার্টির দিন সকালে নাস্তার টেবিলে বাবাকে উদ্দেশ্য করে টিকলী বলল, আজ জিনিয়ার বার্থডে পার্টিতে যাব। একটা প্রেজেন্টেশান কিনতে কিছু টাকা লাগবে। আর গাড়িটাও নেব।
হালিম সাহেব বললেন, বার্থডে পার্টি করা যে ইসলামিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে নাজায়েজ, সে কথা তো তুই জানিস, তবু যাবি কেন? তোর তো তাকে এসব করতে নিষেধ করা উচিত ছিল।
টিকলী বলল, আমি নিষেধ করেছি, জিনিয়াও এসব করতে চায় না। সে কথা ওর মা-বাবা শুনে বললেন, এসব এখন সভ্য সমাজের ফ্যাশন। এসবের সঙ্গে প্রেস্টিজের প্রশ্ন রয়েছে। তা ছাড়া এটাতো কোনো অন্যায় কাজ না যে, গোনাহ হবে।
হালিম সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, হায়রে সভ্য সমাজ, মুসলমান হয়ে নিজের দ্বীনকে না জেনে বিধর্মীদের রীতিনীতি মেনে নিজেদেরকে বড় মনে করছে। আজকাল লোকের টাকা হলেই পাশ্চাত্যের জীবন-ধারায় চলতে শুরু করছে। সভা সমিতি বা বাসায় যে কোনো ফাংসানে সাংস্কৃতির নামে যে নাচ গান হচ্ছে, সে সবও ইসলামের দৃষ্টিতে নাজায়েজ। মুসলমানরা আজকাল ধর্মীয় শিক্ষাকে এড়িয়ে কলেজ। ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে আল্লাহ ও তার রসুল (দঃ) এর আদেশ নিষেধ মেনে চলছে না। আর সেই জন্য সারা পৃথিবীতে মুসলমানরা অত্যাচারিত নিপীড়িত হচ্ছে। তবু তাদের জ্ঞান ফিরছে না। মুসলমানদের পরিণতি আরো যে কত অবনতি হবে তা আল্লাহকেই মালুম। যেতে চাস যা, তবে নাচ গান হওয়ার আগে চলে আসবি।
সাজেদা বেগম বললেন, ধর্মের বিধি নিষেধ আজকাল কয়জনে আর মেনে চলে। যারা জানে না তারা তো মানেই না। আর যারা জানে, তারাও মানে না। তারপর বললেন, তোমার অফিস যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
হালিম সাহেব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, ও তাইতো, তারপর ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য রুমে চলে গেলেন।
সাজেদা বেগম স্বামীকে অনুসরণ করলেন।
মা বাবা চলে যাওয়ার পর টিকলী ভাইয়াকে বলল, বিকেলে তোমাকে নিয়ে মার্কেটে যাব, তাড়াতাড়ি ফিরো।