ডালিয়া বাবার দু’পা জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল, তোমার সমস্ত কথা ঠিক হলেও আমার সব কথা শুনতে হবে। বর্তমানে ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভালোবাসার কথা যা শোনা যায়, আমাদের মধ্যে সেরকম কিছু হয়নি। ছেলেটার ধার্মিকতা, আদর্শ চরিত্র, সর্বোপরি তার সৎ গুণাবলী আমাকে এমনভাবে আকৃষ্ট করেছে, যা তাকে ভালোবাসতে বাধ্য। করেছে। তার সঙ্গে দু তিনবার দেখা ও খুব সামান্য আলাপ হলেও মনে হয়েছে তাকে যেন অনেক দিন থেকে চিনি। সে আমাকে ভালোবাসে কিনা জানতাম না। তারপর তার মোবাইল নাম্বার কী করে পেল, সে ঘটনা বলে বলল, থাকতে না পেরে আমিই তাকে ফোন করি। তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি সেও আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আর পাড়াগাঁয়ের ছেলেদের ব্যাপারে তুমি যা বললে তার শতভাগের একভাগও তার মধ্যে নেই। সকালে ফোন করে জানিয়েছে, আজ বিকেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। আমার কথা সত্য না মিথ্যা তার সঙ্গে আলাপ করলেই বুঝতে পারবে। তুমি যদি আমাদের দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে না দাও, তা হলে। কাল সকালে আমার মরা মুখ দেখবে। তারপর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
তানভীর সাহেব তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ডালিয়াকে সব থেকে বেশি ভালোবাসেন। তাই তাকে কাঁদতে দেখে ও তার কথা শুনে রাগ পড়ে গেল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মেয়ের হাত ধরে পাশে বসিয়ে বললেন। কোনো বাবাই মেয়ের এরকম অন্যায় আব্দার মেনে নেবে না। মরা মুখ দেখার কথা না বললে আমিও মেনে নিতাম না। বুঝতে পারছি তোকে সব থেকে বেশি। ভালোবাসি বলে আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে চাচ্ছিস। ঠিক আছে, তোদের দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করব, তবে আমিও থাকব।
বাবা বলে ডালিয়া ওনার দুটো হাত ধরে বলল, তোমার মতো বাবা। কারও আছে কিনা জানিনা। তারপর আবার বলল, নিশ্চয় তুমি আমাদের সঙ্গে থাকবে।
পরিচয় জানা থাকলে আলাপ করতে সুবিধে হবে ওর পরিচয় বল।
ওর নাম মুহাম্মদ শফি। ডাক নাম শফি। আরবি ও ইংরেজিতে উচ্চ শিক্ষিত। নয় দশ বছরের সময় ওর বাবা মারা যান। মা ও দাদি বেঁচে আছেন। বিষয় সম্পত্তি অনেক। গ্রামের নাম চরদৌলত খান। মামাদের গ্রামের পাশের গ্রাম।
ঠিক আছে, রেডি থাকিস। আমি ব্যবস্থা করে ফোন করে তোকে জানাব। তোর মায়ের ঘুম থেকে উঠার সময় হয়ে গেছে। আমি এবার যাই বলে তানভীর সাহেব যাওয়ার সময় বললেন, খুব সাবধান, তোর মা যেন ক্ষুণাক্ষরেও এসব জানতে না পারে।
ডালিয়া গোসল করে দু’রাকায়াত শোকরানা নামায পরে দোয়া করল, “ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাব্বল আলামিন, শফিকে যেন বাবার পছন্দ হয়। তাকে যেন স্বামী হিসাবে পাই।”