টিকলী সব কিছু বলে বলল, তোমার মা-বাবা তোমাকে কিছু বলেন নি?
না। তবে আমার সঙ্গে বাবা কথা বলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।
উনি চিঠি পেয়ে আমার বাবার কাছে ফেরৎ দেওয়ার পরের দিন মা ভাইয়াকে সাথে নিয়ে এসেছিল।
তোমাকে নিশ্চয় খুব বকাবকি করে গেছেন?
তাদেরকে দেখে আমি তাই মনে করে খুব ভয় পেয়ে ছিলাম; কিন্তু না বকাবকি না করে বুঝিয়ে বললেন, তোদের ভালবাসায় বাধা দেব না। তবে তোরা এখন বিয়ে করবি না। টোপর পাশ করে উপার্জন করুক, আর তুইও ততদিনে ডাক্তারী পাশ কর। তারপর তোদের বিয়ের ব্যবস্থা আমরাই করব।
তুমি কি বললে?
আমি আবার কি বলব? মা তো খুব ভালো কথা বলেছে।
টোপর অসন্তুষ্ট গলায় বলল, আর আমি যে বিয়ে করব বলে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি তার কি হবে?
টোপর তুমি ভেবে দেখ, এখন বিয়ে করা কি উচিত হবে? এর পরিনামের কথা। আগে যা বলেছি, আবার এখনও তাই বলব।
টোপর রেগে গিয়ে বলল, এই কথা শোনাবার জন্য কি ডেকেছিস? আমাকে তো তুই চিনিস, যা বলি তা করেই ছাড়ি। আমি তোর কোনো কথাই শুনব না। চল, এক্ষুণি। কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি।
টিকলী বুঝতে পারল, টোপর খুব রেগে গেছে। তাই তুই করে বলতে শুরু করেছে। বলল, তুমি রেগে যাচ্ছ কেন? মা-বাবা রাজি ছিল না বলে আমি গোপনে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম। এখন তারা যখন রাজি তখন করা কি ঠিক হবে? মা ঐ সব। বলে আমাকে ওয়াদা করিয়েছে, এখন যেন বিয়ে না করি। আমি মায়ের কাছে যা। ওয়াদা করেছি, তা খেলাপ করতে পারব না। ওয়াদা খেলাপ করা কবিরা গোনাহ। এটা হাদিসের কথা।
আর তুই যে আমাকে বলেছিলি, রাজশাহীতে গিয়ে বিয়ে হবে। সেই ওয়াদা খেলাপ করলে গোনাহ হবে না?
সেটার পিছনে কারণ ছিল। এখন কারণটা যখন নেই তখন আমাদের দুজনের মধ্যে সমঝোতা হওয়া উচিত।
উচিত অনুচিত আমি বুঝি না। আমি আজ এক্ষুণী তোকে বিয়ে করতে চাই।
তা হয় না টোপর, তুমি ভুল করতে যাচ্ছ। জেনে শুনে আমি তা করতে দিতে পারি না। আমি তোমার ভালো চাই। কতবার বলেছি এখন বিয়ে করলে তোমার উজ্জ্বল। ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে যাবে। আমাদের সুখ-শান্তির স্বপ্ন ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে।
টোপর রাগ সহ্য করতে পারল না। দাঁড়িয়ে উঠে বলল, তোর মনে যদি এই ছিল, তা হলে ডেকে এনে আশা দিয়ে নিরাশ করলি কেন? চিঠিতেই তো জানাতে পারতিস। তুই বেঈমান, তোর সাথে আমার সম্পর্ক চিরদিনের জন্য শেষ। আমাকে আর কোনো দিন চিঠি দিবি না। কথা শেষ করে কেবিন থেকে বেরিয়ে হন হন করে চলে যেতে লাগল।
টিকলী ওর পিছনে আসতে আসতে বলল, প্লীজ টোপর যেও না, দাঁড়াও। তারপর বেয়ারাকে দেখতে পেয়ে তার হাতে দশ টাকার একটা নোট দিয়ে দ্রুত হোটেল থেকে বেরিয়ে এল।
ততক্ষণে টোপর একটা রিক্সায় উঠে ঠিকানা বলল।
টিকলী তাড়াতাড়ি করে রিক্সার কাছে যখন এল তখন রিক্সা চলতে শুরু করেছে।
টিকলী রিক্সার পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল, টোপর তোমাকে আল্লাহর দোহাই লাগে, দাঁড়াও।
টোপরের চোখে তখন পানি এসে গেছে। চোখ মুছতে মুছতে রিক্সাওয়ালাকে বলল, জৈারে চালাও।
টিকলীকে পিছনে ফেলে রিক্সা চলে গেল।
টিকলী যতক্ষণ রিক্সা দেখা পেল ততক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে রইল। তখন তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। তারপর অদৃশ্য হয়ে যেতে চোখ মুখ মুছে একটা খালি রিক্সা দেখতে পেয়ে উঠে বসে বাসার ঠিকানা বলল।
ভাগ্নীকে অসময়ে বাসায় ফিরতে দেখে মাজেদা বেগম জিজ্ঞেস করলেন, কিরে, , চলে এলি যে, ক্লাস হয় নি? তারপর তার মুখ থমথমে দেখে বললেন, তোর কি শরীর খারাপ?
টিকলীর শুধু কান্না পাচ্ছে। অনেক কষ্টে সংযত হয়ে বলল, ভীষণ মাথা ধরেছে, তাই চলে এলাম। তারপর তাড়াতাড়ি নিজের রুমে এসে খাটে শুয়ে ফুলে ফুলে কাঁদতে লাগল।
মাজেদা বেগম ভাগ্নীর মাথা ধরার কথা শুনে রুমে এসে তাকে কাঁদতে দেখে আতঙ্কিত স্বরে বললেন, খুব বেশি কি যন্ত্রণা হচ্ছে মা? কাউকে দিয়ে ডাক্তার আনাব?
টিকলী সামলে নিয়ে বলল, না, ডাক্তার আনতে হবে না। প্যারাসিটামল খেয়েছি। একটু পরে কমে যাবে। আপনি যান, আমি একটু ঘুমাব।
মাজেদা বেগম বললেন, তাই ঘুমা। ঘুমালে মাথার যন্ত্রণা কমে যাবে। তারপর? তিনি সেখান থেকে চলে এলেন।
৫. জিনিয়াদের বাসা নয়া পল্টনে
জিনিয়াদের বাসা নয়া পল্টনে, সে দেখতে শুনতে খুব ভালো। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় টিকলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। অনেকবার তাদের বাসায় গেছে। টেনে পড়ার সময় টিকলী যেদিন তার ভাইয়া আলীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়, সেদিন তাকে জিনিয়ার খুব ভালো লাগে। তারপর একদিন কথায় কথায় টিকলীকে বলে ফেলে, তোর ভাইয়া কিন্তু দারুন হ্যাঁন্ডসাম।
টিকলী হেসে উঠে বলেছিল, তাই নাকি? তা ভাইয়ার পিছনে লাইন লাগাবি নাকি?
জিনিয়া লজ্জা পেয়ে মৃদু হেসে বলেছিল, ধেৎ, কি বাজে কথা বলছিস?
ওমা, এটা আবার বাজে কথা হবে কেন? তুই-ই তো বললি, ভাইয়া দারুন হ্যাঁন্ডসাম। মেয়েরা তো ঐ রকম ছেলেকেই পছন্দ করে। আমি যতদুর জানি, ভাইয়া এখনো কোনো মেয়ের দিকে নজর দেয়নি। তুই চাইলে এ ব্যাপারে আমি তোকে হেল্প করতে পারি।
তোর ভাইয়া যদি আমাকে পছন্দ না করে?
তোর মতো মেয়েকে কোনো ছেলেই অপছন্দ করতে পারে না। তুই আমার থেকে অনেক বেশি সুন্দরী।