সালাম ও কুশল বিনিময় করে জালাল বলল, আয় বস। তারপর তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, কি ব্যাপার, তোর মন খারাপ মনে হচ্ছে?
মতি বলল, হ্যাঁ তুই ঠিকই ধরেছিস। তারপর রিয়াজুলের পরিচয় ও আসমাদেরকে সাহায্য করার কথা বলে বলল, রিয়াজুল নিশ্চয় আসমাকে পাওয়ার জন্য এতকিছু করছে।
জালাল বলল, আমার কানেও রিয়াজুলের ব্যাপারটা এসেছে। যাই বলিস, ছেলেটার বুকের পাটা আছে। অমন জাদরেল মাতবর চাচার বিরুদ্ধে লড়ে বাবার সম্পত্তি আদায় করল। মাতবরকে আর বড় একটা বাজারে আসতে দেখা যায় না। রিয়াজুল উচ্চ শিক্ষিত ও ধার্মীক।
মতি বিরক্ত স্বরে বলল, আমি এলাম তোর কাছে রিয়াজুলের বিরুদ্ধে নালিশ করতে, আর তুই কিনা তার প্রশংসা করতে শুরু করে দিলি।
জালাল বলল, দেখ মতি, এক সময় আমি ঢাকায় সন্ত্রাসী করতাম ঠিক। তাই বলে ভালোকে ভালো বলব না, একথা ভাবলি কি করে? রিয়াজুলের কথা কিছু কিছু শুনেছিলাম। হঠাৎ একদিন আমার সঙ্গে পরিচয় হয়। আলাপ করে যতটুকু জেনেছি, তাতে মনে হয়, সে তার অসহায় বাবার বন্ধুকে সাহায্য করছে, আসমার জন্য নয়। আসমা ও তোর সম্পর্কে কথা জানতে পারলে সে হয়তো নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে তোদের বিয়ে দিয়ে দেবে। তুই শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করছিস। তবে আসমা যদি তোর সঙ্গে বেঈমানী করে রিয়াজুলের দিকে ঝুঁকে পড়ে, সেটা আলাদা কথা। সে ব্যাপারে তুই কি করবি চিন্তা করে দেখ।
তুই তো জানিস, আমরা এক অপরকে অনেকদিন থেকে ভালবাসি এবং একদিন বিয়েও করব। হঠাৎ কোথাকার কে রিয়াজুল উড়ে এসে জুড়ে বসে আমার কাছ থেকে আসমাকে ছিনিয়ে নেবে, তা সহ্য করব না।
কী করবি শুনি?
হয় ওকে এখান থেকে তাড়াব, না হয় দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেব।
তুই কোনোটাই পারবি না।
কেন?
এসব করতে হলে জনবল ও অর্থবল দু’টোই থাকতে হবে। তোর কোনোটাই নেই।
তুই আমাকে সাহায্য করবি না?
করব; তবে তুই যেভাবে চাচ্ছিস, সেভাবে নয়। এসব কাজে ধৈৰ্য্য হারাতে নেই। ধৈৰ্য্য ধরে খুব ভেবে-চিন্তে করতে হয়। যা বলছি শোন, আসমাকে জিজ্ঞেস করে দেখ, সে তোকে এখনো ভালবাসে কিনা এবং বিয়ে করতে রাজি আছে কিনা। যদি রাজি থাকে, তা হলে রিয়াজুল কোনো সমস্যা নয়।
আর যদি রাজি না হয়?
এ্যাডভান্স বলছিস কেন? মেয়েরা প্রথম যাকে ভালবাসে, জীবন গেলেও তাকে ভুলতে পারে না। তোকে যা বললাম কর। আমিও তো আসমাকে চিনি, আমার বিশ্বাস সে বেঈমানী করবে না।
আমারও সেই বিশ্বাস আছে; কিন্তু রিয়াজুল যেভাবে তাদের সবার জন্য করছে, আসমা বেঈমানী করতে না চাইলেও বাবার অসহায়ত্বের কথা ভেবে যদি বাধ্য হয়ে রিয়াজুলকে বিয়ে করতে রাজি হয়?
বললাম না, আসমা তোকে চাইলে রিয়াজুল কোনো সমস্যা নয়। সে ধরনের মেয়ে সে নয়।
ঠিক আছে চলি বলে মতি সালাম বিনিময় করে চলে এল।
.
রিয়াজুল ভাইয়ের কথা শুনে মতি যে খুব অসন্তুষ্ট হয়েছে ও তাকে ভুল বুঝেছে, তা বুঝতে পেরে তার ভুল ভাঙ্গাবার জন্য আসমা ঐদিন বিকেলে জাহিদকে বলল, তুই মতি ভাইকে ডেকে নিয়ে আয়। বলবি আমি ডেকেছি।
জাহিদ মতিদের ঘরে গিয়ে তাকে দেখতে না পেয়ে তার মাকে জিজ্ঞেস করল, মতি ভাই কোথায়?
মতির মা বললেন, সে তো ঘরে নেই। তাকে কী দরকার আমাকে বল।
বড় বুবু মতিভাইকে যেতে বলেছে।
ঠিক আছে তুমি যাও, মতি ঘরে এলে যেতে বলব।
জাহিদ ফিরে এলে আসমা জিজ্ঞেস করল, কিরে, মতি ভাই এল না?
জাহিদ বলল, মতি ভাই ঘরে নেই। তার মা বলল, ঘরে এলে আসতে বলবে।
মতি মাগরিবের নামায পড়ে ঘরে এলে তার মা বললেন, আসমা তোকে ডাকতে জাহিদকে পাঠিয়েছিল।
মতি বলল, আজ আর যাব না, কাল সকালে যাব।
পরের দিন মাঠে কাজ করতে যাওয়ার আগে মতি আসমাদের বাড়ি গেল।
আসমা মনে করেছিল, মতি সন্ধ্যের পর নিশ্চয় আসবে। যখন এল না তখন ভাবল, হয়তো কোনো কারণে আসতে পারেনি। কাল সকালে আসবে। তাই পরের দিন সকালে পুকুর ঘাটে হাঁড়ি-পাতিল মাজার সময় বারে বারে রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখছিল। মতিকে আসতে দেখে হাত ধুয়ে ঘাটের উপরে উঠে এল।
কাছে এসে মতি সালাম বিনিময় করে মুখ ভার করে বলল, কেন ডেকেছ বল।
আসমা বলল, তার আগে বল, তোমার মন খারাপ কেন?
কেন খারাপ তা কী বুঝতে পারনি?
পেরেছি বলেই তো ডেকে পাঠিয়েছি। শোন মতি ভাই, তোমার আমার সম্পর্ক অনেক দিনের। তুমি আমাকে অবিশ্বাস করবে, তা ভাবতেই পারছি না। জান, যখন আমাকে ভুল বুঝে মন খারাপ করে চলে গেলে তখন থেকে মনে এতটুকু শান্তি নেই। সারারাত ঘুমাতে পারিনি। তোমাকে যে কি করে বোঝাব, তুমি আমার কাছে কতখানি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না মতি ভাই। তারপর আঁচলে চোখ মুছল।
রিয়াজুল ভাই তোমাদের জন্য এতকিছু করছেন, তিনি যদি তোমাকে বিয়ে করতে চান, তা হলে কী করবে?
আমি নিশ্চিত, তিনি তা চাইবেন না।
যদি চান, তুমি না করতে পারবে?
আসমা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল, পারব মতি ভাই পারব। তোমার জন্য আমি বিষও খেতে পারব।
ছিঃ আসমা, একথা উচ্চারণ করাও গোনাহ। আর কখনো বলবে না। আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। তোমার কথা শুনে সেই ভুল ভেঙ্গেছে। সেজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি। এবার আসি, মাঠে যেতে হবে।
এস বলে আসমা সালাম বিনিময় করে তাকে যতক্ষণ দেখা গেল তার দিকে তাকিয়ে রইল। আড়াল হয়ে যেতে ঘাটে নামল।