রিয়াজুল বলল, ওটা আপনি নিয়ে যান। গ্রামে আসব বলে আম্মা তিন ব্যাটারীর একটা টর্চ লাইট কিনে দিয়েছেন। দাঁড়ান ব্যাগে আছে বার করছি।
খায়রুন্নেসা বিছানা ঝেড়ে মশারী খাটিয়ে স্বামীকে নিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, কোনো অসুবিধা হলে তোমার চাচাকে ডেক।
পরের দিন সালে নাস্তা খেয়ে সামসুদ্দিন মিয়া রিয়াজুলকে সাথে করে বড় ভাইয়ের কাছে গেলেন।
নূরুদ্দিন মিয়া তখন একাকী সদরে বসে ছিলেন। সামসুদ্দিন সালাম দিয়ে বললেন, কাল মসজিদে দেখলাম না, শরীর কি ভালো নেই?
নূরুদ্দিন মিয়া সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, বাতের ব্যাথাটা বেড়েছে। তাই যেতে পারিনি। তারপর রিয়াজুলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কে ছেলেটা? চিনতে পারছি না তো।
সামসুদ্দিন মিয়া বললেন, ও মেজ ভাইয়ের ছেলে রিয়াজুল। ঢাকা থেকে গতকাল বিকেলের দিকে এসেছে।
রিয়াজুল বুঝতে পারল, ইনিই বড় চাচা। সালাম দিয়ে কদমবুসি করে বলল, কয়েকদিন আগে পর্যন্ত আমার পরিচয় জানতাম না। জানার পর আপনাদের দোয়া নিতে এসেছি।
নূরুদ্দিন মিয়া সালামের উত্তর দিয়ে অবাক হয়ে বেশ কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
সামসুদ্দিন মিয়া বললেন, রিয়াজুল মেজ ভাইয়ের মতো দেখতে হয়েছে, তাই না বড় ভাই?
নূরুদ্দিন মিয়া বললেন, হ্যাঁ তাই তো দেখছি। তারপর বসতে বলে একজন কাজের মেয়েকে ডেকে চা-নাস্তা দিতে বললেন।
রিয়াজুল বলল, এক্ষুণি নাস্তা খেয়ে আসছি। শুধু চা দিতে বলুন।
নূরুদ্দিন মিয়া কাজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, তিন কাপ চা নিয়ে আয়। তারপর রিয়াজুলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, লেখাপড়া কতদূর করেছ?
আপনাদের দোয়ায় এম.এ. পাশ করেছি।
চাকরি বাকরি কিছু করছ?
চেষ্টা করছি বাকি আল্লাহর মর্জি।
তা বেড়াতে এসেছ বুঝি?
জ্বি।
কতদিন থাকবে?
আল্লাহ যতদিন এখানে রেযেক রেখেছেন।
ভালো, আমার এখানেও কয়েকদিন থেক।
জ্বি থাকব।
এমন সময় কাজের মেয়ে চা নিয়ে এলে, খেয়ে সামসুদ্দিন মিয়া ও রিয়াজুল সালাম বিনিময় করে সেখান থেকে বেরিয়ে এল।
রাস্তায় এসে রিয়াজুল বলল, আপনি যান, আমি গ্রামটা একটু ঘুরে দেখি।
সামসুদ্দিন মিয়া বললেন, রোদে বেশি ঘুরো না, তাড়াতাড়ি ফিরো।
জ্বি আচ্ছা বলে রিয়াজুল হাঁটতে হাঁটতে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে এক সময় আসমাদের ঘরের কাছে এসে পুকুর-ঘাটে কর্মরত একটা লাবণ্যময়ী তরুনীকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল। আধ-ময়লা আটপৌরে শাড়ির আঁচলে ঘোমটা থাকা সত্বেও তরুণীর মুখের লাবণ্য রিয়াজুলের মন কেড়ে নিল। দুধে-আলতা মেশান আপেলের মতো নিটোল গাল, পিঠের উগর মেঘবরণ চুলের বৃহৎ খোঁপা, সর্বোপরি নিখুঁত দেহ সৌষ্ঠব তার মনকে এত মুগ্ধ কল যে, দীলে দীলে আল্লাহে জানাতে বাধ্য হল, বেহেস্তের হুর-সম তোমার এই বান্দিকে আমার জীবন সাথি করো। হঠাৎ তার মনে হল, আসমার মুখের সঙ্গে যেন এই তরুণীর মিল রয়েছে। গলা খাকারী দিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি কী আসমার বোন?
সালেহা একমনে ছাই দিয়ে থালা-বাসন মাজতেছিল। হঠাৎ ঘাটের উপর থেকে কেউ বুবুর নাম ধরে তার কথা জিজ্ঞেস করতে চমকে উঠল। তারপর সেদিকে চেয়ে একটা অচেনা সুন্দর যুবককে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে নিল।
রিয়াজুল বলল, কি হল? কিছু বলছ না কেন?
সালেহা মুখ নিচু করেই বলল, কে আপনি?
আমাকে তুমি চিনবে না, যা জিজ্ঞেস করলাম উত্তর দাও।
জ্বি, আপনার অনুমান ঠিক।
তোমার নাম কি?
সালেহা আরো লজ্জা পেয়ে চুপ করে রইল।
রিয়াজুল বুঝতে পেরে বলল, নাম বলতে লজ্জা পাওয়া উচিত নয়।
সালেহা।
বাহ, খুব সুন্দর নাম তো? নামের অর্থ জান?
সালেহা মাথা নাড়াল।
সালেহা অর্থ ধার্মিকা। তুমি নিশ্চয় ধর্মের আইন মেনে চল?
যতটুকু জানি ততটুকু মেনে চলি।
গুড, কোন ক্লাশে পড়?
সালেহা উত্তর না দিয়ে চুপ করে থালা-বাসন মাজতে লাগল।
রিয়াজুল ভাবল, হয়তো পড়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাই প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, তোমার আপা ঘরে আছে?
জ্বি আছে।
তুমি হাতের কাজ সেরে নাও, আমি অপেক্ষা করছি। কাল আসমার মুখে তোমার আব্বার কথা শুনেছি। তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
আপনি কোথা থেকে এসেছেন?
আমি মিয়া বাড়ির ছেলে। ঢাকায় থাকি। কাল এসেছি।
বুবুকে চিনলেন কি করে? কা
ল আসার সময় পরিচয় হয়েছে।
ঠিক আছে একটু অপেক্ষা করুন। তারপর থালা-বাসন ধুয়ে উপরে এসে আপাকে ডেকে দিচ্ছি বলে চলে গেল।
সালেহা ঘরে এসে আসমাকে বলল, মিয়া বাড়ির একটা লোক তুমি ঘরে আছ কিনা জিজ্ঞেস করে বললেন, আব্বার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।
আসমা গতকাল ঘরে এসে যখন আব্বাকে চেয়ারম্যানের ছেলের কথা বলল, তখন মোসারেফ হোসেন প্রমে রেগে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারেননি। পরে মিয়া বাড়ির ছেলে তাকে উদ্ধার করেছে জেনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে ভিজে গলায় বললেন, আমার এই অবস্থা না হলে চেয়ারম্যানের ছেলে বিচার করে ছাড়তাম। আল্লাহ মিয়া বাড়ির ছেলেটার ভালো করুন। তার নাম জানিস?
আসমা বলল, না। তবে চেয়ারম্যান তার বাবার নাম জিজ্ঞেস করতে বললেন, সালাউদ্দিন মিয়া।
মোসারেফ হোসেন অবাক হয়ে বললেন, কি নাম বললি মা?
আব্বাকে অবাক হতে দেখে আসমা বলল, তুমি ওঁকে চেন নাকি? আমি তো মিয়া বাড়ির সবাইকে চিনি। ওঁরা তো দু’ভাই।