সালেহা বোবা দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মাথা নিচু করে অনেকক্ষণ চুপ করে রইল। রিয়াজুলের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে এবং পরে তার কাজ-কর্ম দেখে বিশ্বাসই করতে পারেনি, এ যুগে এতো ভাল ছেলে থাকতে পারে। সে যখন আব্বার সঙ্গে দেখা করতে আসত এবং বুবুর সঙ্গে সংসারের ব্যাপারে আলাপ করত তখন লজ্জায় কাছে আসত না। তবে আড়াল থেকে তার দিকে তাকিয়ে থাকত; কিন্তু তাকে স্বামী হিসাবে পাওয়ার কথা চিন্তা করেনি কোনোদিন। আজ তার কথা শুনে এত আনন্দিত হল যে, তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হল না। থর থর করে কাঁপতে লাগল। একসময় আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে বুকের উপর টপটপ করে পড়তে লাগল।
রিয়াজুল দেখতে পেয়ে তার চিবুক ধরে মুখটা তুলে বলল, আমার কথা শুনে তুমি এত কষ্ট পাবে জানলে বলতাম না। তারপর চিবুক ছেড়ে দিয়ে বলল, কথাটা বলে খুব বড় অন্যায় করেছি। পারলে মাফ করে দিও। এবার আসি বলে দাঁড়িয়ে পড়ল।
সালেহা চমকে উঠে দাঁড়িয়ে ভিজে গলায় বলল, প্রশ্নের উত্তর না শুনেই চলে যাচ্ছেন যে? তারপর বলল, না চাইতেই আল্লাহপাক আমাকে যা দিতে চাচ্ছেন, তা দুনিয়ার সবশ্রেষ্ট নেয়ামত বলে আমি মনে করি। কথা শেষ করে টলতে টলতে ঘরের দিকে চলে গেল।
রিয়াজুল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তার দিকে তাকিয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। তারপর সেখান থেকে চলে এল।
.
সালেহার স্কুল থেকে ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে আসমা পুকুর ঘাটে এসে রাস্তার দিকে তাকাতে তাকে ও রিয়াজুলকে জামরুল গাছের তলায় বসে কথা বলতে দেখে বেশ অবাক হয়ে ঘরে এসে অপেক্ষা করছিল। অনেকক্ষণ পর সালেহা ঘরে এলে জিজ্ঞেস করল, এতক্ষণ ধরে রিয়াজুল ভাইয়ের সঙ্গে কী কথা বলছিলি?
সালেহা বই-খাতা রেখে বুবুকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বুকের ধকধকানি সামলাবার চেষ্টা করল।
আসমা তা অনুভব করে বলল, কিরে রিয়াজুল ভাই কী এমন কথা বলেছেন যে, তোর বুক ধক ধক কছে।
সালেহা ঐ অবস্থাতেই বলল, শুনলে তোমার বুকও ধক ধক করবে।
দেখ ফাজলামী করবি না। তারপর বলল, এবার ছাড়। কাপড় পাল্টে খাবি চল। খিদেয় পেট চো-চো করছে।
কথাটা শুনলে শুধু পেটের চোঁ-চোঁয়ানি নয়, দমও বন্ধ হয়ে যাবে।
আসমা জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, খুব বেড়ে গেছিস না? বড় বোনের সঙ্গে ফাজলামী করছিস। তারপর তার একটা হাত ধরে টান দিয়ে বলল, চল আগে খেয়ে নি, তারপর না হয় শুনব।
সালেহা অনঢ় থেকে বলল, রিয়াজুল ভাই তোমার ও মতি ভাইয়ের সম্পর্ক জেনে গিয়ে তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করছেন। আর আব্বার বিপদের কথা চিন্তা করে তিনি….। বলে কথাটা আর শেষ করতে পারল না। লজ্জায় লাল হয়ে কয়েক সেকেন্ড তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার জড়িয়ে ধরল।
আসমা তার প্রথম দিকের কথা শুনে চমকে উঠেছিল। তারপর পরের কথাটা শেষ না করে লজ্জা রাঙা হয়ে জড়িয়ে ধরতে খুব অবাক হল। বলল, আব্বার বিপদের কথা চিন্তা করে রিয়াজুল ভাই কী বললেন, বলবি তো।
সালেহা ফিস ফিস করে বলল, সে কথা তাকেই জিজ্ঞেস করো, আমি বলতে পারব না।
কেন পারবি না শুনি?
খুব লজ্জা পাচ্ছি।
ওমা, কি এমন কথা যে, বলতে লজ্জা পাচ্ছিস? রিয়াজুল ভাই বলতে লজ্জা পেলেন না, আর তুই তার বলা কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছিস কেন?
ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের লজ্জা যে বেশি, সে কথা তুমি মেয়ে হয়েও ভুলে গেছ?
আসমা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে ঢিল ছুঁড়ল। তা হলে কথাটা আমি বলি?
পারবে বলে মনে হয় না, তবু বল তো দেখি?
রিয়াজুল ভাই তোকে বিয়ে করবেন, তাই না?
ওহ্ বুবু, তুমি না, তুমি না….। বলে থেমে গেল।
আসমা বুঝতে পারল, ঢিলটা ঠিক জায়গা মতো লেগেছে। বলল, আমি কী বলবি তো।
সালেহা তাকে ছেড়ে দিয়ে কদমবুসি করে বলল, তুমি আল্লাহর খাস বান্দি। তোমার অনুমান মিথ্যা হতে পারে না। তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, রিয়াজুল ভাইয়ের মুখে কথাটা শুনে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম।
শুকুর আল-হামদুলিল্লাহ্ বলে আসমা ছোট বোনের মুখ ধরে দু’গালে অনর্গল চুমো খেতে লাগল।