এমন সময় ফারিহা তিনকাপ চা নিয়ে এসে রিজিয়ার শেষের কথা শুনতে পেয়ে বলল, আর আমি যে তোর জন্য এত কিছু করলাম সেটা বুঝি কিছু না? আমি বুঝি কারো কাছ থেকে কিছু পেতে পারি না?
রিজিয়া বলার আগে হিমু বলল, নিশ্চয় পাবে। তোমাকে এমন একটা। জিনিস দেব, যা পেয়ে তুমি ধন্য হয়ে যাবে।
কি এমন জিনিস বলুন তো শুনি।
এখন বলা যাবে না। বললে জিনিসটার কদর তোমার কাছে কমে যাবে। তাই যখন দেব তখন জানতে পারবে কি অমূল্য রত্ন পেয়েছ। এবার তা হলে আসি বলে হিমু উঠে দাঁড়াল।
আরে করেন কি? অত কষ্ট করে আপনার জন্য চা নিয়ে এলাম, না খেয়েই চলে যাবেন?
হিমু বসে চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, কথাটা ঠিক বললে কী? আমি খাব এক কাপ আর এনেছ তিন কাপ।
তিন কাপ আনি আর দশ কাপ আনি, উদ্দেশ্যতো আপনার জন্য।
তোমার সঙ্গে তর্কে পারব না বলে হিমু চায়ের খালি কাপ নামিয়ে টেবিলের ওপর রাখল। তারপর সালাম বিনিময় করে চলে যেতে উদ্যত হলে রিজিয়া বলল, রাতে ফোনের অপেক্ষায় থাকব।
ঠিক আছে বলে হিমু চলে গেল।
ফারিহা বলল, রাতে আবার ফোন করতে বললি কেন? এতক্ষণ কথা বলে সাধ মেটে নি?
তুই তো কারো প্রেমে পড়িস নি, পড়লে এ কথা বলতিস না।
আমার বয়েই গেছে কারো প্রেমে পড়তে। একটা বই-এ পড়েছি, বিয়ের পর যে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রেমে পড়ে, সেই প্রেমই খাঁটি প্রেম। সেই প্রেমে বেহেস্তের সুখ অনুভব হয়। আর যারা আগে প্রেম করে পরে বিয়ে করে, তাদের প্রেম কাচের মতো ঠুনকো। কাচ যেমন সামান্য আঘাতে ফাটল ধরে এবং বড় আঘাতে ভেঙ্গে চুর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়, তেমনি প্রেম করে যারা বিয়ে করে, তাদের মধ্যে সামান্য কোনো ব্যাপারে মনোমালিন্য হলে সেই প্রেমে ফাটল ধরে এবং বড় কোনো বিষয়ে মনোমালিন্য হলে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
রিজিয়া হেসে উঠে বলল, তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই যেন আগে প্রেম করেও বিয়ে করেছিস, আবার বিয়ে করেও স্বামীর সঙ্গে প্রেম করেছিস।
ফারিহাও হেসে উঠে বলল, তোর মাথায় গোবর আছে। কি করে যে সব পরীক্ষায় আমার থেকে ভালো রেজাল্ট করিস বুঝতে পারছি না। আরে গাধা, সরি, আরে গাধী, কোনো কিছু জানতে হলে শুধু যে বাস্তব অভিজ্ঞতা দরকার তা ঠিক নয়। বিভিন্ন বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা পড়লেও জানা যায়। তুই তো ওসব পড়িস না জানবি কি করে?
রিজিয়া বলল, আমার জানার দরকার নেই। আমি বিয়ের আগে প্রেম করলেও বিয়ের পর সেই প্রেম আরো কত গম্ভীর হয় সবাইকে দেখিয়ে দেব। আর বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে কত গভীর প্রেম করিস তাও দেখব।
ফারিহা কিছু বলতে যাচ্ছিল, কাজের বুয়াকে আসতে দেখে থেমে গেল।
কাজের বুয়া এসে বলল, এবার আপনারা যান, আমি ঘর গোছাব।
যেতে যেত ফারিহা বলল, আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে দেখব বিয়ের পর তোর কথা ঠিক, না আমার কথা ঠিক।
রিজিয়া বলল, তাই দেখিস।
হিমু বাসায় ফিরে এলে জাহিদ হাসান বললেন, রেজাল্ট শোনাও।
রিজিয়ার দাদু ও মামার সঙ্গে যা কিছু কথাবার্তা হয়েছে হিমু সব কিছু বলল। এমন কি ইসলাম সম্পর্কে শিহাব চাচা যা বলেছিল তাও বলল।
জাহিদ হাসান বললেন, শুনে খুব আনন্দিত হলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, রিজিয়ার সঙ্গে আমার দেখা করার ব্যাপারে আলাপ করিস নি?
জি, করেছি। বললেন, সে ব্যবস্থাও তিনি করবেন।
শিহাবের অফিসের ফোন নাম্বার জানিস?
জানি, ইনডেক্সে লিখা আছে এক্ষুনি এনে দিচ্ছি বলে হিমু রুমে গিয়ে একটা কাগজে লিখে এনে দাদুর হাতে দিয়ে বলল, বাসার নাম্বারটাও দিলাম।
ঠিক আছে, তুই এবার যা।
৯-১১. কয়েকদিন অপেক্ষা করে
০৯.
কয়েকদিন অপেক্ষা করেও যখন শিহাব যোগাযোগ করল না তখন জাহিদ হাসান একদিন তার অফিসে ফোন করলেন।
শিহাবের পি.এ. সাওকাত ফোন ধরে বললেন, কে বলছেন?
আমি জাহিদ হাসান, শিহাবের সঙ্গে কথা বলতে চাই।
একটু অপেক্ষা করুন বলে সাওকাত ইন্টারকমে সাহেবকে বললেন, জাহিদ হাসান আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছেন।
শিহাব বললেন, ঠিক আছে, লাইন দিন। লাইন দেয়ার পর শিহাব সালাম দিয়ে বললেন, চাচা কেমন আছেন?
ভালো, তুমি কেমন আছ?
আল্লাহ ভালোই রেখেছেন। হিমুর কাছে মনে হয় সব কিছু শুনেছেন। আমি যোগাযোগ করব করব করেও কাজের চাপে সম্ভব হয় নি। গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি, এলে খুব খুশি হব।
কাজে খুব ব্যস্ত বললে, অফিসে আলাপ করা যাবে কি? তার চেয়ে বিকেলে আমি তোমার বাসায় আসছি। ক’টায় বাসায় ফিরবে?
পাঁচটায়। আপনি ঐ সময়ে আসুন। গাড়ি পাঠিয়ে দেব।
গাড়ি পাঠাতে হবে না। আমি নিজেই আসব।
তাই আসুন। তারপর সালাম বিনিময় করে শিহাব রিসিভার নামিয়ে রাখলেন।
.
শিহাব সাড়ে চারটের সময় বাসায় ফিরে স্ত্রী ও শ্বশুরকে জাহিদ হাসানের আসার কথা জানিয়ে কিভাবে হিমুর সঙ্গে রিজিয়ার বিয়ে দেয়া যায় আলাপ করলেন।
জাহিদ হাসান নিজের গাড়িতে করে ঠিক পাঁচটার সময় শিহাবদের বাসায় এলেন।
শিহাব জাহিদ হাসানের আসার কথা দারোয়ানকে বলে বারান্দায় অপেক্ষা করছিলেন। জাহিদ হাসান গাড়ি থেকে নামার পর সালাম বিনিময় করে ড্রইংরুমে এনে বসালেন।
বসার পর জাহিদ হাসান বললেন, প্রায় বিশ বছর আগে তোমার ও রিজিয়ার সঙ্গে এবং তার নানার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছি, সেজন্য আমি খুবই অনুতপ্ত। হিমুর কাছে তোমার ও রিজিয়ার আমার ওপর কোনো ক্ষোভ বা রাগ নেই শুনে বুঝতে পারি তোমরা কত মহৎ, তোমাদের মন কত উদার। তাই তোমাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য এসেছি। আর রিজিয়াকে নাতবৌ করে ঘরে তোলার জন্য তোমার সঙ্গে আলাপ করতেও এসেছি। রিজিয়ার নানা বেঁচে থাকলে তার কাছেও ক্ষমা চাওয়ার জন্য গ্রামের বাড়িতে যেতাম।