ওটা হল ওনার ভিলেজ পলিটিক্স। মাত্র কিছুদিন হল গ্রামে এসেছিস। ভিলেজ পলিটিক্স বুঝতে তোর সময় লাগবে। যা বলছি শোন, গ্রামের কোনো ব্যাপারেই মাথা গলাবি না। তারপর বললেন, এবার যা, কাপড় পাল্টে হাত মুখ ধুয়ে আয়, আমি নাস্তা রেডি করছি।
জামাকাপড় পাল্টাবার সময় শফি মোবাইল না পেয়ে ভাবল, মনে হয় মারামারী করার সময় পড়ে গেছে। চেয়ারম্যানদের বাড়ির কেউ পেয়ে থাকলে পাওয়া যেতে পারে। নাস্তা খাওয়ার পর রবিউলের কাছে গেল। সালাম ও কুশল বিনিময় করে বলল, তোর মোবাইলটা দেতো।
রবিউল বলল, কেন, তোরটা কী হল?
চেয়ারম্যানের ছেলের ঘটনা বলে শফি বলল, মনে হয় মারামারী করার সময় পড়ে গেছে। ফোন করে জানব কে পেয়েছে।
রবিউল বলল, পেলেও কী দেবে?
দিক না দিক ফোন করেই দেখি। তুই মোবাইল দে।
মোবাইল বের করে দেয়ার সময় রবিউল বলল, আমার তো মনে হয় ফোন করে কোনো কাজ হবে না।
শফি তার কথার উত্তর না দিয়ে ফোন করল।
.
সালাউদ্দিন চেয়ারম্যান খুব ঘাগু লোক। ওনার বাইরের দিক খুব ভালো; কিন্তু মনের ভিতর জিলিপির প্যাঁচ। চোখের সামনে ছেলে ও তার বন্ধুদেরকে ভিন গ্রামের একটা ছেলে হাত পা ভেঙ্গে দিয়ে চলে যেতে দেখে তার সাহস ও শক্তির প্রশংসা করলেও মনে মনে চিন্তা করেছেন, সময় সুযোগ মতো ছেলেটার হাত পা লুলা করে দেবেন। ওনার এক ছেলেও এক মেয়ে। ছেলে মহসিন, মেয়ে রাহেলা। রাহেলা গ্রামের কলেজে বি.এ পড়ছে। আজ সকালে সে কলেজে গিয়েছিল। ফিরে এসে ফুপাত বোন ডালিয়ার কাছে ঘটনা শুনে খুব রেগে গেল। সে তার বাবার চরিত্র জানে। তার চরিত্র ও বাবার মতো। ঘটনা শুনে বলল, বাবা ছেলেটাকে কিছু না বলে যেতে দিল ভেবে খুব অবাক হচ্ছি। বাবা ঘরে আছে কিনা জানিস?
ডালিয়া বলল, কিছুক্ষণ আগে বেরিয়ে যেতে দেখেছি।
ভাইয়া কোথায়?
হাত প্লাস্টার করার জন্য ডাক্তারের কাছে গেছে।
রাহেলা ডালিয়ার চেয়ে দু’বছরের ছোট হলেও তার সঙ্গে তুই তোকারি করে। একদিকে মামাত ফুপাত বোন, তার উপর কিছুদিনের মধ্যে ননদ ভাজ সম্পর্ক হবে। তাই দু’জনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক।
এমন সময় মোবাইল রিং হতেই ডালিয়া অন করে কানের কাছে ধরে। চুপ করে রইল।
তাকে চুপ করে থাকতে দেখে রাহেলা বলল, কে ফোন করেছে রে? চুপ করে আছিস কেন?
ডালিয়া নিজের ঠোঁটে একটা আঙ্গুল ঠেকিয়ে তাকেও চুপ করে থাকতে ঈশারা করল।
রাহেলা মোবাইল সেটের দিকে চেয়ে ফিস ফিস করে বলল, এটা কার মোবাইল? ডালিয়া কিছু বলছে না দেখে ঝট করে তার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বলল, কে বলছেন?
এতক্ষণ অপরপ্রান্ত থেকে সাড়া না পেয়ে শফি চিন্তা করছিল, ফোন। রিসিভ করেও কথা বলছে না কেন?
রাহেলা যখন মোবাইল কেড়ে নিয়ে বলল কে বলছেন তখন শফি বলল, দেখুন মোবাইলটা আমার। পথে হারিয়ে গেছে। আপনার পরিচয়টা বলুন, আমি গিয়ে নিয়ে আসব।
রাহেলা বলল, আগে আপনার পরিচয় বলুন।
আমি চরদৌলতখান গ্রমের মরহুম আমিনুল ইসলামের ছেলে শফি।
ডালিয়া ঝট করে তার হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে লাইন অফ করে বলল, আজ সকালের দিকে যে ছেলেটা মহসিন ভাই ও তার বন্ধুদের। হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে এটা তার মোবাইল। মারামারি করার সময় রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল। সবার অলক্ষ্যে আমি কুড়িয়ে নিয়েছি।
রাহেলা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, সুযোগ যখন পেয়েছি তখন প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়ছি না।
ডালিয়া অবাক হয়ে বলল, মহসিন ভাই ও তার পাঁচজন বন্ধু নিয়ে আগের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে কি হাল হল এক্ষুনি বললাম। আর তুই মেয়েছেলে হয়ে কীভাবে প্রতিশোধ নিবি ভেবে পাচ্ছি না। ঐ মতলব বাদ দে।
আগের ঘটনা? সেটা আবার কী? কবেই বা ঘটেছিল বলতো।
ডালিয়া সেদিনকার সেই ঘটনা বলে বলল, আমি তো ছেলেটার তেমন অন্যায় কিছু দেখিনি; কিন্তু মহসিন ভাই রিভলবার বের করে তাকে গুলি করতে গিয়েছিল।
ঘটনা শুনে রাহেলা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রাগের সঙ্গে বলল, ছেলেটা মনে হয় খুব শক্তিশালী ও খুব লড়াকু। সেই অহংকারেই কাউকে গ্রাহ্য করে না। আমি ওর অহংকার চুরমার না করেছি তো আমার নাম পাল্টে রাখব।
কিন্তু কীভাবে করবি আমি তো ভাবতেই পারছি না।
তোকে কিছু ভাবতে হবে না। শোন, আমি নিজে কিছু করব না। যা করার বাবাকে দিয়ে করাব। এমন সময় আবার মোবাইল বেজে উঠতে রাহেলা তার হাত থেকে নিয়ে ধরে বলল, কে বলছেন?
শফি বলল, লাইন কেটে দিলেন কেন? আমি তো আমার পরিচয় বললাম। আপনারটা না বলেই লাইন কেটে দিলেন।
আমি সালাউদ্দিন চেয়ারম্যানের মেয়ে রাহেলা।
শফি সালাম দিয়ে বলল, মোবাইলটা নেয়ার জন্য এখন কী আসব?
রাহেলা সালামের উত্তর দিয়ে বলল, এখন না, বিকেল পাঁচটা সাড়ে পাঁচটার দিকে আসুন। এখন আমি বাড়ির বাইরে আছি।
তাই আসব বলে শফি লাইন কেটে দিল।
ডালিয়া রাহেলাকে বলল, আজই সুযোগটা নিবি বলে ছেলেটাকে মিথ্যে কথা বললি বুঝি?
হ্যাঁ, দেখি বাবা কী করে বলে রাহেলা নিজের মোবাইলে বাবাকে ফোন করল।
চেয়ারম্যান ফোন ধরে বুঝতে পারলেন, মেয়ে ফোন করেছে। বললেন, কীরে মা, কী খবর?
তুমি খুব তাড়াতাড়ি ঘরে এস, জরুরী কথা আছে।
কী এমন জরুরী কথা, বল না শুনি।
সেকথা ফোনে বলা যাবে না। তুমি তাড়াতাড়ি এস।
ঠিক আছে ঘন্টাখানেকের মধ্যে আসছি।