তাতো বলবই। আমি ভাবছি অন্য কথা।
তানজিলা বলল, অন্য কী কথা ভাবছ বল না।
পরে বলব, এখন আমি একটু বেরোবো।
.
দু’দিন পর নূরুদ্দিন মিয়া চাকরের মারফত ছোট ভাইকে ডেকে পাঠালেন।
সামসুদ্দিন মিয়া গিয়ে সালাম দিল।
সালামের উত্তর দিয়ে নূরুদ্দিন মিয়া বসতে বলে বললেন, কাজটা তুমি ভালো করেনি। যাক, যা করেছ সে ব্যাপারে কিছু বললে তো আর কোনো লাভ হবে না। এখন বল, রিয়াজুল এসে তার বাবার সম্পত্তি চাচ্ছে, তার কি করবে?
ছেলে হিসাবে রিয়াজুল মেজ ভাইয়ের সব সম্পত্তির হকদার। তাকে তার বাবার সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়াই তো উচিত।
সে কিন্তু গত পঁচিশ বছরের তার বাবার সম্পত্তির ফসলের ভাগও চাচ্ছে।
চাইলে দিতে হবে।
এত বছরের ফসলের দাম কত হবে ভেবে দেখেছ? তা ছাড়া সব বছর তো সমান ফসল। হয়নি। কি হিসাবে দেব?
আমি প্রতি বছর মেজ ভাইয়ের জমির ফসল আলাদা হিসাব করে বিক্রি করে ব্যাংকে জমা রেখেছিলাম। রিয়াজুল আসার পর তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি।
তোমার ছেলে মেয়ে নেই, ছোট সংসার, তাই পেরেছ। কিন্তু আমার তো বিরাট সংসার। সব খরচ করে ফেলেছি। কিভাবে অত টাকা এখন দেব?
সামসুদ্দিন জানে টাকা না দেওয়ার এটা একটা অসিলা। বললেন, সেটা আপনার ব্যাপার। যা ভালো বুঝবেন করবেন। তবে আমার মনে হয়, আপনি যতটা সম্ভব দিয়ে রিয়াজুলকে মানিয়ে নিতে পারেন। ও এলেমদার ছেলে। বড়দেরকে খুব সম্মান করে।
আমিও তাই ভেবেছি। আর একটা কথা, সে জমির রেকর্ডেও নাম লেখাতে চায়। আমি বলেছি তোমার বাবার সম্পত্তি তুমি পাবে। রেকর্ডে নাম লেখালে ভবিষ্যতে অসুবিধা হবে। কিন্তু সে আমার কথা মানতে রাজি নয়। তুমি ওকে বুঝিয়ে বললে হয়তো শুনবে।
রেকর্ডে ওর নাম লেখানোই তো উচিত। আপনি নিষেধ করছেন কেন? আর ভবিষ্যতে অসুবিধাই বা হবে কেন? বরং সুবিধাই হবে।
নূরুদ্দিন এবার রাগত স্বরে বললেন, তা হলে তুমিই রিয়াজুলকে আনিয়ে এই যুক্তি দিয়েছ? আর তানজিলাকেও আনিয়েছ?
যা কর্তব্য তাই করেছি। আমি চাই যে যা পায়, তাকে তা দিয়ে দিতে।
আমিও দেখে নেব কর্তব্য কতটা করতে পার। আর রিয়াজুল কী করে রেকর্ড করায় দেখব। এখন শোন, তানজিলাও সম্পত্তি চাচ্ছে। সে ব্যাপারে কি করবে?
তারটাও তাকে দিয়ে দিতে হবে।
ফসলি জমি না হয় দেওয়া যাবে, কিন্তু বাস্তু, পুকুর, ডোবা, আগান-বাগান ও গাছপালার অংশ কিভাবে দেবে?
সে সব ব্যাপারে তানজিলার সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তাকে সন্তুষ্ট করে যা করার করতে হবে। আর সে যদি সব জায়গা থেকে দাবি করে, তা হলে তাই দিতে হবে।
ঠিক আছে তুমি এখন যাও। আর শোন, ওদেরকে নিয়ে বেশি নাচানাচি করো না।
নাচানাচি বলতে আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন জানি না। তবে যার যা অংশ, তা দিয়ে দিতে চাই। কারণ আল্লাহর কাছে একদিন এজন্যে জবাবদিহি করতে হবে। তারপর সালাম বিনিময় করে সামসুদ্দিন সেখান থেকে চলে এলেন।
ঘরে এসে বড় ভাইয়ের সঙ্গে যা কিছু কথাবার্তা হয়েছে সবাইকে বললেন।
রিয়াজুল বলল, কিছুক্ষণ আগে আপনার কাছে মনোয়ার নামে একজন লোক এসেছিলেন। আপনাকে দেখা করতে বলে গেলেন। তারপর জিজ্ঞেস করল, লোকটা কে ছোট চাচা?
মনোয়ার তোমার মোসারেফ চাচার চাচাতো ভাই। গরিব হলে কি হবে, খুব ভালো লোক। তোমার আব্বার সঙ্গে খাতির ছিল। ওকেই সেটেলমেন্ট অফিসের খোঁজ খবর রাখতে বলেছি। হয়তো কিছু খবর দিতে এসেছিল। যাই দেখা করে আসি।
রিয়াজুল বলল, আমি গেলে কোনো অসুবিধা আছে?
অসুবিধা আবার কিসের, চল যাই। বলে রওয়ানা দিলেন।
মনোয়ার হোসেনের ঘরের কাছে গিয়ে সামসুদ্দিন মিয়া তার নাম ধরে ডেকে বললেন, ঘরে আছ নাকি?
মনোয়ার হোসেন ঘরে ছিল। বেরিয়ে এসে সালাম দিয়ে রিয়াজুলের দিকে তাকিয়ে বললেন, একে তো চিনতে পারছি না?
সাসমুদ্দিন মিয়া বললেন, ভালো করে দেখো দেখি, চিনতে পার কিনা।
মনোয়ার হোসেন কয়েক সেকেন্ড রিয়াজুলের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললেন, মেজ মিয়া ভাইয়ের সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে।
হ্যাঁ তুমি ঠিকই ধরেছ। ও মেজ ভাইয়ের ছেলে রিয়াজুল। ওর কথাই তো তোমাকে কয়েকদিন আগে বলেছি।
মনোয়ার হোসেন বললেন, আসুন ঘরে এসে বসুন কথা আছে। তারপর তাদের নিয়ে ঘরের বারান্দায় খেজুর পাটি পেতে বসতে দিয়ে নিজেও বসলেন।
সামসুদ্দিন মিয়া বসে বললেন, এবার বল, কি বলবে।
মনোয়ার হোসেন বললেন, আজ সেটেলমেন্ট অফিসে গিয়েছিলাম, কাল আপনাদের জমি রেকর্ড হবে। তারপর কিভাবে কি করতে হবে সামসুদ্দিন মিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে রিয়াজুলকে বুঝিয়ে দিল।
.
সেটেলমেন্ট অফিস পাশের গ্রাম সোনাপুরে বসেছে। এই গ্রামেই চেয়ারম্যান আলি আসগরের বাড়ি। পরের দিন বেলা দশটার দিকে রিয়াজুল কি করতে হবে রফিককে বুঝিয়ে বলে সেটেলমেন্ট অফিসে গেল।
অফিস রুমটা বেশ বড়। লোক গিজগিজ করছে। রিয়াজুল রফিককে নিয়ে পিছনের দিকে দাঁড়াল। হাকিম সাহেব যখন দাগ ও খতিয়ান নাম্বার বলে অংশীদারের নাম জানতে চাইলেন তখন নূরুদ্দিন মিয়া নিজের নাম ও ছোট ভাই সামসুদ্দিন মিয়ার নাম বললেন।
হাকিম সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, আপনার আর কোনো ভাই বা বোন নেই?
নূরুদ্দিন মিয়া বললেন, না।
ঠিক তখনই রিয়াজুল বলল, জ্বি হুজুর আছে।
রিয়াজুলের কথা শুনে লোকজনের মধ্যে গুঞ্জন উঠল।