বললেই বুঝতে পারবে। কিছুদিন আগে বাসায় ফেরার সময় ওকে আমাদের গলির মোড়ে একটা প্রাইভেট কার থেকে নামতে ও ড্রাইভারের সিটে বসা একটা হ্যাঁন্ডসাম ছেলের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলতে দেখেছিলাম। আজ গুলশান হয়ে ফেরার সময় একটা রেস্টুরেন্টের সামনে রিজিয়া, ফারিহা ও সেই ড্রাইভারকে আলাপ করতে দেখলাম। ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।
কি বললে, ফারিহাও ওদের সঙ্গে ছিল?
হ্যাঁ ছিল এবং ফারিহাকেই ছেলেটার সঙ্গে কথা বলতে দেখেছি।
তাই যদি হয়, তা হলে ফারিহাকে জিজ্ঞেস করলে সব কিছু জানা যাবে।
জানার পর আমাকে বলবে। এখন আমি একটু বেরোব বলে শিহাব উঠে দাঁড়ালেন।
পরের দিন একসময় আরিফা বেগম মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, কাল বিকেলে তোরা কোথায় গিয়েছিলি?
মা কখনও কোনো কিছুর কৈফিয়ৎ চায় নি। তাই আজ চাইতে ফারিহা খুব অবাক হয়ে বলল, হঠাৎ এরকম প্রশ্ন করছ কেন? এর আগে তো কোনো দিন করো নি?
আগে প্রয়োজন হয় নি, তাই করি নি। কাল বিকেলে তোর বাবা তোদেরকে গুলশানে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে একটা ছেলের সঙ্গে আলাপ করতে দেখেছে। সেই ছেলেটা কে? আর তোদের সঙ্গেই বা ছিল কেন?
মায়ের কথা শুনে ফারিহা ঘাবড়ে গিয়ে মুখ নিচু করে চুপ করে রইল।
কিরে, চুপ করে আছিস কেন? বলবি তো ছেলেটা কে?
ফারিহা চিন্তা করল, মিথ্যে বলে লাভ নেই, একদিন না একদিন তো ছেলেটার কথা বলতেই হবে। সাহস সঞ্চয় করে বলল, ছেলেটার নাম হিমু। ডাক্তারি পাস করেছে। রিজিয়াকে ভালবাসে। রিজিয়াও ছেলেটাকে ভালবাসে।
মেয়ের কথা শুনে আরিফা বেগম যেমন রেগে গেলেন তেমনি অবাকও হলেন। বললেন, ইসলামে ছেলে মেয়েদের মধ্যে প্রেম-ভালবাসা নিষেধ জেনেও রিজিয়া এ পথে পা বাড়াল? আর তুইও জেনেশুনে তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছিস? এদিকে তোর বাবা রিজিয়ার জন্য আমাদের অফিসের ম্যানেজারকে পছন্দ করেছে। ছেলেটা খুব সুন্দর ও ধার্মিক। এসব কথা তোর বাবা জানলে কি হবে ভেবে দেখ। আর তুই তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছিস শুনলে তোকে আস্ত রাখবে?
মা তুমি সব কথা না শুনে রাগ করছ। ওদের সম্পর্কে সব কিছু শোন, তারপর যা বলার বলো। তারপর হিমুর পরিচয়, কিভাবে হিমু রিজিয়াকে দেখে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ও ঢাকায় কিভাবে রিজিয়াকে দেখে, সব কিছু খুলে বলল।
আরিফা বেগম আর একবার অবাক হয়ে বললেন, এসব তুই কি বলছিস?
হ্যাঁ মা, হিমু ভাই আজ সব কিছু জানাবার জন্য আমাদেরকে গুলশানের ঐ রেস্টুরেন্টে যেতে বলেছিলেন।
আরিফা বেগম চিন্তা করলেন, তা হলে কিছুদিন আগে আমাদের গলির মুখে রিজিয়াকে ঐ ছেলেটাই গাড়ি করে পৌঁছে দিতে এসেছিল?
মাকে চিন্তা করতে দেখে ফারিহা বলল, বাবাকে ওদের সম্পর্কে সব কিছু জানাব ভেবেছিলাম, তার আগেই তোমাকে জানালাম। তুমি বাবাকে সব কিছু বলে ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে বলবে।
তোর বাবা আর হিমুর চাচা যে বন্ধু ছিল, তা কি হিমু বলেছে?
হ্যাঁ বলেছে। আরো বলেছে, ছোট বেলায় রিজিয়াকে তার দাদা-দাদির কাছে দিতে তার নানার সঙ্গে বাবা এসেছিলেন। ওঁনারা তাদেরকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
আরিফা বেগম অল্পক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, তোর বাবা শুনলে মনে হয় খুব রেগে যাবে।
কিন্তু মা, বাবার রেগে যাওয়া কি উচিত হবে? যদি হিমু ভাইকে ছাড়া রিজিয়া অন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে করতে না চায়? কাল ওদের দু’জনের কথা শুনে মনে হয়েছে, ওরা একে অপরের জন্য জীবন পর্যন্ত দেবে, তবু একে অপরকে ছাড়া বিয়েই করবে না। বাবাকে তুমি বুঝিয়ে বলবে।
কিন্তু তোর বাবা যে ম্যানেজারের সঙ্গে ওর বিয়ে দেয়ার কথা বলল, তার কি হবে? কাল বিকেলে তোর বাবা ম্যানেজারকে বাসায় নিয়ে এসেছিল। আমি ছেলেটাকে দেখেছি। অত সুন্দর ছেলে কখনো দেখি নি। তোদের ফেরার পাঁচ মিনিট আগে চলে গেছে। একটু আগে এলে তোরাও দেখতে পেতিস।
যত সুন্দর ও ভালো ছেলে হোক, এক্ষুনি বললাম না, রিজিয়া হিমু ভাইকে ছাড়া বিয়ে করবে না। এমনকি মরে গেলেও না।
তুই এতকিছু জানলি কি করে?
রিজিয়াই বলেছে।
ঠিক আছে, তোর বাবাকে বলে দেখি, সে কি করে।
.
ফারিহা মায়ের কাছ থেকে এসে রিজিয়াকে সব কিছু জানিয়ে বলল, শেষ পর্যন্ত তোর বিয়ের ওকালতি করতে হল। মনে হচ্ছে, মা রাজি আছে, বাবাও রাজি হয়ে যাবে।
রিজিয়া ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, মামা যদি রাজি না হন?
তুই ভয় পাচ্ছিস কেন? মাকে বলেছি বাবাকে বুঝিয়ে বলতে। তবু যদি বাবা রাজি না হয়, আমি বাবাকে বোঝাবার চেষ্টা করব।
মামা রেগে গেলে তুই কিছু বলতে পারবি?
পারব না মানে, নিশ্চয় পারব। তোকে সুখী করার জন্য আমি সব কিছু করতে পারব। এমনকি জীবনও দিতে পারব।
রিজিয়া ছলছল চোখে বলল, তুই আমাকে এত ভালবাসিস কেন? তোর ঋণ শোধ করব কি করে?
কে তোকে ঋণ শোধ করতে বলেছে? আমি তোকে কর্জে হাসানা দিচ্ছি। তুই শোধ করতে না পারলে আমি কোনদিন তাগিদ দেব না। আমাকে আল্লাহ উত্তম জাজা (প্রতিদান) দেবেন।
দোয়া করি, আল্লাহ যেন তোকে তোর মনের মতো বর দেন।
এই রিজিয়া কি হচ্ছে? ছোট বোনের সঙ্গে ফাজলামি করছিস?
আরে আমার ছোট রে, আমাকে বড় বলে মানিস? ছোট হয়ে তুই যখন বড়র সঙ্গে ফাজলামি করতে পারিস, আমি বড় হয়ে পারব না কেন? তা ছাড়া আমি তো দোয়া করলাম। দোয়া করাকে কেউ ফাজলামি বলে না।