মনোয়ার অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, খুব কঠিন সমস্যা বাবা, আমি মূর্খ মানুষ। এর সমাধান কী করতে পারব?
আপনি আসমার আব্বাকে বলবেন, ইদানিং আমার একটা খুব কঠিন রোগ ধরা। পড়েছে। ডাক্তার বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন। আমার নিজের পক্ষে জানানো সম্ভব নয় বলে আপনাকে জানাতে বলেছি। আরো বলবেন, রিয়াজুল মতিকে খুব ভাল ছেলে বলে জানে। তার সঙ্গে আসমার বিয়ে দিতে চায়। সব খরচ-পত্র রিয়াজুল বহন করবে।
মনোয়ার হোসেন রিয়াজুলের মহানুভবতায় ক্রমশ আরো বেশি মুগ্ধ হলেন। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, আল্লাহ তোমাকে দু’জাহানে খুশি করুন। তোমার হায়াৎ বাড়িয়ে দিন। জেনেছি তুমি খুব ধার্মিক ছেলে। তোমার কাজ কর্ম দেখেও তাই মনে হচ্ছে। মৌলবীদের মুখে শুনেছি, ছেলে-মেয়ে ধার্মিক হলে আল্লাহ তাদের মা-বাবাকে নাজাত দেন। তোমার মা বাবাকে আল্লাহ নিশ্চয় নাজাত দেবেন। তোমার কথা শুনে খুশি হয়েছি। আমি গরীব ও মূর্খ। হলেও জীবনে কোনোদিন মিথ্যা বলিনি। মিথ্যা বলা যে হারাম, তা আমার চেয়ে তুমি বেশি। জান। তাই বলছি, মিথ্যা করে তোমার কঠিন অসুখের কথা বলার দরকার নেই। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। বলছি শোন, তুমি আসমাকে বিয়ে করবে না শুনলে মোসারেফ যে আবার অসুস্থ হয়ে পড়বেন তা আমিও জানি। সেই সাথে তাকে যদি বলা হয়, তুমি সালেহাকে বিয়ে করবে, তা হলে তার কোন বিপদ হবে বলে মনে হয় না।
রিয়াজুল শুনে মনে মনে মনোয়ার চাচার বুদ্ধির তারিফ না করে পারল না। হঠাৎ তার মন বলে উঠল, আল্লাহ সালেহাকে তোমার জোড়া করেছেন, তাই এরকম ঘটনা ঘটল।
তাকে চুপ করে থাকতে দেখে মনোয়ার বললেন, আমার বুদ্ধিটা তোমাকে যে নিতেই হবে তা ভেব না। পরামর্শ চেয়েছ দিলাম। নেওয়া না নেওয়া তোমার ইচ্ছা।
না চাচা, আপনি খুব ভালো পরামর্শ দিয়েছেন। আমি ভাবছি সালেহার বয়স কম, সে যদি আমাকে পছন্দ না করে?
তোমার কথা ঠিক, তবে আমার মনে হয়, সালেহা সে রকম মেয়ে নয়। আর বয়সের কথা যে বললে, সেটা কিছু না। ছেলেদের পঁচিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে ও মেয়েদের পনের থেকে বিশের মধ্যে বিয়ে হওয়া উচিত। সালেহার বয়স পনের ষোেলর মতো। আর তোমার নিশ্চয় ত্রিশের নিচে?
রিয়াজুল বলল, সাতাশ।
তা হলে তো বয়সের কথাই উঠে না। তুমি বললে, আমি কালই মোসারেফের সঙ্গে কথা বলব।
রিয়াজুল বলল, আমি ছোট চাচা-চাচির সঙ্গে আলাপ করে আপনাকে জানাব। এবার আসি চাচা। অনেক রাত হয়েছে বলে রিয়াজুল সালাম বিনিময় করে চলে গেল।
মনোয়ার হোসেন পকেট থেকে বিড়ি ও দিয়াশলাই বের করে বিড়ি ধরিয়ে টানতে টানতে ঘরে এলেন। তার স্ত্রী করিমন স্বামীর অপেক্ষায় জেগে ছিলেন। তাকে ফিরে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, মিয়া বাড়ির ছেলের সঙ্গে এতক্ষণ কি কথা বলছিলে?
মনোয়ার হোসেন বললেন, সে অনেক কথা পরে শুনো। এখন রাত হয়েছে শুয়ে পড়।
.
১০.
মতি যে রাতে আসমার সঙ্গে জাম তলায় দেখা করে,তার পরের দিন সকালে বন্ধু জালালকে আসমার পরিস্থিতির কথা বলে বলল, এখন বল আমি কি করব?
জালাল বলল, তা হলে তো তোর জন্য কিছু করা দরকার। কিন্তু রিয়াজুলের মত ভালো। ছেলের বিরুদ্ধে কিছু করতে বিবেকে বাধছে।
তাই বলে আমার জন্য তুই কিছু করবি না?
জালাল কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, এক কাজ কর, তুই বা আসমা তোদের সম্পর্কের কথা তাকে জানিয়ে দে! তোকে তো সেদিন বলেছিলাম, তোদের সম্পর্কের কথা জানলে রিয়াজুল নিজেই তোদের বিয়ের ব্যবস্থা করবে।
তোর কথাটা কতদূর সফল হবে জানি না, তবে আসমাকে দিয়ে জানাব। যদি তোর কথা না ফলে, তা হলে কিন্তু তোকে বিহিত করে দিতে হবে।
ঠিক আছে, তাই হবে।
মতি ফিরে আসার সময় চিন্তা করল, আসমা তো আজ রাতে যেতে বলেছে, সেই সময় তাকে বলবে, সে যেন তাদের সম্পর্কের কথা রিয়াজুলকে জানায়।
রিয়াজুল মনোয়ার হোসনের সঙ্গে দেখা করতে আসার কিছুক্ষণ আগে মতি জামতলায় এসে অপেক্ষা করছিল। আসমা আসার পর বলল, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। সেটা করতে পারলে রিয়াজুল ভাই তোমাকে বিয়ে তো করতে চাইবেন না, বরং আমার সঙ্গে তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করবেন। আর সেই কাজটা তোমাকেই করতে হবে।
অকুল সমুদ্রে জাহাজ ডুবে গেলে মানুষ সাঁতার কাটতে কাটতে হয়রান হয়ে ডুবে যাওয়ার সময় সামান্য একটা ভাসমান কিছু পেলে তাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার জন্য যেমন তার মনের অবস্থা হয়, মতির কথা শুনে আসমার মনের অবস্থাও তেমনি হল। বলল, তাড়াতাড়ি বল, কী করতে হবে?
আমাদের সম্পর্কের কথা তুমি তাকে জানাবে।
আসমা হতাশ গলায় বলল, ও এই কথা? আমি মনে করেছিলাম, কি না কী।
মতি বলল, তুমি হতাশ হচ্ছ কেন? আমার দৃঢ় বিশ্বাস রিয়াজুল ভাই আমাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারলে, আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করবেনই।
তোমার ধারণা আল্লাহ কবুল করুক। তারপর গত রাতের ঘটনা খুলে বলল, আমার মনে হয়, রিয়াজুল ভাই আমাদের কথা সব শুনেছেন, আর বলা লাগবে না। তবু দু’একদিন অপেক্ষা করে দেখি, রিয়াজুল ভাই কী করেন। তারপর না হয় বলব।
হাঁ, তাই কর।
আজ সকালে একটা ঘটনা হয়েছে।
কী ঘটনা বল।
তুমি তো জান, সামসুদ্দিন চাচার কাছে আব্বা পাঁচ বিঘা জমি বিক্রি করেছিল। তারপর রিয়াজুল দলিল ফেরৎ দিয়ে যেসব কথা বলেছে বলল।