আরিফা বেগম বললেন, না যাই নি। অফিসের ম্যানেজার তোর মামার কাছে এসেছিল। তার সঙ্গে ড্রইংরুমে কথা বলছে। তুই যেন আবার ওখানে যাস না।
রিজিয়া মামির চোখে-মুখে খুশির আমেজ দেখতে পেল। সেই সাথে ড্রইংরুমে যাওয়ার নিষেধের মধ্যে কিছু যেন ইঙ্গিত রয়েছে বুঝতে পারল। হঠাৎ তার মনে হল, তা হলে কি ম্যানেজারকে ফারিহার জন্য সিলেক্ট করেছেন। ম্যানেজারকে দেখার ইচ্ছা দমন করতে পারল না। দরজার আড়াল থেকে দেখলে মামিমা দেখে ফেলতে পারেন ভেবে বারান্দার জানালার কাছে গিয়ে পর্দা অল্প একটু ফাঁক করে ফাহিমকে দেখে ভাবল, মামা এই ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে দেয়ার জন্য পছন্দ করেছিলেন। তারপর এতক্ষণ তাদের আলাপ শুনছিল। ফাহিম চলে যাওয়ার পর ভেতরে ঢুকে না জানার ভান করে জিজ্ঞেস করল, কে রে ছেলেটা? দেখতে শাহজাদার মতো।
তার কথা শুনে ফারিহা অবাক হলেও তা প্রকাশ না করে বলল, বাবার অফিসের ম্যানেজার। বাবা ইনাকেই তোর জন্য পছন্দ করেছিল। সত্যি, ছেলেটা খুব সুন্দর।
রিজিয়া হেসে উঠে বলল, শুধু কি সুন্দর? দারুণ হ্যাঁন্ডসাম ও দারুণ বুদ্ধিমান।
ফারিহা এবার অবাক হয়ে বলল, তুই এসব জানলি কি করে?
কারো চোখ-মুখ দেখলেই বোঝা যায় বোকা না বুদ্ধিমান। আর কথাবার্তা শুনলে জানা যায়, শুধু বুদ্ধিমান না দারুণ বুদ্ধিমান। তোর সঙ্গে মিলবে ভালো। তুই সুন্দরী, উনিও সুন্দর, তুই যেমন বুদ্ধিমতী, উনিও তেমনি বুদ্ধিমান, তুই সুখী শাহজাদী, উনি বুদ্ধিমান বাদশাহ। ওনাকে যদি তোর পছন্দ হয় বল, মামা-মামিকে শুভস্য শীঘ্রম করতে বলব।
তুই তা হলে আড়াল থেকে সব কিছু শুনেছিস।
শুধু শুনেছি নয়, তোদের কথা বলার এ্যাকটিংও দেখেছি।
তারপর রিজিয়া তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, সত্যি বলছি, তোদের দু’জনকে যা মানাবে না…
তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে তার পিঠে কয়েকটা আদরের কিল মেরে বলল, এসব আজেবাজে কথা বলছিস কেন?
এটা আজেবাজে কথা হল বুঝি? কিল মারিস আর যাই করিস তোর চোখ-মুখ দেখে ও কথা শুনেই বুঝতে পারছি ম্যানেজারকে তোর পছন্দ হয়েছে। তুই আমার জন্য তোর মা-বাবার কাছে ওকালতি করেছিস। এবার আমি তোর জন্য মামা-মামির কাছে ওকালতি করব। দেখিস, যেমন করে হোক ওনাদের রাজি করাবই ইনশাআল্লাহ।
তুই জড়িয়ে রয়েছিস কেন? ছেড়ে দে, গোসল করব। তুই তো আগেই গোসল করে ফেলেছিস।
রিজিয়া ছেড়ে দিয়ে বলল, পছন্দ হয়েছে কি না বললি না যে?
ফারিহা বলল, আজই প্রথম দেখলাম ও আলাপ করলাম, এখনই কিছু বলা যাবে না বলে সেখান থেকে চলে গেল।
অনুমানটা ঠিক কিনা জানার জন্য রিজিয়া মামিমার কাছে গিয়ে বলল, একটা কথা বলব কিছু মনে করবেন না বলুন?
আরিফা বেগম বললেন, ওমা, মেয়ের কথা শোন, তোর কথায় কিছু মনে করতে যাব কেন? বল কি বলবি?
আপনি ড্রইংরুমে যেতে নিষেধ করেছিলেন বলে আড়াল থেকে ম্যানেজারকে দেখেছি। খুব সুন্দর ছেলে, বলে লজ্জায় মুখ নিচু করে নিল।
আরিফা বেগম মৃদু হেসে বললেন, হ্যাঁ, খুব সুন্দর ছেলে। তোর মামা ছেলেটার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাই তোর জন্য পছন্দ করেছিল। আর কিছু বলবি?
রিজিয়া সাহস করে বলে ফেলল, এখন ফারিহার জন্য পছন্দ করলে হয় না মামিমা?
আরিফা বেগম তার কথা শুনে অবাক হলেও খুশি হলেন। পছন্দ করলে তুই খুশি হবি?
রিজিয়া মামিমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, এত খুশি হব, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।
আরিফা বেগম তার দু’গালে চুমো খেয়ে বললেন, তোর ও হিমুর ব্যাপারটা জানার পর আমি ও তোর মামা ম্যানেজারকে ফারিহার জন্য সিলেক্ট করেছি। তাদের বিয়ের পরপরই ওদের বিয়ে দেব।
আনন্দে টগবগিয়ে উঠে রিজিয়া আবার মামিমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, সত্যি বলছেন মামিমা?
আরিফা বেগম হাসতে হাসতে বললেন, হ্যাঁরে সত্যি।তারপর বললেন, মেয়ের কাণ্ড দেখ, ছাড় ছাড়, তোর মামাকে খেতে দেব।
রিজিয়া মামিমাকে ছেড়ে দিয়ে ছুটে রুমে এসে দেখল, ফারিহা নেই। বুঝতে পারল, গোসল করতে গেছে। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। বারান্দা থেকে ফোনের সেটটা নিয়ে এসে হিমুকে ফোন করল।
হিমু রুমেই ছিল। ফোন ধরে সালাম দিয়ে বলল, কে বলছেন?
রিজিয়া সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করল, চিনতে পারছ, না নাম বলতে হবে?
কি ব্যাপার? এ সময়ে ফোন করলে যে?
একটা দারুণ খবর আছে।
দারুণ খবরের পালা তো শেষ। আর তো থাকার কথা না?
আমাদের শেষ হলেও ফারিহার বাকি আছে না?
ও হ্যাঁ, তাই তো। ফারিহা কি কারো প্রেমে পড়েছে?
রিজিয়া হেসে উঠে বলল, ঠিক প্রেমে পড়ে নি, পছন্দ করেছে। শুধু তাই নয়, মামা-মামি ঐ ছেলেটাকে সিলেক্ট করে ফেলেছেন এবং আমাদের বিয়ের পরপরই ওদেরও বিয়ে দেবেন।
খবরটা তুমি কার কাছে শুনেছ?
মামিমার কাছে।
তা ছেলেটাকে চেন নাকি?
হ্যাঁ, মামার অফিসের ম্যানেজার। আমার জন্য যাকে মামা পছন্দ করেছিলেন।
তাই নাকি? তা হলে তো খবরটা সত্যিই দারুণ। আচ্ছা সিলেক্টের ব্যাপারটা কি ফারিহা জানে?
না। এমনকি আমি যে জানি, তাও ফারিহা জানে না। তাই তো জানার পরপরই তোমাকে ফোন করলাম। শোন, তুমি তো ফারিহাকে খুব মূল্যবান কিছু দেবে বলেছিলে, এই দারুণ খবরটা তাকে দিলে কেমন হয়?
খুব ভালো কথা বলেছ। কি বলে যে তোমাকে ধন্যবাদ দেব?
থাক, ধন্যবাদ দিতে হবে না, তোমার সাক্ষাৎ পেলেই ধন্য হয়ে যাব।