হা চাচা, আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। এই কয়েকদিন ইসলামী বই পুস্তক পড়ে আমারও তাই মনে হয়েছে।
শুধু নিজে ইসলামকে জানলে ও মানলে হবে না, আস্তে ধীরে খুব হিকমতের সাথে প্রথমে বাসার সবাইকে এবং পরে অন্যান্য মুসলমানদের জানাবার ও মানাবার চেষ্টা করতে হবে। কারণ এটা করাও ইসলামের বিধান।
আমিও সেকথা বুঝতে পেরেছি। ইনশাআল্লাহ সেই চেষ্টাও করব। কিন্তু আমি এখন কি করব বললেন না তো?
তুমি জান কি না জানি না, আমি কিন্তু রিজিয়ার জন্য আমার অফিসের ম্যানেজারকে পছন্দ করেছিলাম। তোমাদের ব্যাপারটা জানার পর মত পাল্টেছি। এখন তোমাকে কিছু করতে হবে না, যা করার আমি করব। তুমি শুধু তোমার দাদাজীকে একদিন এখানে নিয়ে আসবে।
তা নিয়ে আসব, কিন্তু বাবা তো তার বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। আমি প্রতিবাদ করেও কাজ হয় নি। মাও বাবার সঙ্গে একমত। আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলতে মা বললেন, বিয়ে করতে যদি না চাস, তা হলে ফরেনে উচ্চ ডিগ্রি নিতে যা। তাতেও আমি রাজি না। আমি বলেছি, দেশের গরিব ও সাধারণ মানুষ যাতে অল্প খরচে চিকিৎসা পায়, সেজন্যে চেম্বার করে প্র্যাকটিস করব।
এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া তোমার ঠিক হয় নি। মা-বাবা যখন তোমাকে উচ্চ ডিগ্রি নিতে ফরেনে পাঠাতে চাচ্ছেন তখন তা করাই তোমার উচিত। ফরেনের ডিগ্রি থাকলে গরিব ও সাধারণ মানুষের আরো বেশি উপকার করতে পারবে।
কিন্তু রিজিয়াকে ভুলে যাওয়ার জন্য এটা যে তাদের একটা প্ল্যান, তা আমি জানি। তাই মাকে বলেছি, রিজিয়াকে বিয়ে করে বাসায় রেখে তারপর ফরেনে পড়তে যাব। মাও বাবার মতো রিজিয়াকে বৌ করতে কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। বলেছেন, তোর বাবার বন্ধু বিজনেস ম্যাগনেট। তার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করলে তিনিই তোকে ফরেনে পাঠাবেন এবং ভবিষ্যতে তার সব কিছু তুই ও তার মেয়ে পাবি। বাবা দু’মাসের জন্য কানাডা গেছেন। ফিরে এসে আমার বিয়ে দেয়ার কথা বলে গেছেন। খুব দুশ্চিন্তায় আমার দিন কাটছে।
এই পরিস্থিতি তুমি নিজেই সৃষ্টি করেছ। রিজিয়া পাড়াগাঁয়ের গরিব ঘরের এতিম মেয়ে, এসব কথা তোমার মাকে বলে ভীষণ ভুল করেছ। ওসব না বলে যদি রিজিয়ার শুধু বর্তমান ঠিকানা জানিয়ে বলতে, ঐ বাসায় দুটি বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে আছে, তাদের মধ্যে রিজিয়া নামের মেয়েটিকে তুমি পছন্দ কর এবং আমাদেরকে তোমার পরিচয় দিয়ে সব কিছু জানাতে, তা হলে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হত না। যাই হোক, যা হওয়ার হয়েছে। এ নিয়ে তুমি দুশ্চিন্তা করবে না। একটু আগে বললাম না, যা করার আমি করব। তোমার বাবা কানাডা গেছেন। এই ফাঁকে আমি তোমাদের বাসায় গিয়ে তোমার দাদুর সঙ্গে আলাপ করতে পারতাম; কিন্তু তোমার মা আমাকে চিনে ফেলবে। তাই ওনাকে আমার বাসায় নিয়ে আসতে তোমাকে বললাম। এবার আমাকে উঠতে হচ্ছে বলে শিহাব দাঁড়িয়ে পড়লেন।
হিমুও দাঁড়িয়ে সালাম দিল।
শিহাব সালামের উত্তর দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বললেন, তুমি বস, চা খেয়ে যাবে।
স্বামীর পেছন পেছন এসে আরিফা বেগম দরজার আড়াল থেকে এতক্ষণ তাদের কথা শুনছিলেন। স্বামী বেরিয়ে এলে তার সঙ্গে যেতে যেতে বললেন, হিমু খুব সুন্দর ছেলে, কথাবার্তাও খুব ভালো।
শিহাব মৃদু হেসে বললেন, ফাহিমের থেকে ভালো?
আরিফা বেগম এরকম প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। থতমত খেয়ে বললেন, দু’জনেই খুব ভালো।
এবার শিহাব একটু জোরে হেসে উঠে বললেন, তোমাকে হারাতে গিয়ে নিজেই হেরে গেলাম।
ওমা, এতে আবার হার জিতের কি হল?
বাদ দাও ও কথা, ফারিহা ও রিজিয়া কোথায়? ওদের হাতে হিমুর জন্য চা পাঠিয়ে দাও।
আমাকে পাঠাতে হবে না। এতক্ষণে হয়তো ওরা চা নিয়ে চলে গেছে।
বাবা ড্রইংরুমে যাওয়ার পর ফারিহা রিজিয়াকে বলল, চল, আমরা দরজার আড়াল থেকে কি কথাবার্তা হয় শুনব। তারপর দরজার কাছে মাকে দেখে ওরা বারান্দায় এসে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সব কিছু শুনছিল। বাবা চলে যাওয়ার পর রিজিয়া বলল, কিচেনে চা তৈরি আছে তুই গিয়ে নিয়ে আয়, আমি হিমুর কাছে যাচ্ছি।
হুকুম করার স্বভাবটা এবার পাল্টা। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে কাকে হুকুম করবি? আমাকে আনতে না বলে নিজে নিয়ে আসতে পারিস না? বলে ফারিহা কিচেনের দিকে চলে গেল।
রিজিয়া তার কথা গায়ে মাখল না। মৃদু হেসে ড্রইংরুমে ঢুকে সালাম দিল।
হিমু সালামের উত্তর দিয়ে বলল, এখানে আসার পর বেশ নার্ভাস ফিল করেছিলাম। তোমার দাদুর সঙ্গে আলাপ করার পর কিছুটা কমে। তারপর তোমার মামার সঙ্গে আলাপ করার সময় সম্পূর্ণ কেটে যায়। সত্যি ওনারা খুব মহৎ।
হ্যাঁ, তোমার কথা ঠিক। মামা ও দাদু মহৎ জানতাম; কিন্তু তোমার সঙ্গে ওনাদের আলাপ শুনে মনে হল শুধু মহৎ নন, খুব উদার মনের মানুষও। তারপর বলল, মামা অফিসের ম্যানেজারকে আমার জন্য পছন্দ করেছেন শোনার পর থকে খুব দুশ্চিন্তায় দিন কাটছিল। তার ওপর তোমাকে বাসায় ডেকে আনার কথা শুনে ভেবেছিলাম, খুব অপমান করে তাড়িয়ে দেবেন। তাই তুমি আসার পর থেকে ভয়ে কাঠ হয়েছিলাম। তারপর দাদুর ও মামার কথা শুনে আনন্দে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছি।