টোপরকে দেখে আসমার চিঠির কথা মনে পড়ল। ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
টোপর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল তোর আপা কি রাজশাহী চলে গেছে।
আসমা মাথা নিচু করেই বলল, হ্যাঁ সাত আট দিন হল গেছে।
ঠিক আছে তুই যা বলে টোপর ভার্সিটিতে চলে গেল।
আসমা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে লাগল।
যখন পনের দিন পার হয়ে গেল অথচ টিকলীর চিঠি পেল না তখন টোপর খুব অস্থির হয়ে পড়ল। ভাবল আর এক সপ্তাহের মধ্যে যদি চিঠি না আসে, তা হলে রাজশাহীতে গিয়ে মেডিকেল কলেজে তার সঙ্গে দেখা করবে।
বিশ দিনের মাথায় টোপর ক্লাস করে বেরিয়ে রাস্তায় এসে রিক্সায় উঠতে যাবে, এমন সময় একটা মেয়ের গলা শুনতে পেল, টোপর ভাই রিক্সায় উঠবেন না, একটু দাঁড়ান কথা আছে।
টোপর ঘাড় বাঁকিয়ে জিনিয়াকে দেখতে পেয়ে ঘুরে দাঁড়াল। সে জিনিয়াকে চিনে। টিকলী তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
জিনিয়া কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল, আপনি আচ্ছা ছেলে তো, আজ তিন চার দিন সারা ভার্সিটিতে চষে ফেলছি, তবু আপনাকে পাইনি।
টোপর বলল, তাই নাকি?
হ্যাঁ তাই।
কেন বলতো?
টিকলী রাজশাহী থেকে আমাকে চিঠি দিয়েছে। সেই সাথে আপনাকেও দিয়েছে। এই নিন বলে চিঠিটা তার হাতে দিল। তারপর বলল, আপনাদের বাসার ঠিকানায় দিলে যদি অন্য কারো হাতে পড়ে, তাই আমার ঠিাকনায় দিয়েছে।
টিকলীর চিঠির জন্য টোপর অস্থির ছিল। বলল, তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ জানাব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
আমি এখন যাই বলে জিনিয়া চলে গেল।
টোপর চিঠি পড়ে বাসায় ফেরার সময় চিন্তা করল, তাই বাবা এই কয়েক দিন আমার সঙ্গে তেমন কথা বলেনি। চিঠির কথা এখন কিছু বলা ঠিক হবে না। রাজশাহী থেকে ফিরে যা বলার বলা যাবে। বাসায় ফিরে মাকে বলল, আমাকে হাজার পাঁচেক টাকা দিতে হবে।
শাফিয়া বেগম বলেন, তা হলে কি টিকলীর কোনো চিঠি পেয়ে রাজশাহী যাবে? জিজ্ঞেস করলেন, এখন এত টাকার কি দরকার পড়ল?
তুমি দেবে কিনা বল?
কি দরকার না বললে দেব না।
আগে তো কোনো দিন জানতে চাও নি।
এত টাকা এক সঙ্গে তুই আগে কোনো দিন চাস নি।
টোপর রেগে গিয়ে বলল, আগে দরকার হয় নি, তাই চাইনি। তুমি টাকা দেবে। কিনা বল।
শাফিয়া বেগম ছেলের জীদ জানেন। বললেন, রেগে যাচ্ছিস কেন? মা হয়ে জিজ্ঞেস করা কি উচিত নয়?
আমি কাল বন্ধুদের সঙ্গে রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজারে বেড়াতে যাব।
শাফিয়া বেগমের সন্দেহ কেটে গেল। হাসি মুখে বললেন, সে কথা প্রথমে বললেই পারতিস। ঠিক আছে যাওয়ার সময় নিস।
টোপর বলল, তুমি বাবাকে বেড়াতে যাওয়ার কথাটা বলো।
শাফিয়া বেগম বললেন, আচ্ছা বলব।
রাতে খাওয়ার টেবিলে শাফিয়া বেগম স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, টোপর কাল বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি বেড়াতে যাবে। কিছু টাকা চাইছে।
কাহহার সাহেব কয়েক দিন পিয়নকে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়েছেন, রাজশাহী থেকে অথবা অন্য কোথাও থেকে টোপরের নামে কোনো চিঠি আসেনি। তাই কোনো সন্দেহ না করে জিজ্ঞেস করলেন, কত দিন পরে ফিরবে?
শাফিয়া বেগম বললেন, ও তো বলল, এক সপ্তাহ।
কাহহার সাহেব বললেন, এভাবে টাকা পয়সা নষ্ট করা উচিত নয়।
বাবা যে খুব কৃপণ টোপর তা জানে। সে না দিলেও মা দেবেই। তাই চুপ করে খেয়ে যেতে লাগল।
শাফিয়া বেগম বললেন, বন্ধুদের সঙ্গে কয়েক দিন বেড়িয়ে আসবে এতে আর কি এমন খরচ হবে। তা ছাড়া এটাই তো ওদের বেড়াবার বয়স। সংসারে ঢুকলে ওসব খেয়াল কি আর থাকবে?
কাহহার সাহেব বললেন, টাকা যে উপার্জন করে, সেই বুঝে টাকা কি জিনিস।
শাফিয়া বেগম বললেন, তুমি যে এত উপার্জন করছ, কার জন্য? ছেলেমেয়েদের জন্য তো?
কাহহার সাহেবের ততক্ষণে খাওয়া শেষ হয়েছে। হাত মুখ ধুয়ে বললেন, তোমার আস্কারা পেয়ে, ও আজ এই রকম হয়েছে। কথা শেষ করে চলে গেলেন।
পরের দিন সকালে টোপর কমলাপুর স্টেশনে আটটা চল্লিশে পদ্মা এক্সপ্রেসে রওয়ানা দিল। রাত প্রায় নটার রাজশাহী পৌঁছে একটা হোটেলে রাত কাটিয়ে সকাল আটটায় টিকলীর দেওয়া ঠিকানা মতো মেডিকেল কলেজের গেটে অপেক্ষা করতে লাগল।
সাড়ে আটটায় ক্লাস শুরু হয়। টিকলী প্রতিদিন সোয়া আটটায় আসে। আজ রিক্সা থেকে নেমে টোপরকে দেখে খুব খুশি হল। এগিয়ে এস সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছ?
টোপর সালামের উত্তর দিয়ে বলল, ভালো আর থাকতে দিলি কই, তুই কেমন আছিস?
আমি এক রকম আছি। এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলা ঠিক হচ্ছে না। চলো কোথাও গিয়ে বসি। আজ আর ক্লাস করব না। তারপর যেতে যেতে বলল, এবার থেকে তুই করে বলবে না, তুমি করে বলবে। দেখছ না আমি তুমি করে বলছি।
কথাটা মন্দ বলিসনি। ঠিক আছে তাই হবে।
টিকলী হেসে উঠে বলল, এক্ষুণী তো বলে ফেললে।
টোপরও হেসে উঠে বলল, এত বছরের অভ্যাস বদলাতে একটু সময় লাগবে।
ওরা একটা হোটেলের কেবিনে বসল। তারপর টিকলী জিজ্ঞেস করল, কি খাবে বল?
টোপর বলল, নাস্তা খেয়ে বেরিয়েছি, শুধু চা। তুমি কিছু খেলে খেতে পার।
টিকলী বলল, আমিও তাই। তারপর বেয়ারাকে দুকাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে বলল, আমরা কিছুক্ষণ পরে নাস্তা করব।
বেয়ারা চা দিয়ে চলে যাওয়ার পর টোপর বলল, পরশু চিঠি না পেলে দুএক দিনের মধ্যে চলে আসতাম। এবার বল, যে চিঠিটা দিয়ে এসেছিলে তাতে কি লিখেছিলে।