আরমান চৌধুরী বললেন, প্ল্যানটা আপনার ভালো। তবে একটু ফাঁক রয়ে গেছে। আমি সেই ফাঁকটা পূরণ করে দিতে চাই।
কি ফাঁক আছে বলুন।
সবার কাছে আমাকে আপনার বন্ধু বলে পরিচয় দেবেন। আর আপনার ছেলে-বৌ যখন লোভী তখন তাদেরকে বলবেন, মেয়ের নানা মা-বাবা হারা নাতনিকে বিয়ের সময় অনেক সোনা তো দেবেনই, নাতজামাইকেও প্রচুর টাকা-পয়সা দেবেন এবং বিয়ের পর তাকে ফরেনে পড়তে পাঠাবেন এবং ফরেন থেকে ফিরে আসার পর একটা ক্লিনিক করে দেবেন।
ফাঁকটা আপনি ঠিকই ধরেছেন, কিন্তু পূরণ করার জন্য যা বললেন, তা হয় না। হিমু আমার বড় ছেলের ঘরের নাতি, আর রিজিয়া ছোট ছেলের ঘরের নাতনি। সোনা-দানা যাই দেন না কেন, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য ব্যাপারে যেসব কথা বললেন, তা মেনে নিতে পারি না। ওটা আমিই করব। রিজিয়ার প্রতি আপনারা যা কিছু এতদিন করেছেন, সেটা আমারই করা কর্তব্য ছিল। তাই আপনাদের কাছে আমি চিরঋণী। এখন যদি এতটুকু না করি, তা হলে সেই ঋণের বোঝা আরো ভারি হয়ে যাবে।
আরমান চৌধুরী বললেন, বেশ, আপনার কথা মেনে নিলাম। আপনার ছেলে কানাডা থেকে ফিরে আসুক, তারপর প্ল্যান মতো কাজ করবেন।
.
১০.
শিহাব আজ দু’দিন হল অসুস্থতার জন্য অফিসে যান নি। দশটার সময় ফাহিম অফিস থেকে ফোন করল।
ফোনের কাছ থেকে ফারিহা রুমে যাচ্ছিল। রিং বাজতে শুনে ফোন ধরে সালাম দিয়ে বলল, কে বলছেন?
ফাহিম সালামের উত্তর দিয়ে বলল, আমি অফিসের ম্যানেজার। আপনি কে বলছেন?
ফারিহা ভাবল, বাবা যখন এই ম্যানেজারকে রিজিয়ার জন্য পছন্দ করেছিল তখন নিশ্চয় ছেলেটা ভালো। কতটা ভালো জানার জন্য তার সঙ্গে দুষ্টুমি করার খেয়াল চাপল। বলল, আমি কে জানতে চাচ্ছেন কেন? সাহেবকে চাইলেই তো ল্যাটা চুকে যেত।
তার কথা শুনে ফাহিমের মনে হল মেয়েটা ফাজিল। বলল, আপনি তো আচ্ছা মেয়ে, কে ফোন রিসিভ করল জানতে চাওয়া বুঝি অন্যায়?
আপনিও তো আচ্ছা ছেলে, মেয়েদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয়, সেই ভদ্রজ্ঞানটাও নেই আপনার!
ফাহিম খুব বিরক্ত হল। বলল, আপনার পরিচয় জানতে চেয়ে ভুল করেছি, মাফ করে দিন।
হাতের কাছে গজ ফিতে নেই, মাপ করব কি করে?
ফাহিম চিন্তা করল, মেয়েটার মাথার স্কু ঢিলে নাকি? মোলায়েম স্বরে বলল, প্লিজ, সাহেবকে একটু দিন না, জরুরি কথা আছে।
হ্যাঁ, এতক্ষণে ভদ্রলোকের মতো সরি, ভদ্রলোকের ছেলের মতো কথা বললেন। একটু অপেক্ষা করুন দিচ্ছি।
ফাহিম বুঝতে পারল মেয়েটি সাহেবের।
ফারিহা সেটটা নিয়ে বাবার ঘরে গিয়ে বলল, তোমার অফিসের ম্যানেজার ফোন করেছেন।
শিহাব ফোন ধরে বলল, কি খবর ফাহিম?
ফাহিম সালাম বিনিময় করে বলল, আপনি কেমন আছেন? আজও কি অফিসে আসবেন না?
না, অফিসে যেতে পারব না। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, এনি প্রবলেম?
না মানে, স্টাফদের আজ বেতনের দিন। তাই একাউন্টেন্ট বলছিলেন
তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে শিহাব বললেন, তাই তো, আমার সে কথা একদম মনে নেই। তুমি একটা স্কুটার নিয়ে চলে এস। আমি চেক সই করে দেব। তারপর লাইন কেটে দিয়ে মেয়েকে বললেন, এটা নিয়ে যা। আর শোন, কিছুক্ষণের মধ্যে ম্যানেজার আসবে। তুই দারোয়ানকে ম্যানেজারের আসার কথা বলে গেটের দিকে লক্ষ্য রাখবি। ম্যানেজার এলে আমার কাছে নিয়ে আসবি।
ফারিহা অবাক হয়ে বলল, তোমার বেডরুমে কেন? ড্রইংরুমে বসালেই তো হয়?
শিহাব মৃদু হেসে বললেন, আগের ম্যানেজার হলে ড্রইংরুমেই বসাতে বলতাম। কিন্তু ফাহিমকে বসানো যাবে না।
তোমার কথা ঠিক বুঝতে পারছি না। কত সম্মানীয় মেহমানকে ড্রইংরুমে বসান গেলে ওঁনাকে বসানো যাবে না কেন?
শিহাব মেয়ের কথায় বিরক্ত হলেন। কিন্তু তা প্রকাশ না করে বললেন, তুই তো খুব বাকপটু হয়ে উঠেছিস?
কোনো কিছু জানতে চাওয়া কি বাকপটুতা?
না তা নয়। তবে কি জানিস মা, বাবা অথবা মুরুব্বিদের কেউ কোনো হুকুম করলে তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করতে নেই। করলে বেয়াদবি করা হয়। আর বেয়াদবকে যেমন কেউ দেখতে পারে না, তেমনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) বেয়াদবকে পছন্দ করেন না। ফাহিমের ব্যাপারে এতটুকু জেনে রাখ, সে আমার শুধু প্রিয় নয়, ডান হাতও। এবার যা, যা বললাম কর।
ফারিহা সেটটা আগের জায়গায় রেখে দারোয়ানকে ম্যানেজারের আসার কথা জানাল। তারপর গেটের দিকের বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে চিন্তা করল, বাবার একজন প্রিয় ছেলের সঙ্গে দুষ্টুমি করা উচিত হয় নি। এলে মাফ চেয়ে নিতে হবে। আরো চিন্তা করল, ওঁর মধ্যে নিশ্চয় এমন কোনো গুণ আছে, যে জন্যে বাবার শুধু প্রিয় নয়, ডান হাতও। রিজিয়ার সঙ্গে বিয়ে হলে বাবা বোধহয় খুব খুশি হত। মা বলল, ছেলেটা দেখতে খুব সুন্দর। ছেলেটার মা-বাবা ভাইবোন আছে কি না কে জানে। হঠাৎ তার মন বলে উঠল, রিজিয়ার সঙ্গে বিয়ে হলে যদি তোর বাবা খুশি হতেন, তোর সঙ্গে বিয়ে হলে তোর বাবা আরো বেশি খুশি হবে। মনের কথা শুনে ফারিহা এত গভীরভাবে চিন্তা করছিল যে, বাস্তবজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। পুরুষ কণ্ঠের সালাম শুনে চমকে উঠে বাস্তবে ফিরে দেখল, একটা সুদর্শন যুবক তার মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবল, ইনি ম্যানেজার নয়তো? কথাটা মনে হতে লজ্জায় তার মুখটা লাল হয়ে উঠল। তাড়াতাড়ি গায়ে-মাথায় ওড়নাটা ভালো করে জড়িয়ে বলল, আপনি?