এবারে মামাবাড়ি থেকে ফিরে এসে ডালিয়া ভাবির সঙ্গে আগের মতো মেলামেশা করে না। একা মার্কেটে গিয়ে কুরআন হাদিসের ব্যাখ্যা ও অন্যান্য অনেক ইসলামিক বই কিনে এনেছে। অবসর সময়ে সেগুলো পড়ে প্রথমে নামায পড়তে শুরু করল। তারপর প্যান্টশার্ট পরা ছেড়ে দিয়ে সালোয়ার কামিজ ও ওড়না ব্যবহার করতে লাগল। বোরখা পরে ভার্সিটি যেতে লাগল। হুন্ডা চালানও ছেড়ে দিল।
তাই দেখে একদিন নাজিয়া তার রুমে এসে জিজ্ঞেস করল, কী ব্যাপার, তুমি যে দিন দিন পীর সাহেব বা মৌলভী সাহেবদের বাড়ির মেয়ের মতো অসূর্যস্পর্শা হয়ে যাচ্ছ? তা ছাড়া মহসিন ভাইয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ের ঠিক ঠাক হয়ে থাকা সত্ত্বেও তাকে কী এমন বলেছ যে, সে এখান থেকে চলে গেল? এসবের পিছনে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে? তা না হলে আমার সঙ্গেও মেলামেশা করছ না কেন?
ডালিয়া তাকে বসতে বলে বলল, দুনিয়াতে কারণ ছাড়া যখন কোনো কিছু ঘটে না তখন কিছু একটা তো আছেই।
নাজিয়া বলল, আমি সেই কিছু একটা শুনতে চাই।
তুমি ভাবি হলেও আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। তোমাকে বলব না তো কাকে বলব? তবে তার আগে একটা কথা বলতে চাই।
বেশ তো বল।
ইসলামের নির্দেশ হল, কারও সঙ্গে দেখা করতে গেলে প্রথমে দরজার বাইরে থেকে সালাম দিতে হবে। সালামের উত্তর না পাওয়া গেলে আরও দু’বার সালাম দিতে হবে। তারপরও যদি সালামের উত্তর না পাওয়া যায়, তা হলে ফিরে আসতে হবে। কারণ অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করা ইসলামে নিষেধ। একটা হাদিস বলছি, “একদা এক ব্যক্তি আসিয়া রসূল (দঃ)-কে প্রশ্ন করল, আমার মাতার নিকট গমন করিতে হলেও কি অনুমতি চাহিব? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। লোকটি বলিল, আমি তাহার সঙ্গে একই গৃহে বসবাস করি। রসূল (দঃ) বলিলেন, তবুও তাহার নিকট যাইতে অনুমতি চাও। লোকটি বলিল, আমি তাহার সেবা করি। রসূল (দঃ) বলিলেন, তবুও তাহার নিকট যাইতে অনুমতি চাও। তাহাকে কি তুমি উলঙ্গ দেখিতে আশা কর? লোকটি বলিল, না। তবে অনুমতি চাও।“[বর্ণনায় : আতায়া বিন ইয়াসার (রা.)-মালেক] তাই বলছিলাম, দরজার বাইরে থেকে সালাম দিয়ে ভিতরে আসার অনুমতি নেয়া উচিত।
নাজিয়া বলল, আমি তো তোমার মতো কুরআন হাদিস পড়িনি, জানব কী করে?
তুমি বোধ হয় জান না ভাবি। হাদিসে আছে, আমাদের নবী করিম (দঃ) বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা ফরয।” তারপর বলল, আমিও এসব জানতাম না। জানার জন্য এই সমস্ত কিতাব কিনে এনে পড়ছি বলে বুকসেলফ দেখাল। তুমিও পড়বে, তা হলে আল্লাহ ও তাঁর রসুল (দঃ) এর বিধি-বিধান মেনে চলার প্রেরণা পাবে।
নাজিয়া বলল, ঠিক আছে পড়ব। এবার তোমার পরিবর্তনের কারণটা বল।
কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে ডালিয়া বলল, বিশ্বাস করবে কিনা জানি না, একটা ছেলেকে দেখে ও তার কার্যকলাপ দেখে আমার জ্ঞানের চোখ খুলে গেছে। আর যার জ্ঞানের চোখ একবার খুলে যাবে, সে ধার্মিক হতে বাধ্য।
নাজিয়া বলল, নিশ্চয় ছেলেটা মৌলভী অথবা পীর সাহেবের ছেলে?
ডালিয়া বলল, আচ্ছা ভাবি, আজকাল শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা মৌলভী ও পীর সাহেবদের কথা শুনলে নাক সিটকায়, তাদেরকে বিদ্রূপ করে। কেন করে বলতে পার?
নাজিয়া বলল, তুমিও তো এতদিন তাদের দলে ছিলে, উত্তরটা তো তোমারও জানা থাকা উচিত।
ডালিয়া বলল, হ্যাঁ, তুমি ঠিক কথা বলেছ। এই কয়েকদিন ধর্মীয় বই পুস্তক পড়ে বুঝতে পারলাম, যারা ইসলামকে জানার মতো জানে না, কুরআন হাদিসের ব্যাখ্যা পড়ে না এবং ইসলামিক বই পুস্তকও পড়ে না, তারাই বিদ্রূপ করে ইসলাম পন্থীদের।
নাজিয়া বলল, আসল ঘটনা কিন্তু এড়িয়ে যাচ্ছ।
ঠিক এড়াইনি, কথা প্রসঙ্গে অন্যদিকে চলে গেছি। যাই হোক, এবার মামাবাড়িতে গিয়ে এমন একটা ছেলেকে দেখেছি, যার তুলনা সে নিজেই। কারও সঙ্গে তার তুলনা করা চলে না। আমার পরিবর্তনের কারণ সেই ছেলেটা।
কিছুই বুঝতে পারছি না। শুধু চোখের দেখা দেখে কি কেউ জীবনের গতি পরিবর্তন করতে পারে? নিশ্চয় কোনো ঘটনাকে উপলক্ষ্য করে ছেলেটাকে দেখেছ। ঘটনাটা বললে বুঝতে পারতাম।
ঘটনা তেমন কিছু নয়, তারপর প্রথম দিন রাস্তার ঘটনা ও তার কিছুদিন পর মহসিন ভাই বন্ধুদের নিয়ে যে ঘটনা ঘটিয়েছে এবং ছেলেটার মোবাইল সেট হারিয়ে যাওয়া ও ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে যতটুকু আলাপ হয়েছে, সেসব বলে ডালিয়া চুপ করে রইল।
নাজিয়া অল্পক্ষণ অপেক্ষা করে বলল, কিন্তু এসব ঘটনায় তোমার আমূল পরিবর্তনের কারণ তো খুঁজে পাচ্ছি না?
ডালিয়া বলল, মামাতো কোন রাহেলাও এই ঘটনায় তোমার মতো আমার পরিবর্তনের কারণ খুঁজে পায়নি। তবে গতকাল এক দুর্ঘটনার মাধ্যমে পেয়েছে। শুধু তাই নয়, যে নাকি ছেলেটার হাত-পা ভেঙ্গে লুলা করে দিতে চেয়েছিল, সে এখন তাকে পাওয়ার জন্য পাগল।
নাজিয়া অবাক হয়ে বলল, কী বলছ মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।
রাহেলা তার বাবার সঙ্গে পরামর্শ করে ভাইয়ার অপমানের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে কি ঘটনা ঘটাল ও রাহেলার দুর্ঘটনার কথা এবং কীভাবে শফি তার জান ও ইজ্জত বাঁচাল, সবকিছু জানিয়ে ডালিয়া বলল, গতকাল রাত বারটার পর রাহেলা ফোন করে তার দুর্ঘটনার কথা জানিয়েছে।
নাজিয়া বলল, তা হলে ঐ ছেলেটাই তোমারও মুন্ডু ঘুরিয়েছে? যার ফলে মহসিন ভাইকে আর পছন্দ করছ না।