হিমু বলল, ঠিক আছে, একটু আগে বললাম না, দাদুর সঙ্গে আলাপ করে দেখি, তিনি যা বলবেন তাই করব?
তা হলে এখন ওঠা যাক বলে রিজিয়া দাঁড়িয়ে পড়ল।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে স্কুটারে ওঠার সময় ফারিহা হিমুকে বলল, একদিন আমাদের বাসায় আসুন না।
হিমু বলল, গেলে মা-বাবাকে কি পরিচয় দেবে?
রিজিয়ার দিকে একবার চেয়ে নিয়ে ফারিহা বলল, কি আবার বলব? যা সত্য তাই বলব।
হিমু কিছু বলার আগে রিজিয়া মিষ্টি ধমকের স্বরে বলল, এতক্ষণ তো বেশ ছিলি, এখন আবার ফাজলামি শুরু করলি?
ফারিহা হাসিমুখে হিমুর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনিই বলুন তো, আমি কি ফাজলামি করলাম?
রিজিয়া বলল, থাক, সাফাইয়ের জন্য আর সাক্ষী মানতে হবে না। তারপর হিমুর সঙ্গে সালাম বিনিময় করে ড্রাইভারকে স্কুটার ছেড়ে দিতে বলল।
.
বাসায় ফিরে হিমু দাদুকে বলল, আপনি যে রিজিয়াকে দেখতে চান, কোথায় কিভাবে দেখবেন? কারণ বাসায় নিয়ে এলে মা চিনে ফেলবে। আর শিহাব চাচাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তাদের বাসায় যাওয়াও কি ঠিক হবে? তিনি যদি অপমানের বদলা নেয়ার জন্য আপনাকে অপমান করেন?
জাহিদ হাসান ম্লান হেসে বললেন, জ্ঞান অনুপাতে তোমার কথা ঠিক। তবে আমার যতদূর মনে হয় শিহাব তা করবে না, বরং খুশিই হবে। আর যদি সত্যি সত্যি অপমান করে, তবু আমি যাব এবং বিয়ের প্রস্তাবও দেব। তোমাকে ও রিজিয়াকে সুখী করার জন্য সব অপমান হজম করতে পারব। তুমি এখন যাও, চিন্তাভাবনা করে তোমাকে জানাব।
.
০৬.
আজ শিহাব একটা সুদর্শন ছেলেকে নিয়ে অফিস থেকে বেশ দেরিতে বাসায় ফিরলেন। তাকে ড্রইংরুমে বসিয়ে ভেতরে গেলেন।
স্বামীকে দেখে আরিফা বেগম বললেন, ফিরতে দেরি হল যে?
শিহাব স্ত্রীর কথার উত্তর না দিয়ে বললেন, কিছুদিন আগে আমাদের অফিসের ফাহিম নামে একটা ছেলের কথা বলেছিলাম মনে আছে?
আরিফা বেগম কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, কই, মনে পড়ছে না তো।
তোমার যদি কিছু মনে থাকে। মাস ছয়েক আগে মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া একটা গরিব ঘরের ছেলেকে অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজারের পোস্টে চাকরি দেয়ার কথা বলেছিলাম না?
ও হা হা মনে পড়েছে। চাকরি দেয়ার কিছুদিন পর বলেছিলে ছেলেটা খুব ধার্মিক ও কর্মঠ। তা সে কি অফিসে কিছু অঘটন ঘটিয়েছে?
আরে না, অঘটন ঘটাইনি বরং বর্তমান যুগে এক বিরল ঘটনা ঘটিয়েছে। বলছি শোন, আমাদের অফিসের ম্যানেজার বেশ কয়েক বছর ধরে কারসাজি করে অফিসের প্যাডে সরকারের বিভিন্ন অফিসে টেন্ডার দিয়ে মাল সাপ্লাই দিচ্ছিলেন। এ বছর ফাহিম তার কারসাজি ধরে ফেলে এবং ম্যানেজারকে সেকথা জানায়। ম্যানেজার ওকে একলক্ষ টাকা দিয়ে ঘটনাটা আমাকে জানাতে নিষেধ করে বলেন, পরবর্তীতে সাহেবের অগোচরে যা কিছু করব, তার ফিফটি পার্সেন্ট আপনাকে দেব। আর এসব কথা যদি সাহেবের কানে তোলেন, তা হলে আপনাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলা হবে। ফাহিম ম্যানেজারকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে আমাকে সব কিছু জানায় এবং টাকাটা আমার টেবিলের উপর রাখে। আমি ম্যানেজারকে ডেকে ঘটনাটা সত্য কিনা জিজ্ঞেস করি। ম্যানেজার ধারণাই করতে পারেন নি, ফাহিম এতবড় টোপ না গিলে আমাকে জানাবে। তাই আমার কথা শুনে ঘাবড়ে গিয়ে মুখ নিচু করে চুপ করে রইলেন। তখন টাকাটা টেবিলের উপর ছিল আর ফাহিমও সামনে দাঁড়িয়েছিল। ঘটনা সত্য বুঝতে পেরে ম্যানেজারকে বললাম, আপনাকে ডিসচার্জ করা হল টাকা নিয়ে সিটে গিয়ে বসুন, ডিসচার্জ লেটার একটু পরে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ম্যানেজার টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার পর ডিসচার্জ লেটারের একটা ড্রাফট লিখে ফাহিমের হাতে দিয়ে বললাম, এটা টাইপিস্টের কাছ থেকে টাইপ করিয়ে আন। ফাহিম টাইপ করিয়ে আনার পর পিয়নকে দিয়ে ম্যানেজারের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। আর ফাহিমকে বললাম, তোমাকে ম্যানেজারের পোস্ট দেয়া হল। কাল থেকে তুমি ম্যানেজারের সিটে বসবে। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি থাক কোথায়? বলল, খিলগাঁয়ে ম্যানেজারের বাড়ির পাশের বাড়িতে মাকে নিয়ে থাকি। বললাম ম্যানেজার তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। তা ছাড়া খিলগাঁও মতিঝিল থেকে অনেকটা দূর। মুগদাপাড়া অথবা গোপীবাগ খুব কাছে। ওদিকে বাসাভাড়া নাও। আমার কথা শুনে ফাহিম মৃদু হেসে বলল, আমি আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করি না। তবু আপনি যখন বলছেন, তাই করার চেষ্টা করব। আজ ওকে ম্যানেজারের কাজ কর্ম বোঝাতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল। তা ছাড়া ওকে নিয়ে একটু গুলশানে গিয়েছিলাম। বাসা চেনাবার জন্য সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। আমি ড্রইংরুমে যাচ্ছি, আমাদের চা-নাস্তা পাঠিয়ে দাও।
ফাহিম যখন নাস্তা খাচ্ছিল তখন আরিফা বেগম পর্দার আড়াল থেকে তাকে দেখেছেন। সে চলে যাওয়ার পর ভেতরে এলেন।
শিহাব জিজ্ঞেস করলেন, ফাহিমকে দেখেছ?
আরিফা বেগম বলেন, হ্যাঁ দেখেছি। খুব সুন্দর ছেলে। একবার দেখলে বারবার দেখতে ইচ্ছা করে।
ঠিকই বলেছ। ছেলেটা দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি মনও খুব সুন্দর। এত ভালো ছেলে এ যুগে দেখাই যায় না। ভাবছি ওর সঙ্গে রিজিয়ার বিয়ে দেব। এ ব্যাপারে তোমার মতামত বল।
ছেলেটাকে দেখে আমারও তাই মনে হয়েছে।
কিন্তু রিজিয়া আমাকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
আরিফা বেগম অবাক হয়ে বললেন, রিজিয়া তোমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে মানে?