আমি ফাহিম। সাহেব আমাকে আসতে বলেছেন। তারপর বলল, আমি কিন্তু আপনাকে সালাম দিয়েছি।
আরো লজ্জা পেয়ে ফারিহা মুখ নিচু করে সালামের উত্তর দিয়ে বলল, সরি, একটু অন্যমনস্ক ছিলাম, তাই শুনতে পাই নি।
আপনার পরিচয় দিলেন না তো?
সাহেবের মেয়ে বলতে গিয়ে সামলে নিয়ে বলল, আমি ফারিহা। আসুন আমার সঙ্গে। তারপর তাকে বাবার রুমে নিয়ে এসে বলল, বাবা, ম্যানেজার সাহেব এসেছেন।
ফাহিম ভেতরে ঢুকে সালাম দিল।
শিহাব সালামের উত্তর দিয়ে সোফায় বসতে বলে বললেন, ডাক্তার কয়েকদিন অফিসে যেতে নিষেধ করেছেন। তবে তোমার কোনো চিন্তা নেই। যখনই প্রয়োজন মনে করবে চলে আসবে।
ফারিহা চেকবই বের করে দাঁড়িয়েছিল। শিহাব তার হাত থেকে নেয়ার সময় ফাহিমকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার বড় মেয়ে ফারিহা, পরিচয় হয়েছে?
ফাহিম বলল, জি হয়েছে।
শিহাব চেক কেটে ফাহিমের হাতে দিয়ে বইটা ফারিহাকে দিয়ে ব্রিফকেসে রাখতে বললেন।
ফারিহা চেকবই ব্রিফকেসে রেখে বেরিয়ে এসে ফাহিমের কাছে ক্ষমা চাইবে বলে বারান্দায় অপেক্ষা করতে লাগল।
ফাহিম চেকটা পকেটে রেখে বলল, এবার তা হলে আসি স্যার?
শিহাব বললেন, যাবে তো নিশ্চয়, আর একটু বস। একটা কথা বলব। তোমাকে আর ভাড়া বাসা খুঁজতে হবে না। শান্তিনগরে আমার একটা বাড়ি আছে। সামনের মাসে দোতলার ভাড়াটিয়া চলে যাবেন। তুমি মাকে নিয়ে ঐ ফ্লাটে থাকবে। কোম্পানি তোমার বাসা ভাড়া বহন করবে।
ফাহিম মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলল, জি আচ্ছা। এবার অনুমতি দেন।
ঠিক আছে এস, বলে শিহাব মেয়ের নাম ধরে ডেকে বললেন, কোথায় গেলি রে মা, ফাহিমকে এক কাপ চাও দিলি না?
ফাহিম বলল, আমি খুব কম চা খাই। অফিস থেকে বেরোবার আগে খেয়েছি। এখন আর খাব না।
বারান্দা থেকে ফারিহা তাদের কথা শুনতে পাচ্ছিল। বাবা ডাকতে ততক্ষণে দরজার কাছে চলে এসেছে।
তাকে দেখে শিহাব বললেন, ফাহিম চা খাবে না বলছে। ফ্রিজ থেকে কোক দে। তারপর ফাহিমকে বললেন, তুমি ওর সঙ্গে যাও, কোক খেয়ে তারপর যাবে।
ফারিহা তাকে নিয়ে ড্রইংরুমে এসে বসতে বলে ভেতরে চলে গেল। একটু পরে এক গ্লাস কোক এনে তার হাতে দেয়ার সময় বলল, আপনি ফোন করেছিলেন জানতাম না। ফোনে আপনার সঙ্গে অবাঞ্ছিত ব্যবহার করে ফেলেছি। সেজন্য অত্যন্ত দুঃখিত। দয়া করে মাফ করে দিন।
ফাহিম বিসমিল্লাহ বলে গ্লাসে দু’তিনটে চুমুক দিয়ে মৃদু হেসে বলল, আমি আপনার বাবার অফিসের একজন কর্মচারী। সাহেবের ছেলে-মেয়েদের অনেক কিছু যে সহ্য করতে হয় তা জানি, তাই কিছু মনে করি নি।
আমি ওসব কথা শুনব না, বলুন মাফ করে দিয়েছেন?
ফাহিম আবার মৃদু হেসে বলল, তা হলে তো আপনার কথাটাই বলতে হয়, কাছাকাছি গজ ফিতে নেই, মাপ করব কি করে?
ফারিহা না হেসে পারল না। হাসতে হাসতে বলল, আপনি তো দারুণ ছেলে?
ফাহিম বলল, আমার তো মনে হচ্ছে, আপনি আমার থেকে আরো দারুণ।
প্রমাণ করুন।
পর্দানশীন হয়েও প্রথম আলাপের সময় যে মেয়ে এত ফ্রি, তিনি দারুণ নয় তো কি?
ফারিহা হাসি মুখেই বলল, তা হলে মাফ করছেন না কেন?
আপনার পুরো নাম অথবা আসল নাম বললে মাফ করতে পারি।
আমি দারুণ মেয়ে হলে আপনি দারুণ চালাক ছেলে।
কি জানি, হয়তো আপনার কথা ঠিক বলে ফাহিম খালি গ্লাস টেবিলের উপর রেখে দাঁড়িয়ে উঠে বলল, অনেক দেরি হয়ে গেল, এবার আসি।
ফারিহাও দাঁড়িয়ে উঠে বলল, মাফ করেছেন কি না বলবেন না?
বললাম না, পুরো অথবা আসল নাম…
তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে ফারিহা বলল, পুরো অথবা আসল নাম ফারিহা শাহানা।
নামের অর্থ জানেন?
জি, সুখী শাহজাদী। আপনার পুরো নাম অথবা আসল নাম বলুন।
ফাহিম মৃদু হেসে বলল, আমার পুরো অথবা আসল নাম ফাহিম শাহরিয়ার। অর্থ হল বুদ্ধিমান বাদশাহ।
ফারিহা শুধু হেসে উঠল, কোনো কথা বলল না।
হাসলেন কেন?
আমার পুরো নাম ও অর্থ শুনে আপনি যে কারণে হেসেছিলেন, ঐ একই কারণে আপনার পুরো নাম ও অর্থ শুনে হাসলাম। এবার আসুন, দেরি হয়ে যাচ্ছে বললেন না!
ফাহিম সালাম বিনিময় করে চলে গেল।
ফাহিমের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর শিহাব স্ত্রীকে তার আসার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ফারিহার সঙ্গে পরিচয় করবার জন্য ওকে নিয়ে আসব আসব করেও মনে থাকে না বলে আনা হয় নি। আজ যখন আসছে তখন পরিচয় করিয়ে দিতে হবে এবং ওরা যাতে নিরিবিলি আলাপ করতে পারে সে ব্যবস্থা তোমাকেই করতে হবে। কারণটা তো তুমি জান।
আরিফা বেগম বললেন, বেশ তো কি করতে হবে বল?
যা করার আমি করব। তুমি শুধু রিজিয়াকে কাজের অজুহাতে নিজের কাছে রাখবে।
ঠিক আছে, তাই হবে।
ফাহিম যখন ফোন করে রিজিয়া তখন বাথরুমে গোসল করছিল। তাই তার আসার কথা জানতে পারে নি।
গোসল করার পর স্বামীর কথামতো আরিফা বেগম তাকে রান্নাঘরে ডেকে পাঠিয়ে বললেন, আমার হাত দুটো ব্যথা করছে। ওষুধ খেয়েও কমে নি। তুই আজ রান্না কর, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।
রান্নার কাজ শেষ করতে অনেক সময় লাগল। তাই রিজিয়া ফাহিমের আসার কথা যেমন জানতে পারে নি, তেমনি ফাহিমও ফারিহার আলাপের কথাও জানতে পারল না। তবে তখনও ওদের আলাপ চলছিল।
রান্নার কাজ শেষ করে রুমে এসে ফারিহাকে দেখতে না পেয়ে মামিকে জিজ্ঞেস করল, ফারিহা কোথাও গেছে নাকি?