যাই বল না কেন, এবার হিমু ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলে দুলাভাই বলে ডাকব।
তবে রে তোর ফাজলামি বের করছি বলে রিজিয়া ওকে মারার জন্য ধরতে গেল।
ফারিহা দৌড়ে পালাবার সময় বলল, দেখিস যা বললাম তাই করব।
.
সময় সুযোগমতো আরিফা বেগম স্বামীকে বললেন, তুমি যে তোমার অফিসের ম্যানেজারের সঙ্গে রিজিয়ার বিয়ে দিতে চাচ্ছ, এদিকে তো রিজিয়া তার চাচাত ভাইকে ভালবাসে। তাকে ছাড়া অন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে করবে না।
শিহাব খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তিনি যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
কি? খুব অবাক হয়েছ তাই না?
অবাক হওয়ার কথা নয় কি?
হ্যাঁ,অবাক হওয়ারই কথা। শুনে আমিও খুব অবাক হয়েছিলাম।
কার কাছে শুনেছ?
ফারিহার কাছে।
শিহাব আরো বেশি অবাক হয়ে বললেন, কি বললে?
বললাম তো ফারিহার কাছে। রিজিয়া ওকে বলেছে।
চাচাত ভাইটা কে? বুঝতে পারছি না।
না বোঝার কি আছে? তোমার বন্ধুর বড় ভাইয়ের ছেলে হিমু।
আশ্চর্য, ছেলেটার নামও জান দেখছি?
বললাম না, ফারিহা বলেছে? তারপর ফারিহা তাদের দু’জনের সম্পর্কে যা কিছু বলেছে আরিফা বেগম বললেন।
সব কিছু শুনে শিহাব অনেকক্ষণ চুপ করে রইল।
কি হল? মনে হচ্ছে কিছু যেন চিন্তা করছ?
হ্যাঁ, চিন্তা করছি। এইজন্য লোকে বলে, আল্লাহ যার সঙ্গে যার জোড়া করে থাকেন, যেমন করে হোক তাদের বিয়ে হবেই।
আরিফা বেগম ভেবেছিলেন, রিজিয়ার ঘটনা শুনে স্বামী তার ওপর খুব রেগে যাবে। তা হল না দেখে মনে মনে খুশি হয়ে বললেন, তুমি তা হলে রিজিয়াকে তার চাচাত ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিতে রাজি?
হা রাজি। তবে সহজে হিমুর দাদা ও বাবার কাছে নতি স্বীকার করব না। আমি তাদের আভিজাত্যের অহঙ্কার ভেঙ্গে দিতে চাই। দেখি, আল্লাহ কোন পথে রাজি।
আর ম্যানেজার ফাহিমের ব্যাপারে কিছু ভাববে না?
ওর ব্যাপারে আবার কি ভাবব? তাকে তো বলি নি, রিজিয়ার সঙ্গে বিয়ে দেব। ভালো জেনে রিজিয়ার জন্য পছন্দ করেছিলাম।
যদি কিছু মনে না কর তা হলে একটা কথা বলি?
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছে ইসলামের পরিপন্থী ছাড়া সব কিছু বলতে পারে। এতে কারো কিছু মনে করা উচিত নয়। নিশ্চিন্তে বল, কি বলতে চাচ্ছ।
ফাহিমকে ফারিহার জন্য সিলেক্ট করলে হয় না?
তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ দেব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমি প্রথমে ফারিহার জন্যই ওকে পছন্দ করি। পরে চিন্তা করে দেখলাম, নিজেদের অফিসের কর্মচারীকে তুমি হয়তো পছন্দ করতে নাও পার। তাই রিজিয়ার কথা বলি। ফারিহাকে হয়তো আল্লাহ ফাহিমের জোড়া করেছেন তাই এরকম হল। তারপর বললেন, ফারিহা যেন রিজিয়াকে বলে, হিমুকে একদিন বাসায় নিয়ে আসতে। আর শোন, এখন অফিসে কাজের চাপ। চাপ কমলে একদিন ফাহিমকে নিয়ে আসব। সেদিন ফারিহা যেন কোথাও না যায়। ওদের পরিচয় করিয়ে দেব। একে অপরকে দেখুক, আলাপ করুক। ওদেরও তো নিজস্ব মতামত আছে।
তাতো বটেই। যেদিন ফাহিমকে নিয়ে আসবে, সেদিন টাইমটা ফোন করে জানাবে। ফারিহা যদি কোথাও যেতে চায়, নিষেধ করব। আচ্ছা, আগের ম্যানেজার ফাহিমের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে কিনা খোঁজ নিয়েছ?
তা আবার নিই নি। সে রকম কিছু ঘটনা ঘটে নি।
ওকি আগের বাসা ছেড়ে দিয়েছে?
না, বাসা খুঁজছে। পেলে ছেড়ে দেবে।
ততদিন যদি ফাহিমের কোনো ক্ষতি হয়ে যায়? তার চেয়ে আমাদের বাড়ির একটা ফ্লাট খালি করে সেখানে ফাহিমকে থাকতে দিলে হয় না?
তুমি খুব ভালো কথা বলেছ। এটা আমার মাথায় আসে নি। ওকে যখন আমরা জামাই করতে চাচ্ছি তখন ওর ভালোমন্দ আমাদেরই চিন্তা করা উচিত। সামনের মাসে যাতে একটা ফ্লাট খালি হয় সেই ব্যবস্থা করতে কেয়ারটেকারকে আজই বলে দেব।
হ্যাঁ, তাই কর। আমাদের বাড়িটা এখান থেকে কাছে। মাঝে মধ্যে গিয়ে ওর মায়ের সঙ্গে আলাপ করে আসব।
শিহাব হেসে উঠে বললেন, আলাপ করতে যাবে, না মেয়ের হবু শাশুড়ির আচার ব্যবহার কেমন দেখতে যাবে?
মেয়ের শাশুড়ি কেমন, মেয়েকে জ্বালাবে কি না মা হয়ে দেখব না? সামনের মাসেই যেন ফ্লাট খালি হয়, সেই ব্যবস্থা করবে।
বললাম তো করব।
৭-৮. ফারিহা ও রিজিয়া খেয়ে এসে
০৭.
রাত এগারটা, ফারিহা ও রিজিয়া খেয়ে এসে আবার পড়তে বসেছে। ছোট বোন সাজিদা এসে ফারিহাকে বলল, তোমাকে মা ডাকছে।
মা ডাকছে শুনে ভয়ে ফারিহার বুক ঢিব ঢিব করতে লাগল। ভাবল, বাবা এখন ঘরে, তার সামনে যদি হিমু ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করে, তা হলে কি করবে? সাজিদাকে জিজ্ঞেস করল, বাবা কোথায় রে?
সাজিদা বলল, বাবা টি.ভি. রুমে খবর শুনছে।
ফারিহা স্বস্তি পেয়ে মায়ের কাছে এসে বলল, কেন ডেকেছ তাড়াতাড়ি বল। এখনো এক সাবজেক্টের পড়া তৈরি করতে বাকি আছে।
আরিফা বেগম বললেন, রিজিয়ার ব্যাপারটা তোর বাবাকে বলেছি। শুনে খুব অবাক হলেও রাগারাগি করে নি। শোন, রিজিয়াকে বলিস, হিমুকে যেন একদিন বাসায় নিয়ে আসে।
ফারিহা মাকে জড়িয়ে ধরে উফুল্ল কণ্ঠে বলল, সত্যি বলছ মা, হিমু ভাইকে বাসায় নিয়ে আসার কথা বলব?
হ্যাঁ রে সত্যি। তোর বাবাই কথাটা বলেছে।
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ফারিহা বলল, আমার এত খুশি লাগছে না মা, যা তোমাকে বোঝাতে পারব না।
আরিফা মেয়েকে পাশে বসিয়ে বললেন, তোর এত খুশি লাগছে কেন? খুশি তো লাগবে রিজিয়ার।