তা হলে স্বীকার করছিস, আমি তোর থেকে চালাক?
চালাক কি না জানি না, তবে তোর ব্রেন যে খুব সার্ফ তা স্বীকার করছি।
তুইও কম না। সোজাসুজি নাক না দেখিয়ে মাথার পেছন থেকে ঘুরিয়ে দেখালি।
হয়েছে হয়েছে, অত আর লেকচার দিতে হবে না। পড়লে পড়, তা না হলে ঘুমিয়ে পড়।
.
পরের দিন হিমু সোয়া একটা থেকে কলেজের গেটের উল্টো দিকের ফুটপাতে অপেক্ষা করছিল। দেড়টার সময় অনেক ছাত্রীদের বেরোতে দেখলেও তাদের মধ্যে রিজিয়া বা ফারিহাকে দেখতে পেল না। ভাবল, তা হলে কোনো কারণে ওরা কি আজ আসে নি? তাই বা কি করে হয়? না এলে নিশ্চয়ই ফোন করে জানাত। যখন দুটো বেজে গেল তখন আর ধৈর্য ধরতে পারল না। গেটের ভেতর ঢুকে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করল, ডিগ্রি আর্টস বিভাগের ছুটি হয়ে গেছে কি না জানেন?
দারোয়ান বলল, না, টিউটোরিয়াল ক্লাস চলছে। আড়াইটায় ছুটি হবে।
হিমু ফিরে এসে আগের জায়গায় অপেক্ষা করতে লাগল।
আড়াইটায় ক্লাস শেষ হওয়ার পর রিজিয়া ও ফারিহা গেটের বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে হিমুকে দেখতে পেল না।
ফারিহা বলল, তোর কথাই ঠিক, দেড়টা দুটো পর্যন্ত অপেক্ষা করে হিমু ভাই ফিরে গেছে।
আজ টিউটোরিয়াল ক্লাস আছে গতরাতে ফোন করার সময় দু’জনের কারো মনে ছিল না। আজ টিউটোরিয়াল ক্লাস করার সময় মনে পড়ে এবং ফারিহাকে সে কথা বলে বলেছিল, আড়াইটায় টিউটোরিয়াল ক্লাস শেষ হবে। অতক্ষণ কি আর হিমু অপেক্ষা করবে? বড়জোর দুটো পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফিরে যাবে।
ওদেরকে গেট থেকে বেরোতে দেখে হিমু ফুটপাতের একটা মোটা আশুথ গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে লক্ষ্য রাখল। তারপর ওরা যখন একটা স্কুটারের দিকে এগোল তখন আড়াল থেকে বেরিয়ে দ্রুত হেঁটে কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল, আমি সেই সোয়া একটা থেকে অপেক্ষা করছি, আর তোমরা আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছ?
রিজিয়ার আগে ফারিহা সালামের উত্তর দিয়ে বলল, কোথায় ছিলেন দেখলাম না তো? আমরা চারদিকে তাকিয়ে কত খুঁজলাম।
হিমু বলল, একটু ভালো করে খুঁজলে ঠিকই দেখতে পেতে। ঐ গাছটার আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, আমাকে না পেয়ে তোমরা কি কর।
রিজিয়া বলল, আজ যে টিউটোরিয়াল ক্লাস আছে, তা আমাদের কারো মনে ছিল না। ক্লাস শুরু হওয়ার পর মনে পড়ে। মনে থাকলে আড়াইটায় আসতে বলতাম। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।
হিমু বলল, দেড়টায় অন্যান্য মেয়েদের সঙ্গে তোমাদের বেরোতে না দেখে দু’টো পর্যন্ত অপেক্ষা করি। তারপর দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম তোমাদের টিউটোরিয়াল ক্লাস হচ্ছে। তারপর বলল, ভুল কম বেশি সবারই হয়। মাফ চাওয়ার কি আছে? তবে ভালো করে না খুঁজে চলে যাওয়াটা ঠিক হচ্ছিল না।
রিজিয়া বলল, ফারিহার মতো তোমার মাথায়ও যে দুষ্টুমিতে ভরা, তা জানব কি করে?
ফারিহা বলল, দেখছেন হিমু ভাই, আপনার সঙ্গে আমাকেও জড়াচ্ছে। এটা কি ওর উচিত হল?
হিমু হাসতে হাসতে বলল, মনে হয় ওর মাথায় কিছু নেই, তা না হলে এমন অনুচিত কথা বলতে পারত না।
রিজিয়া বলল, অনেক হয়েছে এবার চল তো।
চলতে শুরু করে ফারিহা বলল, চলতো বললি, কোথায় যাবি বলবি না?
রিজিয়া বলার আগে হিমু বলল, আলাপ করার জন্য দুটো জায়গা। একটা চায়নিজ রেস্টুরেন্ট আর অন্যটা পার্ক। কোথায় যাবে বল।
ফারিহা রিজিয়াকে বলল, তুই বল।
রিজিয়া বলল, তোর তো উপস্থিত বুদ্ধি বেশি। তুই বল।
ফারিহা বলল, পার্কের চেয়ে চায়নিজ রেস্টুরেন্ট উত্তম। একঢ়িলে দু’পাখি স্বীকার হবে। আলাপও হবে, ডান হাতের কাজও হবে। পেটে ক্ষিধে নিয়ে তো আর আলাপ জমবে না? তারপর হিমুকে উদ্দেশ্য করে বলল, পকেট ভারি আছে তো? এসব ব্যাপারে লজ্জা করা উচিত হবে না, নচেৎ খাওয়ার পর তিনজনকেই অপদস্থ হতে হবে।
রিজিয়া তাকে ধমকের স্বরে বলল, তোর লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই। ঘণ্টা খানেক আর ক্ষিধে সহ্য করতে পারবি না? বাসায় গিয়েই তো খাবি।
ফারিহা বলল, তোর যদি এতই লজ্জা, তা হলে তুই খাবি না, আমি আর হিমু ভাই খাব, তুই চেয়ে চেয়ে দেখবি। অবশ্য তাতেও তোর লাভ হবে। ঐ যে লোকে বলে, খাওয়ার চেয়ে দেখা ভালো।
ততক্ষণে তারা নীলক্ষেতের মোড়ে এসে গেছে। রিজিয়া কিছু বলতে যাচ্ছিল, হিমু তাকে থামিয়ে দিয়ে একটা দাঁড়ানো স্কুটার ড্রাইভারকে বলল, যাবেন ভাই?
ড্রাইভার রাজি হতে হিমু তাদেরকে পেছনের সিটে উঠতে বলে ড্রাইভারের পাশে বসে বলল, পাঁচ নাম্বার ধানমন্ডির রাস্তার সামনের চায়নিজ রেস্টুরেন্টে চলুন।
ড্রাইভার এত কাছে যেতে রাজি হল না। বলল, আপনারা রিকশায় যান।
হিমু ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল, কাছে যেতে চাচ্ছেন না তো, দূরের ভাড়া দেব, নিন স্টার্ট দিন।
রেস্টুরেন্টে ঢুকে হিমু বলল, তোমাদের সঙ্গে খাব বলে বাসা থেকে না খেয়ে বেরিয়েছি। তারপর মেনুর বোর্ডটা এগিয়ে দিয়ে বলল, অর্ডার দাও।
খাওয়ার পর ফারিহা বলল, হিমু ভাই, বেশি দেরি করলে মা চিন্তা করবেন।
হিমু বলল, দেরি করা না করা তোমাদের ওপর নির্ভর করছে।
রিজিয়া ফারিহাকে বলল, যা বলার তুই বল।
ফারিহা বলতে শুরু করল, বাবা তার অফিসের ম্যানেজারকে রিজিয়ার জন্য পছন্দ করেন এবং সে কথা মাকে জানান। মা আবার আমাকে জানান। শুনে আমার তো আক্কেল গুড়ুম। সঙ্গে সঙ্গে আপনার পরিচয়, রিজিয়ার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ও আপনারা যে একে অপরকে ভালবাসেন সব কিছু বললাম। মা শুনে প্রথমে আমার ওপর রেগে গেলেও পরে বললেন, তোর বাবাকে বলে দেখি, সে কি করে? বাবা শুনে মাকে বলেছেন, রিজিয়া যেন একদিন ছেলেটাকে বাসায় আসতে বলে।