সাক্ষাৎ তো প্রায় রোজই হচ্ছে।
যাতে ভুলে না যাও, তাই রিমাইন্ড দিলাম।
ঠিক আছে, ভুলব না, এবার রাখি, সাক্ষাতে কথা হবে বলে হিমু সালাম বিনিময় করে লাইন কেটে দিল।
.
১১.
রাগিব হাসান কানাডা থেকে ফিরে আসার পর জাহিদ হাসান একদিন ছেলে ও বৌমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হিমুর ব্যাপারে কি চিন্তা-ভাবনা করলে?
রাগিব হাসান বললেন, ওকে ফরেনে পাঠাতে চাই। কিন্তু ও তো রাজি হচ্ছে না। বলছে চেম্বার করে দাও প্র্যাকটিস করব।
ফরেনের ডিগ্রি না থাকলে আজকাল সাধারণ মানুষরাও শুধু। এম.বি.বি.এস. ডাক্তারের কোনো দাম দেয় না। ওকে সে কথা বল নি?
বলেছি। শুনে বলল, আমি টাকা রোজগার করার জন্য ডাক্তার হই নি। সাধারণ ও গরিব মানুষেরা যাতে সহজে ও অল্প খরচে চিকিৎসা করতে পারে, সেজন্য ডাক্তার হয়েছি।
ওর উদ্দেশ্য মহৎ। তাই বলে উচ্চ ডিগ্রি নিতে ফরেনে যাবে না এটা ঠিক বলে নি। ঠিক আছে, আমি ওকে বোঝাব। আর শোন, আমি ওর জন্য ধনী ও সম্ভ্রান্ত ঘরের খুব ভালো একটা মেয়েকে অনেক দিন থেকে পছন্দ করে রেখেছি। মেয়েটি এ বছর ডিগ্রি পরীক্ষা দেবে। মা-বাবা নেই। নানা-নানি মানুষ করেছে। মেয়ের নানা, আমার বন্ধু। মেয়ে দেখতে খুব সুন্দরী বলে অনেক সম্বন্ধ আসছে। সে কথা জানিয়ে আমাকে খবর দিয়েছিল। আমি একদিন গিয়ে বলেছি, হিমু ফরেন থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে আসুক, আর আপনার নাতনি ততদিন মাস্টার্স কমপ্লিট করুক। উনি রাজি হলেন না। বললেন, আজকাল সমাজের অবস্থা ভালো না। বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে ছেলে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মেয়ের মুখে এসিড মারে। মেয়েকে হাইজ্যাক করে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে মেরে ফেলে। তাই এ বছরই আমি নাতনির বিয়ে দিতে চাই। আরো বললেন, বিয়ের পর নাতজামাইকে ফরেনে পাঠাবেন। বিয়ের সময় প্রচুর সোনা-দানা দেবেন এবং ফরেন থেকে ফিরে আসার পর চেম্বার নয়, একটা ক্লিনিকও করে দেবেন। এখন তোমরা কি বল?
রাগিব হাসান ও সাবিহা বেগম তাদের ইচ্ছার কথা বলতে না পেরে চুপ করে রইলেন।
জাহিদ হাসান ছেলে ও বৌমার ইচ্ছার কথা হিমুর কাছে শুনেছেন। তবু বললেন, তোমরা কিছু বলছ না কেন?
স্বামী বলার আগে সাবিহা বেগম বললেন, আপনার ছেলে বন্ধুকে কথা দিয়েছেন, তার একমাত্র মেয়েকে এ বাড়ির বৌ করে আনবেন।
হিমু কি সেই মেয়েকে দেখেছে?
জি।
সে কি রাজি আছে?
হা-না কিছু বলতে না পেরে সাবিহা বেগম চুপ করে রইলেন।
কি হল? রাজি আছে কি না বলছ না কেন?
ধনী লোকের একমাত্র সন্তান বলে মেয়েটি একটু আধুনিকা ও আদুরে। তাই হিমু একটু অমত করেছে। আমি বলেছি, মেয়েরা বাবার বাড়িতে যাই থাকুক না কেন, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে এসে বদলে যায়। এ কথা শুনে হিমু কি বলল?
ঠিক রাজি হয় নি। তবে আমি তাকে বুঝিয়ে রাজি করাব। আপনিও একটু বোঝাবেন।
স্ত্রী থেমে যেতে রাগিব হাসান বললেন, হ্যাঁ বাবা, আপনি বোঝালে হিমু করতে পারবে না।
জাহিদ হাসান বললেন, যেদিন তোমরা ওকে মেয়ে দেখাবার জন্য বন্ধুর বাসায় নিয়ে গিয়েছিলে তার পরের দিন কথাটা আমাকে জানিয়ে বলেছে, মেয়েটি দেখতে ভালো হলে কি হবে, ভীষণ আল্টা মডার্ন। অশ্লীল পোশাক পরে। তার অনেক বয়ফ্রেন্ড। তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করে। লজ্জা-শরমের বালাই নেই। মা-বাবা যতই বলুক, আমি ঐ মেয়েকে কিছুতেই বিয়ে করব না।
রাগিব হাসান ছেলের ওপর খুব রেগে গেলেন। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে রাগ সামলে নিয়ে বললেন, আজকাল হাই সোসাইটির ছেলেমেয়েদের অনেক গার্লফ্রেন্ড ও বয়ফ্রেন্ড থাকে। আর আজকাল কটা ছেলেমেয়ে শালীনতা বজায় রেখে পোশাক পরে? তারা এটাকে সভ্য যুগের ফ্যাশন মনে করে। আসলে ওতো কোনো এক পাড়াগাঁয়ের গরিব ঘরের এতিম মেয়েকে পছন্দ করে। সেইজন্যে অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছে না।
সে কথা আমাকেও বলেছে। তবে সে মেয়ের খোঁজ আজও পাই নি। কিছুদিন আগে নাকি আড়ং-এ সেই মেয়েকে দেখেছিল, কিন্তু আলাপ করার আগেই সঙ্গের মেয়েটির সঙ্গে গাড়িতে উঠে চলে যায়। হিমু গাড়ির নাম্বার মনে রাখে। তারপর বাসায় এসে আমাকে মেয়েটির সব কথা বলে গাড়ির নাম্বার একটা কাগজে লিখে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, কিভাবে এই নাম্বারের গাড়ির মালিকের ঠিাকানা পাব। আমি নাম্বার দেখে বললাম, এটা তো আমার বন্ধুর গাড়ির নাম্বার। তার তো দু’টো নাতনি। একটা মেয়ের ঘরের অন্যটা ছেলের ঘরের। হিমু বিশ্বাস করল না। একদিন তাকে নিয়ে বন্ধুর বাসায় গিয়ে দু’জনকেই দেখালাম। হিমু যে মেয়েটির কথা বলল, সে হল বন্ধুর মেয়ের ঘরের নাতনি। তার নাম সুলতানা। ফেরার পথে আমার ইচ্ছার কথা জানিয়ে বললাম, পাড়াগাঁয়ের যে মেয়েকে তুমি পছন্দ কর, এতদিনে তার হয়তো বিয়ে-শাদি হয়ে ছেলেমেয়ে হয়ে গেছে। সুলতানা যখন তার মতো দেখতে ওকেই বিয়ে কর। তারপর বাসায় এসে অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। এখন তোমাদের মতামত পেলে তাড়াতাড়ি ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করব। দেরি করলে হিমুর মত পাল্টে যেতে পারে। তারপর সাবিহা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন, বৌমা, তুমিও তো সেদিন আড়ং-এ মেয়েটাকে দেখেছ?
সাবিহা বেগম মেয়ের নানার লেনদেনের কথা শুনে সুলতানাকেই বৌ করতে রাজি হয়ে গেলেন। আনন্দিত স্বরে বললেন, জি বাবা দেখেছি। আমিও সেদিন হিমুকে বলেছিলাম, অনেক সময় একই রকমের ছেলে বা মেয়ে দেখতে পাওয়া যায়। এখন হিমু যদি আপনার বন্ধুর নাতনিকে বিয়ে করতে রাজি হয়, তা হলে আমাদের আপত্তি করার কিছু নেই। তারপর স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি কি বল?