ডালিয়া আতংকিত হলেও সংযত কণ্ঠে বলেছিল, কাজটা কী ভালো হবে? মামা জানলে তোমাকেই রাগারাগি করবেন।
তা করুক, তুই কিন্তু বাবাকে আগে থেকে কিছু বলবি না। তারপর বলল, একেবারে কী জানে মারব, শুধু পাটায় করে তুলে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করব। তুই-ই বলনা, সেদিন আমাকে কত বড় অপমান করেছিল।
ডালিয়া বলল, সেদিন আমি দোষ করেছিলাম। তাই উনি আমাকে কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। তাতে ওনার দোষ কোথায়? বরং তুমি উল্টো ওনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলে। আসলে তুমি নিজের দোষে নিজে অপমানিত হয়েছ। উনি তোমাকে অপমান করেন নি।
মহসিন বিদ্রূপ কণ্ঠে বলল, কি ব্যাপার বলতো? তুই যে দেখছি ঐ শালা ছোটলোকের ফরে কথা বলছিস?
ডালিয়া বিদ্রূপটা গায়ে মাখল না। বলল কারও ফরে কথা বলতে যাব কেন? যা সত্য তাই বললাম। এই যে ওনাকে শালা ছোটলোক বললে, এতে ওনাকে অপমান করার চেয়ে নিজেই অপমানিত হলে বেশী।
মহসিন রেগে উঠে বলল, থাক, তোকে আর উপদেশ দিতে হবে না। শালা কতবড় বীর আজ দেখে ছাড়ব। আবার বলছি, তুই কিন্তু বাবাকে কিছু বলবি না।
ডালিয়া আর কিছু না বলে তার কাছ থেকে চলে এসেছিল। তারপর থেকে মহসিনের দিকে লক্ষ্য রেখেছিল। তাই মারামারির ঘটনাটা পুরো দেখে শফির প্রতি আকর্ষন আরও বেড়ে গেছে।
এখন মামা যখন জিজ্ঞেস করলেন, তুই ঐ ছেলেটার ব্যাপারে এতকিছু জানতে চাচ্ছিস কেন তখন লজ্জায় তার মুখটা রাঙা হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, এমনি মনে হল, তাই জিজ্ঞেস করলাম। তারপর ঘরে এসে গোসল করার কথা বলে ওনার কাছ থেকে চলে গেল।
চেয়ারম্যান প্রশ্নটা করে ভাগ্নির মুখের দিকে তাকিয়ে লজ্জারাঙা মুখ দেখেছেন। তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবলেন, ছেলেটা কী ওর মনে দাগ কেটেছে? হঠাৎ স্ত্রীর কথা মনে পড়ল, আমি ডালিয়াকে মহসিনের বৌ করে ঘরে আনব। অবশ্য তিনিও তাই চান। তাই তাদেরকে স্টাডি করে দেখেছেন, তারা একে অপরকে পছন্দ করে কিনা। আর ডালিয়ার মা বাবা তো এ ব্যাপারে এক পায়ে খাড়া।
০৪. টাইট ফিট প্যান্ট শার্ট পরা ডালিয়া
সেদিন টাইট ফিট প্যান্ট শার্ট পরা ডালিয়াকে হুন্ডা চালাতে দেখে শফি তার প্রতি খুব অসন্তুষ্ট হলেও মুখের দিকে চেয়ে মুগ্ধ হয়েছিল। আজ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার সময় ওনার পাশে তাকে শালওয়ার কামিজপরা অবস্থায় দেখে আরও মুগ্ধ হয়েছে। কথা বলতে বলতে যতবার তার দিকে চেয়েছে ততবারই চোখে চোখ পড়েছে। তখন তার মনে হয়েছে, মেয়েটিও তাকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে। ঘরে ফেরার পথে সে কথা মনে। পড়তে দেহ ও মনে এক অজানা শীহরণ অনুভব করল। এইসব চিন্তা করতে করতে ঘরে পৌঁছে গেল।
জমিলা খাতুন রান্নার জোগাড় করছিলেন। নাতিকে ফিরতে দেখে বললেন, এদিকে আয়।
শফি ওনার কাছে এসে সালাম বিনিময় করে বলল, দাদি কেমন আছেন?
জমিলা খাতুন বললেন, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। তোর নানাদের খবর সব ভালো?
শফি বলল, হ্যাঁ সব খবর ভালো।
জমিলা খাতুন তার বিধ্বস্থ চেহেরা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কীরে, তোর জামাকাপড়ের অবস্থা এরকম কেন? মনে হচ্ছে যেন মারামারী করে এসেছিস?
শফি মৃদু হেসে বলল, আপনি ঠিক বলেছেন। ফেরার সময় সালাউদ্দিন চেয়ারম্যানের গ্রামের কয়েকটা ছেলের সঙ্গে মারামারী করতে হয়েছে।
এই কয়েকদিনে জমিলা খাতুন জেনে গেছেন, শফি ধার্মিক হলেও খুব শক্তিশালী ও মারামারীতে পটু। এখন নাতির কথা শুনে বললেন, তুই ধার্মিক ছেলে হয়েও মারামারী করিস কেন?
কী করব বলুন, কেউ যদি আন্যায়ভাবে আমাকে মারতে আসে, তা হলে কী ধার্মিক বলে চুপ করে মার খাব?
তুই কিছু না করলে ছেলেগুলো শুধু শুধু তোকে মারতে আসবে কেন? গতকাল রবিউল তোর খোঁজে এসেছিল। তুই নানার বাড়ি গেছিস শুনে বলল, কয়েকদিন আগে নাকি তুই চেয়ারম্যানের ছেলেকে মেরেছিস। সেই ছেলে সুযোগ পেলে লোকজন নিয়ে তোকে পিটিয়ে বদলা নেবে।
হ্যাঁ দাদি, রবিউল ঠিক কথা বলেছে। আর আপনি যা অনুমান করেছেন তাও ঠিক। একটা কথা জেনে রাখুন, আমি যেমন কখনও কোনো অন্যায় করি না তেমনি কেউ অন্যায় করলে বরদাস্ত করতে পারি না। তারপর কয়েকদিন আগে চেয়ারম্যানের ছেলের সঙ্গে কেন গোলমাল হয়েছিল বলে বলল, আমাদের নবী করিম (দ.) বলেছেন, ।কাউকে কোনো অন্যায় কাজ করতে দেখলে অথবা কোথাও কোনো অন্যায় কাজ হতে দেখলে ক্ষমতা থাকলে বাধা দেবে। ক্ষমতা না থাকলে বুঝিয়ে নিষেধ করবে। বোঝাতে গেলে যদি তোমার ক্ষতি করতে পারে বলে মনে হয়, তা হলে মনে মনে। তার বা তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট বা ঘৃণাবোধ করে সেখান থেকে চলে আসবে। আর এটাই সর্ব নিম্নস্তরের ঈমানের প্রমাণ।
জমিলা খাতুন অল্পক্ষণ নাতির মুখের দিকে চেয়ে থেকে বললেন, এই হাদিস জানতাম না। তবু বলব আজকাল বেশির ভাগ মুসলমান ধর্মের অনেক কিছু জেনেও মেনে চলে না। তুই একা কতজনের প্রতিবাদ করবি।
চোখে যতটুকু হতে দেখব তার প্রতিকার করার চেষ্টা করব। আর এটা করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।
শুনেছি চেয়ারম্যান ভালো লোক নন। দু-দুবার তার ছেলেকে পিটিয়েছিস। তোকে সহজে ছেড়ে দেবে বলে মনে হয় না।
চেয়ারম্যানের সঙ্গে দুবার আলাপ হয়েছে। কথাবার্তা ও আচার ব্যবহার তো ভালই মনে হল।