টিকলী ভেবেছিল, মা তাকে চিঠির কথা বলে খুব রাগারাগি করবে। তাই প্রথমে খুব ভয় পেয়েছিল। এখন মায়ের কথা শুনতে ভয় কেটে গিয়ে মনে মনে খুশি হল। কি বলবে না বলবে ভেবে না পেয়ে চুপ করে রইল।
সাজেদা বেগম মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমো খেয়ে বললেন, ওয়াদা কর, আমার কথা রাখবি?
টিকলী মাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
সাজেদা বেগম বললেন, কাঁদছিস কেন? যা কিছু বললাম, তোর ভালোর জন্য বললাম। ওয়াদা কর, এখন কিছু করবি না।
টিকলী জানে এখন বিয়ে করলে তাদের দুজনেরই ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তাই সেও এখন বিয়ে করতে চায় না। শুধু টোপরের জিদে রাজি হয়েছিল। মায়ের কথা শুনে চোখ মুছে সে কথা জানিয়ে বলল, ঠিক আছে আম্মা, আমি ওয়াদা করলাম তোমার কথা রাখব। তুমি দোওয়া কর, আল্লাহ যেন আমাকে ওয়াদা পূরণ করার তওফিক দেন।
সাজেদা বেগম আলহামুলিল্লাহ বলে বললেন, আল্লাহ তোর সমস্ত নেক বাসনা পূরণ করুক, তোকে ওয়াদা পূরণ করার তওফিক দিক।
পরের দিন সাজেদা বেগম বুবু ও দুলাভাইকে মেয়ের সঙ্গে যে সব কথা-বার্তা হয়েছে বললেন।
রহমান সাহেব বললেন, টিকলী খুব বুদ্ধিমতী। মনিষিরা বলেছেন, আকেলমন্দ কো ঈশরাই কাফি, অর্থাৎ যারা বুদ্ধিমান, অল্প কথাতেই তারা সব কিছু বুঝতে পারে।
দুদিন থেকে সাজেদা বেগম আলীকে নিয়ে ঢাকা ফিরে এসে স্বামীকে সব কিছু বললেন।
হালিম সাহেব শুনে অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, এই বয়সটা ছেলে মেয়েদের জন্য খুব ডেঞ্জারেস। টোপর যোগাযোগ করলে টিকলী কি ঠিক থাকতে পারবে?
সাজেদা বেগম বললেন, টিকলীর পেটে দ্বিনী এলেম আছে, আর যাই করুক ওয়াদা খেলাপ করবে না। দুলাভাই বলেছেন, তোমরা কোনো দুশ্চিন্তা করো না। আমি টিকলীর দিকে লক্ষ্য রাখব।
কিন্তু তুমি যে তাকে বলে এলে, ভবিষ্যতে আমরা তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করব, তার কি হবে?
ভবিষ্যতে কি হবে না হবে তা আল্লাহ জানেন। তা ছাড়া একটা কথা ভুলে যাচ্ছ। কেন, আল্লাহ ওদেরকে জোড়া করে পয়দা করে থাকলে আমরা বাধা দিয়ে কি কিছু করতে পারব? ভবিষ্যতের কথা নিয়ে দুচিন্তা করার কোনো মানে হয় না। আল্লাহর যা মর্জি তাই হবে।
৪. টিকলী টোপরকে চিঠি লিখল
মা ফিরে যাওয়ার পর টিকলী টোপরকে চিঠি লিখল
প্রিয়তম টোপর,
পত্রে আমার অন্তরের সবটুকু ভালবাসা ও সালাম নিবে। পরে জানাই যে, এখানে আসার আগে তুমি ঢাকায় ছিলে না। তাই একটা চিঠি লিখে আমাদের কাজে মেয়ের হাতে দিয়ে এসে ছিলাম তোমাকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সে চিঠি দিতে গিয়ে দুর্ভাগ্যবশত তোমার বাবার সামনে পড়ে যায়। তিনি তার কাছে থেকে চিঠি নিয়ে আমার বাবার কাছে পাঠিয়ে দেন। চিঠি পড়ে মা এসেছিল। ঐ চিঠিতে কি লিখেছিলাম, তুমি এখানে এলে জানাব। এই চিঠি পেয়ে অতি শিঘ্র এসে আমার সঙ্গে দেখা করবে। আসার সময় তোমার সঙ্গে দেখা হল না বলে শুধু কান্না পেয়েছে। আল্লাহর রহমতে শারীরিক ভালো, কিন্তু মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি। তোমাকে না দেখা পর্যন্ত যন্ত্রণার উপশম হবে না। পত্র পাওয়া মাত্র আশা চাই কিন্তু। সবশেষে আল্লাহ পাকের দরবারে তোমার সার্বিক কুশল কামনা করে শেষ করছি।
আল্লাহ হাফেজ
ইতি
তোমার প্রিয়তমা
টিকলী
চিঠি লেখা শেষ করে খামে ঠিকানা লিখতে গিয়ে চিন্তা করল, এটাও যদি ওর বাবার হাতে পড়ে, তা হলে কি হবে? হঠাৎ বান্ধবী জিনিয়ার কথা মনে পড়ল। ভাবল, ওতো আমাদের সব খবর জানে। ওর ঠিকানায় দিলে নিশ্চয় টোপরকে দিবে। এই কথা চিন্তা করে জিনিয়াকেও একটা চিঠি লিখল।
জিনিয়া,
আমার ভালবাসা নিস। আশা করি, আল্লাহর পাকের রহমতে ভালো আছিস। আমিও তাঁরই কৃপায় ভালো আছি। ভাইয়ার সঙ্গে সম্পর্ক কতদুর এগোল জানাবি। এদিকে একটা ব্যাপার ঘটে গেছে। বলছি শোন, আমার ও টোপরের সব কিছু তো তুই জানিস। ও ঢাকায় কাজী অফিসে বিয়ে করতে চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, রাজশাহীতে হবে। আসার সময় টোপর দেশের বাড়ি গিয়েছিল। তাই একটা চিঠিতে রাজশাহীতে আসতে লিখে আমাদের কাজের বুয়ার মেয়ের হাতে দিয়ে বলেছিলাম টোপরকে দিতে। সে চিঠিটা দিতে গিয়ে তার বাবার সামনে পড়ে যায় এবং চিঠিটা তিনি নিয়ে নেন। তারপর আমার মা বাবার কাছে পাঠিয়ে দেন। চিঠি পড়ে মা এসে আমাকে এখন বিয়ে করতে নিষেধ করে বলল, পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর তারাই আমাদের বিয়ে দেবে। সে কথা জানাবার জন্য টোপরকে আসার কথা লিখে এই চিঠি দিলাম। ওর ঠিকানায় দিলে ওর বাবার হাতে পড়তে পারে ভেবে তোর চিঠির সঙ্গে পাঠালাম। তুই চিঠিটা ওকে অতি অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিবি। বিশেষ আর কি লিখব, চিঠির উত্তর দিস, আর টোপরকে বলিস, তোর ঠিকানাতে তাকে চিঠি দেব। খবরদার, ভাইয়াকে চিঠির কথা জানাবি না। আল্লাহ পাকের কাছে তোর সর্বাঙ্গীন কুশল কামনায়
বান্ধবী টিকলী
লেখা শেষ করে দুটো চিঠি একটা খামে ভরে পোস্ট করে দিল।
দেশের বাড়ি থেকে ফিরে টোপর টিকলীর সঙ্গে যেখানে সব সময় দেখা করে, সেখানে কয়েক দিন অপেক্ষা করে তাকে আসতে না দেখে ভাবল, তা হলে কি রাজশাহী চলে গেছে। একদিন ভার্সিটি যাওয়ার সময় রাস্তার মোড়ে মুদি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে টিকলীর কথা ভাবছিল। এমন সময় আসমাকে দোকানে সদাই করে ফিরে যেতে দেখে বলল, এই আসমা শোন।