ফারিহা বলল, রিজিয়া কত দুঃখী, তা তো তুমি জান। দুঃখী মেয়ের সুখের কথা শুনে কে না খুশি হয়! তোমার খুশি লাগছে না?
পাগলী মেয়ের কথা শোন, তোর চেয়ে আমার বেশি খুশি লাগছে। এবার পড়তে যা।
যখন সাজিদা এসে ফারিহাকে বলল ডাকছে তখন রিজিয়াও ভয় পেয়েছে। ভেবেছে, আমার ও হিমুর সম্পর্কের কথা শুনে মামা হয়তো খুব রেগে গেছেন। তাই সাবধান করার জন্য মামিমা ফারিহাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। এইসব ভেবে মন খারাপ হয়ে যেতে পড়া বন্ধ করে এতক্ষণ ফারিহার ফেরার অপেক্ষা করছিল। তাকে হাসি হাসি মুখে ফিরে আসতে দেখে কিছুটা স্বস্তি পেয়ে জিজ্ঞেস করল, মামিমা কেন ডেকেছিল রে?
ফারিহা দুষ্টুমি করে বলল, বলব না।
কেন বলবি না?
সেটা আমার ইচ্ছা।
প্লিজ বল না, মামিমা কেন ডেকেছিলেন?
বললাম তো বলব না, তবু জিজ্ঞেস করছিস কেন?
বলবি না, দাঁড়া মজা দেখাচ্ছি বলে রিজিয়া ড্রয়ার খুলে একটা তেলাপোকা ধরে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল।
ফারিহা তার হাতে তেলাপোকা দেখে কাতরে উঠে বলল, বস বস বলছি। দয়া করে ওটাকে বাইরে ফেলে দিয়ে আয়। সে তেলাপোকাকে ভীষণ ভয় পায়। ঘরে যদি একটা তেলাপোকা উড়তে দেখে, তা হলে বিছানার চাদর তুলে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চাপা দিয়ে রিজিয়াকে বলবে, প্লিজ ওটাকে মেরে বাইরে ফেলে দিয়ে আয়। রিজিয়ার ড্রয়ারে তেলাপোকা থাকে বলে তার টেবিলের কাছে যায় না।
রিজিয়া তেলাপোকটা বাইরে ফেলে দিয়ে এসে বলল, এবার বল।
মা যা কিছু বলেছিল সেসব বলে ফারিহা জিজ্ঞেস করল, কবে তা হলে হিমু ভাইকে আসতে বলবি?
রিজিয়াও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলল, তুই বল না, কবে আসতে বলব?
এখনই ফোন করে হিমু ভাইকে জিজ্ঞেস কর, তিনি কবে আসতে পারবেন।
ঠিক বলেছিস। যা ফোনের সেটটা নিয়ে আয়।
তুই নিয়ে আসতে পারিস না, আমাকে বলছিস কেন? কথাটা ফারিহা বললেও বারান্দা থেকে সেটটা এনে বলল, নাম্বার বল।
দু’বার রিং হওয়ার পর একটা বয়স্ক মহিলার ভারি গলা শুনতে পেল, হ্যালো, কে বলছেন?
ফারিহা মাউথ পিসে হাত চাপা দিয়ে রিজিয়াকে বলল, এক মহিলা ফোন ধরেছেন। মনে হয় হিমু ভাইয়ের মা। কি বলব বল দেখি?
রিজিয়াও বলল, যা হোক কিছু বলে হিমুকে ফোনটা দিতে বল।
ফারিহা মাউথপিস থেকে হাত সরিয়ে বলল, ডা. হিমু আছেন? আমি ওনার বন্ধুর বোন। উনি আমার চিকিৎসা করছেন।
হিমুর মা সাবিহা বেগম ফোন ধরেছিলেন। বললেন, ধরুন হিমুকে দিচ্ছি।
ফোন রাগিব হাসানের রুমে থাকলেও হিমু নিজের রুমে প্যারালাল করে নিয়েছে। হিমু একটা হাদিসের বই পড়ছিল। রিং হতে ঘড়ি দেখে ভাবল, কে তাকে এত রাতে ফোন করবে? নিশ্চয় বাবার ফোন। সাথে সাথে রিং বন্ধ হয়ে যেতে বুঝতে পারল, মা বা বাবা ধরেছে। তাই আবার পড়ায় মন দিল। একটু পরে সেটে টিক টিক শব্দ শুনে বুঝতে পারল, তার ফোন। রিসিভার তুলতে মায়ের গলা পেল, তোর পেসেন্ট ফোন করেছে, কথা বল। তারপর মায়ের রিসিভার রাখার শব্দ পেয়ে বলল, হ্যালো, কে বলছেন?
ফারিহা বলল, জিজ্ঞেস করছেন কেন? আপনার মা তো কে ফোন করেছে বললেন?
ফারিহার গলা বুঝতে পেরে হিমু বলল, দুষ্টুমি না করে এত রাতে কেন ফোন করেছ বল।
ফারিহা বলল, দুষ্টুমি না করলে আপনার মায়ের হাত থেকে উদ্ধার পেতাম না। কি করছিলেন বলুন?
একটা হাদিসের বই পড়ছিলাম। রিজিয়াকে দাও।
কেন? আমার সঙ্গে কথা বলতে বুঝি ভালো লাগছে না?
ভালো লাগবে না কেন? বেশিক্ষণ কথা বললে মা বুঝতে পারবে, প্যারালাল ফোন তো। তাই ওকে দিতে বললাম।
ধরুন দিচ্ছি, বলে ফারিহা রিসিভার রিজিয়াকে দিয়ে বলল, নে কথা বল।
রিজিয়া সালাম বিনিময় করে বলল, মামা-মামি আমাদের ব্যাপারটা জেনে গেছেন। তারা তোমাকে বাসায় আসতে বলেছেন। কবে আসবে বল?
তুমি বললে এক্ষুনি এসে পড়তে পারি।
দুষ্টুমি না করে কবে আসবে বল।
মামা-মামি জানলেন কেমন করে?
সে অনেক কথা, ফোনে বলা যাবে না। শুধু এতটুকু বলতে পারি ফারিহা জানিয়েছে।
ও তো খুব ডেঞ্জারস মেয়ে।
ফারিহা ডেঞ্জারস মোটেই নয়। বরং সাহসী মেয়ে বলতে পার। ওর কথা বাদ দিয়ে কবে আসবে বলবে তো?
তুমি যেদিন বলবে। তবে তার আগে তোমার মামা-মামি কি করে জানলেন বিস্তারিত জানতে হবে। নচেৎ তেমন কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেব কি করে?
তা হলে কাল দেড়টার সময় কলেজের গেটের কাছে থাকবে।
নিশ্চয় থাকব।
নিশ্চয় থাকব নয়, বলো ইনশাআল্লাহ থাকব। কারণ আল্লাহ রাজি না থাকলে মানুষ কিছুই করতে পারে না।
ইনশাআল্লাহ থাকব বলে হিমু বলল, এবার হয়েছে তো?
হ্যাঁ, হয়েছে। ঘুমিয়ে পড়েছিলে নাকি?
না তোমার কথামতো হাদিস পড়ছিলাম।
ক’টার সময় ঘুমাও?
ছাত্রজীবনে কোনো নির্দিষ্ট টাইম ছিল না। বারটা-একটা-দুটা পর্যন্ত পড়তাম। এখন বারটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি।
রিজিয়ার হাত থেকে রিসিভার কেড়ে নিয়ে ফারিহা বলল, কতক্ষণ কথা বলছেন খেয়াল আছে? এখন বুঝি মা জানতে পারবেন না? তারপর রিসিভার ক্র্যাডেলে রেখে রিজিয়াকে বলল, আমাকে বললেন কিনা ‘বেশিক্ষণ কথা বললে মা জানতে পারবে, তাড়াতাড়ি রিজিয়াকে দাও। অনেকক্ষণ তোর সঙ্গে কথা বলছিল, তাই লাইন কেটে দিলাম। রাগ করলি?
রিজিয়া হেসে ফেলে বলল, দিন দিন তুই খুব বেশি ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস। তবে তোর উপস্থিত বুদ্ধির তারিফ না করে পারছি না। আমি ফোন করলে হিমুর মাকে অত সুন্দরভাবে মিথ্যে বলে ম্যানেজ করতে পারতাম না।