ওরে আমার সত্যবাদী রে বলে রিজিয়া তার হাত থেকে রিসিভার কেড়ে নেয়ার সময় বলল, তুই দিন দিন খুব বেশি ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস। তারপর হিমুকে বলল, আমরা আসছি, এবার রাখি তা হলে?
রাখ বলে হিমু সালাম বিনিময় করে লাইন কেটে দিল।
রিজিয়া রিসিভার ক্র্যাডেলে রেখে ফারিহাকে বলল, তৈরি হয়ে নে, এক্ষুনি যেতে বলল।
ফারিহা বলল, তুইতো জানিস কেন আমি তোদের অভিসারের সঙ্গী হতে চাই নি, তবু বলছিস কেন?
রিজিয়া বলল, আজ তোর কোনো কথাই শুনব না। ফাজলামি না করে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে।
ফারিহা ও রিজিয়া রেস্টুরেন্টে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে হিমুকে একা একটা টেবিলে বসে থাকতে দেখে রিজিয়া বলল, ঐ যে তোর হিমু সাহেব আমাদের আগেই এসে গেছেন।
ফারিহা মৃদু হেসে বলল, হিমু সাহেব আমার না, তোর?
রিজিয়া বলল, আমার শুধু হিমু, আর তোর হিমু সাহেব। চল, বেশি ফাজলামি করবি না বলছি।
কাছে এসে দু’জনেই সালাম দিল।
হিমু সালামের উত্তর দিয়ে বসতে বলল। বসার পর ফারিহার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি হিমু, আপনি নিশ্চয় ফারিহা?
মৃদু হেসে ফারিহা বলল, জি।
রিজিয়া হিমুকে বলল, ভালোমন্দ কি সব খবর শোনাবার জন্য আসতে বললে বল।
হিমু কিছু বলার আগে ফারিহা বলল, তার আগে আমি একটা কথা বলতে চাই।
রিজিয়া মনে করল, ফারিহা একটু দুষ্টুমি করতে চাচ্ছে। তাই বলল, তুই আবার কি বলবি? চুপচাপ বসে থাক।
ফারিহা বলল, তোর হিমুর সাথে যদি একটা কথাও বলতে না দিবি, তা হলে নিয়ে এলি কেন?
রিজিয়া কিছু বলতে যাচ্ছে দেখে হিমু হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, বলুক না উনি কি বলতে চান। তারপর ফারিহাকে বলল, রিজিয়া শুনতে না চাইলে কানে আঙ্গুল দিয়ে থাকুক, আমি শুনব, আপনি বলুন।
ফারিহা এক পলক রিজিয়ার দিকে চেয়ে নিয়ে বলল, আমি ওর থেকে দু’বছরের ছোট। ওকে যখন তুমি করে বলেন, আমাকেও তুমি করে বলবেন। এটা হল প্রথম কথা। দ্বিতীয় কথা হল, ওর সম্পর্কে ফোনে যা কিছু বলেছি, দুষ্টুমি করে বলেছি। ও আমার কাছে মাঝে মধ্যে এক আধটা মিথ্যে বললেও আপনার কাছে কোনোদিন বলে নি, ভবিষ্যতেও কোনো দিন বলবে না। কারণ ও খুব ধার্মিক। তাই দুজনের কাছে ক্ষমা চাইছি। আমার আর কিছু বলার নেই।
ফারিহা থেমে যেতে হিমু রিজিয়ার মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল।
রিজিয়া বলল, এতক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কি দেখছ? যা বলার তাড়াতাড়ি বল।
হিমু যেন এতক্ষণ অন্য জগতে ছিল। রিজিয়ার কথায় বাস্তবে ফিরে এসে বলল, কি যেন বললে?
রিজিয়ার আগে ফারিহা বলে উঠল, বিয়ের আগে যদি রিজিয়ার মুখ দেখে বাস্তবজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বিয়ের পর কি করবেন আল্লাহ মালুম।
রিজিয়া মিষ্টি ধমক দিয়ে বলল, তোকে নিয়ে এসে ভুল করেছি, না আনাই উচিত ছিল।
ফারিহা বলল, বকছিস কেন? আমি তো আসতেই চাই নি, তুই তো জোর করে নিয়ে এলি।
হিমু হাসতে হাসতে বলল, প্লিজ তোমরা চুপ কর। তারপর রিজিয়াকে বলল, কি বললে বলবে তো?
রিজিয়া আগের কথাটা রিপিট করে বলল সুখ-দুঃখের খবরগুলো বল।
হিমু বলল, প্রথমে দুঃখের খবরটা বলছি। মাকে তোমার পরিচয় দিয়ে আমার সিদ্ধান্তের কথা বলি। আড়ং-এ তোমাকে দেখে মা পছন্দ করলেও তোমার পরিচয় জানার পর আমাকে খুব রাগারাগি করে বলল, পাড়াগাঁয়ের গরিব ঘরের এতিম মেয়ে এ বাড়ির বৌ হওয়ার উপযুক্ত নয়। তারপর মা যা কিছু বলেছিল সব বলার পর বলল, আমিও আর একবার আমার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছি। মা নিশ্চয় বাবাকে সব কিছু জানিয়েছে। তাই বাবা আমার ওপর খুব অসন্তুষ্ট। যদিও বাবা আমাকে বকাঝকা করে নি, তবু আমার ধারণা তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়ার জন্য আমাকে ফরেনে উচ্চ ডিগ্রি নিতে পাঠাবার কথা বলেছেন। আমি রাজি না হয়ে বলেছি, চেম্বার করে দাও, এখানেই প্র্যাকটিস করব। শুনে বাবা ভীষণ রাগারাগি করেছেন। আমিও বলেছি প্রয়োজনে যেদিক দু’চোখ যায় চলে যাব, তবু ফরেনে যাব না। আমার কথা শুনে বাবা আরো রেগে উঠে বলল, তাই যা। যে ছেলে মা-বাবার অবাধ্য, তার মুখ দেখতে চাই না। মা তখন বাবার ওপর রেগে গিয়ে বলল, আমাদের একমাত্র সন্তানকে এসব কথা বলতে পারলে? ও চলে গেলে আমরা কাকে নিয়ে বাঁচব? কে আমাদের এই সম্পত্তি ভোগ করবে? তারপর আমাকে প্রবোধ দিয়ে বলল, তোর বাবার কথায় রাগ করিস না। তোকে এখানে চেম্বার করে দেব। তারপর থেকে তারা আমার বিয়ে দেয়ার জন্য পাত্রী দেখে বেড়াচ্ছে। এই হল দুঃসংবাদ বলে তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল, ভয় পেয়ে দু’জনেরই মুখ শুকিয়ে গেছে।
রিজিয়া কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না।
ফারিহা ভেবেছিল রিজিয়া কিছু বলবে। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল, তা হলে তো খুব চিন্তার কথা। মা-বাবার মনে কষ্ট দিতে আল্লাহ কুরআন পাকে নিষেধ করেছেন। আপনি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তাদের মনে কষ্ট দেয়া মোটেই উচিত হবে না। তাদের অমতে গোপনে বিয়ে করলে ইহকালে যেমন সুখ-শান্তি পাবেন না, তেমনি পরকালেও দোযখের আগুনে জ্বলতে হবে।
হিমু বলল, ওসব কথা আমিও জানি। তাই মা-বাবার মনে কষ্ট না হয় সেই রকম একটা পথ আল্লাহ আমাকে করে দিয়েছেন।
রিজিয়া ভয়ে এতক্ষণ কোনো কথা বলে নি। হিমুর শেষের কথা শুনে বলল, সেই পথটার কথা বল।