রাকিব বলল, তাদের ব্যাপারটা আমি বুঝব। তুই মেয়ের বাবার সঙ্গে কথা বল।
শিহাব বলল, শুধু মেয়ের রূপ দেখে এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া তোর উচিত নয়। মেয়ের মা-বাবা ও তাদের পারিবারিক এবং সামাজিক পরিবেশ জানা উচিত। ওরা এখানকার আদিবাসী নয়। ঐ জায়গাটা ছিল হিন্দুদের মড়াচির। তারপর কুতুবউদ্দিন কিভাবে এখানে এসে বাস শুরু করেছিলেন সেসব বলে বলল, সাবেরা মানে যাকে তুই বিয়ে করতে চাচ্ছিস, তার দাদা হলেন কুতুবউদ্দিন। আর তারই ছেলে আযীয মাস্টার হল সাবেরার বাবা। সাবেরা জন্মাবার আগেই কুতুবউদ্দিন মারা যান। তার চার-পাঁচ বছর পর সাবেরার দাদিও মারা যান। ওরা হিন্দুদের মড়াচিরে থাকে বলে কেউ ওদের সঙ্গে মেলামেশা করে না। আযীয মাস্টার মেয়েকে এস.এস.সি. পর্যন্ত পড়িয়ে আর পড়ান নি। এ রকম একটা পরিবারের মেয়েকে তুই বিয়ে করতে চাইলেও আমি কিছুতেই মেনে নেব না। ভার্সিটিতে পড়ছিস, এসব কথা তোর বিবেচনা করা উচিত।
রাকিব বলল, তুই অবশ্য ঠিক কথা বলেছিস, কিন্তু কি জানিস, সাবেরাকে দেখে আমি শুধু মুগ্ধ হয় নি, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে যে রকম মেয়েকে জীবনসঙ্গী করার স্বপ্ন দেখে এসেছি, সাবেরা ঠিক তার মতো। এস.এস.সি. পাস হলেও আমি তাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে উচ্চ শিক্ষিত করে নেব। আর পরিবেশের কথা যে বললি, তার উত্তরে বলব, মানুষ যখন যে পরিবেশে থাকে তখন সেই পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়।
শিহাব বলল, তোর কথা কতটা সত্য জানি না। আমি তো জানি মানুষের অনেক স্বপ্ন থাকে। বাস্তবে তার ক’টা সফল হয়? তা ছাড়া মা-বাবা ও সোসাইটির কথা চিন্তা করবি না?
নিশ্চয় করব। তারা যে রাজি হবে না তা জানি। তাই তো তাদের না জানিয়ে বিয়ে করব। পড়াশোনা শেষ করে যখন বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করব এবং মা-বাবা যখন বিয়ে করার কথা বলবে তখন সব কিছু তাদেরকে জানিয়ে সাবেরাকে ঘরে নিয়ে আসতে বলব।
সাবেরার রূপ দেখে সত্যিই তুই পাগল হয়ে গেছিস। নচেৎ এরকম কথা বলতে পারতিস না। আরে বাবা, ঢাকায় কি সুন্দরী মেয়ের অভাব আছে? উঁচু সোসাইটির ধনী ঘরের এমন অনেক মেয়ে আছে, যারা সাবেরার থেকে হাজার গুণ ভালো। আর তুই যে পড়াশোনা শেষ করে বাবার ব্যবসায় নেমে সাবেরাকে তোলার কথা বললি, ভেবে দেখেছিস, পড়াশোনা শেষ করতে কত বছর লাগবে? এত বছর ওকে এখানে ফেলে রাখবি নাকি?
ফেলে রাখব কেন? বললাম না, ওকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে হোস্টেলে রেখে পড়াশোনা করাব।
একটা মেয়েকে হোস্টেলে রেখে পাঁচ-ছ’বছর পড়াতে কত খরচ জানিস?
না জানি না। তবে খরচের চিন্তা আমি করি না। যেমন করে তোক ম্যানেজ করব।
কিন্তু কথাটা তো বেশি দিন গোপন থাকবে না। সবাই জেনে গেলে কি করবি?
যতদিন সম্ভব গোপন রাখার চেষ্টা করব। তারপরও যদি জানাজানি হয়ে যায়, মা-বাবাকে সব কিছু জানাব।
শিহাব হেসে ফেলে বলল, তোর কথাগুলো একদম ছেলেমানুষের মতো। ক্লাস এইট পর্যন্ত আযীয মাস্টারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যেতাম। তখন থেকে ওকে ভালবাসতাম। অবশ্য সাবেরা সে কথা জানত না। কলেজে পড়ার সময় ওকে দেখার জন্য বিভিন্ন অসিলায় আযীয স্যারের কাছে যেতাম। আমাকে দেখলেই সাবেরা গায়ের ওড়না নাক পর্যন্ত ঢাকা দিয়ে ঘরে ঢুকে যেত। ছোটবেলা থেকে ও খুব সুন্দরী। বড় হয়ে আরো বেশি সুন্দরী হয়েছে। স্কুলে অনেকবার ওর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি; কিন্তু শুধু আমাকেই নয়, কোনো ছেলেকেই কাছে ঘেঁষতে দিত না। শেষে তোর মতো চিন্তাভাবনা আমিও করেছিলাম এবং কথাটা আমার ছোট মামাকে জানিয়েছিলাম। ছোট মামা আমার চেয়ে তিন বছরের বড় হলেও আমাদের সম্পর্ক বন্ধুর মতো। তোকে যেসব কথা বলে আমি বোঝালাম, ছোট মামা শুনে আমাকে সেইসব কথা বলে বুঝিয়েছিল। আমি বুঝতে পেরে সাবেরার চিন্তা বাদ দিয়েছি। তোকেও বলছি তুইও সাবেরার চিন্তা বাদ দিয়ে বেড়াতে এসেছিস বেড়িয়ে যা। ঢাকায় ফিরে গেলে ওর কথা আর মনে থাকবে না।
রাকিব বলল, সব মানুষ যেমন সমান হয় না, তেমনি সব মানুষের মনও সমান হয় না। তোর ছোট মামার কথায় তোর মন বুঝ মানলেও আমার মন মানে নি। তুই ও তোর মামা কেন, পৃথিবীশুদ্ধ লোক আমাকে বোঝালেও আমার মন বুঝবে না। আমি ওকে বিয়ে করবই। তুই শুধু আমাকে সাহায্য করবি কি না বল?
শিহাব কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, তোকে সাহায্য করব কি করব না সে কথা পরে বলছি। তার আগে আমার অসুবিধের কথা বলি। প্রথমত, তুই সাবেরাকে বিয়ে করলে তোর ও আমার গার্জেনরা আমাকে দায়ী করবেন। দ্বিতীয়ত, কোনো কারণে তুই যদি ওকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে পড়াশোনা করাতে না পারিস অথবা তোর মা-বাবা জেনে যাবার পর ডিভোর্স করায় তখন আযীয মাস্টারও আমাকে দায়ী করবেন এবং বাবার কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ করবেন। তখন আমার পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে দেখ।
রাকিব বলল, অত ভূমিকার কি দরকার ছিল? সোজাসুজি বললেই পারিস সাহায্য করবি না।
তুই আমাকে ভুল বুঝছিস কেন? তোকে সাহায্য না করার জন্য কথাগুলো বলি নি। বন্ধুকে অসুবিধের কথা বলাটা কী অন্যায় হল? এবার আমার মতামত শোন। কালকেই আমি আযীয মাস্টারের সঙ্গে আলাপ করে তোকে জানাব।
না, তুই আগে কিছু ওনাকে বলবি না। যা বলার আমিই প্রথমে বলব। তারপর উনি যদি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেন, তখন আমার সম্পর্কে যা জানিস সেটাই বলবি। তুই শুধু আমাকে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিবি।