হ্যাঁ বলেছি।
সত্যি বলেছিস!
এতে আবার সত্যি-মিথ্যের কি হল? কথাটা বলার জন্যই তো গিয়েছিলাম।
শুনে স্যার কি বললেন?
আযীয মাস্টার যা কিছু বলেছেন রাকিব সে সব বলল।
তোর সাহসের বলিহারী। স্যার যা কড়া, মরে গেলেও তাকে ঐ কথা বলতে পারতাম না। প্রাইমারিতে পড়ার সময় অনেকবার স্যারের হাতে মার খেয়েছি। তা স্যারের কথা শুনে তুই কি বললি?
রাকিব যা বলেছিল বলল।
তুই শুধু সাহসী নয়, বুদ্ধিমানও। আমি হলে তো ছুট দিতাম। তা শেষমেশ স্যার কি বললেন?
কি আর বলবেন? বললেন, তুমি এখন যাও, শিহাবকে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলল।
আমার কিন্তু খুব ভয় করছে। আমাকে না একচোট নেন।
আরে তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেন? এখনও কি প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র নাকি যে, তোকে সত্যি সত্যি চাবকে পিঠের ছাল তুলে নেবেন?
আমি ঐ ভয়ের কথা বলি নি; বাবাকে না কথাটা জানিয়ে দেন, সেই ভয়ের কথা বলছি।
জানালে জানাবেন। তুই তো আর ছোট না যে, তোর বাবা তোকে পেটাবে?
তা পেটাবে না, তবু অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। তা হ্যাঁ রে, স্যার যদি রাজি হন, তা হলে এখনই বিয়ে করবি, না পরে এসে করবি?
এখনই করব।
ঝোঁকের মাথায় তাড়াতাড়ি কোনো কাজ করা কারোরই উচিত নয়। সব কিছু চিন্তা-ভাবনা করে ধীরে-সুস্থে করতে হয়।
দেখ, বড়দের মতো উপদেশ দিবি না। আমি যা করার ইচ্ছা করি তা তাড়াতাড়ি করেই থাকি। আজ পর্যন্ত কোনো ব্যাপারেই ফেল যেমন করি নি, তেমনি ফলাফলও খারাপ কিছু হয়নি।
তবু বলব, আজ সারাদিন ও রাত চিন্তা করে কাল সকালে জানাবি।
আমার চিন্তা করার কিছু নেই। তুই কাল সকালে স্যারের কাছে যাবি।
পরের দিন সকালে শিহাব আযীয মাস্টারের বাড়িতে গিয়ে সালাম বিনিময় করার পর বলল, আমাকে আসতে বলছিলেন স্যার?
আযীয মাস্টার বললেন, হ্যাঁ, বস। বসার পর বললেন, তোমার বন্ধুর প্রস্তাবের কথা তোমাকে নিশ্চয়ই আগেই জানিয়েছিল?
জি, জানিয়েছিল?
তার হয়ে তোমারই প্রস্তাব দেয়া উচিত ছিল।
আমি সে কথা ওকে বলেছিলাম; কিন্তু ও বলল, নিজেই দেবে।
ওদের ফ্যামিলির সব কিছু তুমি জান?
জি জানি। ওদের সব কিছু ভালো।
হ্যাঁ, ছেলেটার সঙ্গে কথা বলে তাই মনে হল। তবে কি জান বাবা, সাবেরার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সামনের শুক্রবার মানে আর চারদিন পর ওর বিয়ে। কাল বললে ছেলেটা বেশি মনে কষ্ট পেত, তাই বলি নি। তুমি ওকে কথাটা জানিয়ে দিও।
রাকিবের কথা শুনে শিহাব কাল থেকে খুব টেনশানে ছিল। স্যারের কথা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, ঠিক আছে স্যার, জানাব।
তুমি তো জান, আমরা অন্য জায়গা থেকে এসে হিন্দুদের মড়াচিরে বাস করছি বলে এই গ্রামের ও তোমাদের গ্রামের সমাজ আমাদেরকে মেনে নিলেও তারা আমাদের বিয়ে-শাদিতে দাওয়াত দেয় না। আমার বিয়ের সময় আব্বা দুই গ্রামের লোকজনকে দাওয়াত দিয়েছিলেন, কিন্তু গরিবরা দু’দশজন ছাড়া কেউ আসে নি। তবু এবারে সাবেরার বিয়েতে আমিও দাওয়াত দিয়েছি, জানি না সবাই আসবে কি না। কেউ আসুক আর না আসুক তোমার বন্ধুকে নিয়ে তুমি আসবে। অবশ্য তোমার বন্ধু যদি আরো কয়েকদিন থাকে। তুমি না এলে আজ তোমার কাছে যেতাম সাবেরার বিয়ের ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য। তুমি বাবা যদি কাল থেকে আমাকে একটু সাহায্য করতে, তা হলে বড় উপকার হত।
কি যে বলেন স্যার, নিশ্চয় আসব। বলেন তো আজ থেকেই আপনাকে সাহায্য করব। আর রাকিব যদি আরো কয়েকদিন থাকে, তা হলে তাকেও নিয়ে আসব।
শুনে বড় খুশি হলাম বাবা। আমার আর এমন কেউ নেই যে আমাকে সাহায্য করবে।
আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। প্রয়োজনে আজ থেকে আপনাকে সাহায্য করব।
আজ আর আসতে হবে না, কাল থেকে এসো।
তাই আসব বলে শিহাব দাঁড়িয়ে উঠে বলল, এবার আসি স্যার।
এমন সময় সাবেরা চা নিয়ে এসে শিহাবের সঙ্গে সালাম বিনিময় করে বলল, বসুন, চা খেয়ে তারপর যাবেন। কাল এসেই চলে গিয়েছিলেন।
শিহাব চা খেয়ে ঘরে ফিরে আসতে রাকিব জিজ্ঞেস করল, স্যার তোকে কি বললেন?
তোর না শোনাই ভালো। শুনলে মন খারাপ হয়ে যাবে।
ইয়ার্কি না করে বলে ফেল তো।
বললাম না, শুনলে তোর মন খারাপ হয়ে যাবে।
হোক মন খারাপ, তুই বল।
সাবেরার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সামনের শুক্রবারে বিয়ে।
রাকিব একদৃষ্টে তার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে বলল, ইয়ার্কি করছিস না তো? সত্যি করে বল না? স্যার কি বললেন?
বিশ্বাস কর, সত্যি কথাই বললাম।
বিশ্বাস হচ্ছে না।
কেন?
সত্যি হলে কালকেই স্যার আমাকে বলতেন।
উনি বলতে চেয়েছিলেন, তখনই বললে তুই মনে কষ্ট পাবি, তাই বলেন নি। আরো বললেন, তুই যদি কয়েকদিন থাকিস তা হলে কাল থেকে যেন আমার সঙ্গে সাবেরার বিয়ের ব্যাপারে সাহায্য করিস। স্যারের তো কেউ নেই। তাই আমাদেরকে কাল থেকে সব কিছু করার জন্য বললেন।
রাকিব অনেকক্ষণ চুপ করে রইল।
কি রে, চুপ করে আছিস কেন? কাল থেকে আমার সঙ্গে স্যারকে সাহায্য করবি না? না সাবেরাকে বিয়ে করতে পারলি না বলে বিয়ের আগেই ঢাকা চলে যাবি? কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও যখন রাকিব কিছু বলল না তখন আবার বলল, তোর মনের ব্যথা আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু কি করব বল, ভাগ্যের ওপর তো কারুর হাত নেই। এ কথা নিশ্চয় জানিস মানুষ ভাগ্যের হাতে বন্দি?