রাগিব হাসান স্ত্রীর কথা শুনে রেগে গেলেন। রাগের সঙ্গে বললেন, ওর বিয়ের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। বাবা ও তুমি যা করার কর। আমাকে একটু বেরোতে হবে বলে সেখান থেকে চলে গেলেন।
.
আজ হিমুর বিয়ে। মেয়ে দেখা ও বিয়ের কথাবার্তার মধ্যে কোনো গোলমাল হল না। কিন্তু বিয়ের সময় কাজী সাহেব মেয়ের ও মেয়ের বাবার নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে আরমান চৌধুরী যখন মেয়ের নাম সুলতানা রিজিয়া, বাবার নাম মরহুম রাকিব হাসান ও জাহিদ হাসানের বাসার ঠিকানা বলে জাহিদ হাসানকে বললেন, দেনমোহর বাবদ আপনার বাড়ির অর্ধেক অংশ আমার নাতনির নামে করে দেয়ার দলিলটা দেন এবং জাহিদ হাসান দলিলটা দিলেন তখন রাগিব হাসান যতটা না অবাক হলেন তার চেয়ে অনেক বেশি রেগে গেলেন। রাগের সঙ্গে জাহিদ হাসানের দিকে তাকিয়ে বললেন, এসব কি শুনছি ও দেখছি বাবা?
জাহিদ হাসান বললেন, যা শুনছ ও দেখছ সব সত্য। এই সুলতানা রিজিয়াই তোমার ছোট ভাই রাকিব হাসানের সন্তান। দৈবচক্রে বন্ধুর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে একেই দেখে হিমু পছন্দ করে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। অবশ্য তখন সে জানত না রিজিয়া তার ছোট চাচার মেয়ে। পরে তার বংশ পরিচয় খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারে। যখন দু’বছরের রিজিয়াকে তার নানা ও রাকিব হাসানের বন্ধু শিহাব আমাদের কাছে দিতে এসেছিল তখন আমরা আভিজাত্যের অহঙ্কারে এতই অন্ধ ছিলাম যে, তাদের কথা সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহ আমাদের অহঙ্কার চূর্ণ করে সেই রিজিয়াকে সুলতানা করে অর্থাৎ সম্রাজ্ঞী করে আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থার করেছেন। তারপর শিহাবকে ডেকে আনার জন্য একজনকে বললেন। শিহাব আসার পর আবার ছেলেকে বললেন, দেখো তো একে চিনতে পার কি না?
শিহাব বন্ধু হিসাবে অনেকবার রাকিবদের বাসায় গেছেন। সেই সময় তাকে রাগিব হাসান দেখেছেন। তাই দাড়ি ও টুপিওয়ালা শিহাবকে চিনতে পারলেন। বললেন, হ্যাঁ চিনতে পারছি।
জাহিদ হাসান বললেন, আমরা আমাদের বংশের সন্তানকে ফিরিয়ে দিলেও এই শিহাবই বন্ধুর সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করেছে। আবার এত টাকা-পয়সা খরচ করে বিয়েও দিচ্ছে। আর তুমি অর্থের লোভে বন্ধুর গোল্লায় যাওয়া মেয়েকে ঘরের বৌ করতে চেয়েছিলে?
রাগিব হাসান নিজের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জায় ও অপমানে মুখ নিচু করে নিলেন।
তাই দেখে শিহাব বললেন, চাচাজান, সবার সামনে ভাইয়াকে এসব কথা বলা ঠিক হয় নি আপনার। বাসায় গিয়ে বলতে পারতেন।
জাহিদ হাসান চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললেন, তা আমিও জানি। তবু কেন বললাম, তা যাদের বোঝার ক্ষমতা আছে তারা বুঝতে পেরেছেন। আর যারা বুঝতে পারেন নি, তাদেরকে শুধু এতটুকু বলছি, আমারও তখন আভিজাত্যের অহঙ্কার ছিল। আর অহঙ্কার খুব শক্ত গুনাহ। যার অহঙ্কার থাকবে, একদিন না একদিন আল্লাহ তার অহঙ্কার চূর্ণ করে দেবেন। যেমন আজ আমাদের চূর্ণ করে দিলেন। তারপর রাগিব হাসানকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি আগেই শিহাবের কাছে মাফ চেয়ে নিয়েছি। রিজিয়ার নানা বেঁচে থাকলে তার কাছেও মাফ চেয়ে নিতাম। তুমিও শিহাবের কাছে মাফ চেয়ে নাও।
রাগিব হাসান অনুতপ্ত হয়ে এতক্ষণ মুখ নিচু করে চোখের পানি ফেলছিলেন। বাবার কথা শুনে শিহাবকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমাকে মাফ করে দে ভাই।
শিহাব বললেন, আপনি আমার বড় ভাই। ছোট ভাইয়ের কাছে মাফ চেয়ে নিজেকে ছোট করবেন না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাফ করুন। তিনি আজ আমাদের সবাইকে যে এই শুভ মজলিশে মিলিত করিয়েছেন এবং আমাদের ভুল ভাঙ্গিয়ে দিয়েছেন, সেজন্য তার পাক দরবারে জানাচ্ছি শতকোটি শুকরিয়া। আর তার পেয়ারা হাবিব (সঃ)-এর ওপর হাজার হাজার দরুদ ও সালাম পেশ করছি।
জাহিদ হাসান কাজি সাহেবকে বললেন, এবার বিয়ে পড়িয়ে দিন।