শামীমাকে সালাউদ্দিন ভীষণ ভালোবাসতেন। তাই সে আইএ পাস করার পর যখন বলল, ঢাকা ভার্সিটিতে পড়বে তখন না করতে পারেননি। সেই বোন গোপনে বিয়ে করেছে শুনে যেমন খুব রেগে গেলেন, তেমনি বোনের উপর মনে কষ্টও পেলেন। রাগারাগি করাতে বললেন, তোমার কথা না শুনে ভুল করেছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও মা।
ফজিলা বেগম বললেন, ছেলেমেয়েরা অন্যায় করলে মায়েরা মাফ করবেই। এখন গিয়ে বোনের খোঁজ খবর নিয়ে দেখ, কোনো অজাত বেজাত ঘরের ছেলেকে বিয়ে করেছে কি না?
সালাউদ্দিন ঢাকায় এসে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলেন, ছেলেটা অজাত বেজাত ঘরের নয়। তবে ছেলের মা বাবা নেই। এক মামা তাকে মানুষ করেছেন এবং তিনি তাকে লেখাপড়া করিয়েছেন।
সালাউদ্দিন বোনের সাথে রাগারাগি করলেন না। তাদের বিয়ে মেনে নিলেন। তারপর অনেক টাকা পয়সা দিয়ে ছোটবোনের স্বামী তানভীরকে ব্যবসা করে দেন।
তানভীর মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে হলেও খুব ভদ্র, বুদ্ধিমান ও সৎ চরিত্রের অধিকারী। তাই কয়েক বছরের মধ্যে ব্যবসায় উন্নতি করে বাড়ি গাড়ি করেছেন। ওনাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে বড়, নাম তওফিক। সে লেখাপড়া শেষ করে বাবার সঙ্গে ব্যবসা করছে। তওফিকের পাঁচ বছরের ছোট ডালিয়া। সে ভার্সিটিতে বাংলায় অনার্স পড়ছে। এটা তার সেকেণ্ড ইয়ার। সবার ছোট আতিক। তানভীর সাহেব স্ত্রীর অমতে আতিককে প্রথমে হাফেজিয়া মাদরাসা থেকে হাফেজ করান। তারপর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় পড়াচ্ছেন। সেখানে সে মাদরাসার হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করছে।
তানভীর সাহেব মোটামুটি ধর্মের নিয়ম-কানুন মেনে চললেও ওনার স্ত্রী শামীমা বেগম মোটেই মেনে চলেন না। তিনি পর্দা প্রথাকে ঘৃণা করেন। তাই একমাত্র মেয়ে ডালিয়াকে নিজের মতো করে মানুষ করার চেষ্টা করেছেন। তানভীর সাহেব শ্বশুরবাড়ির টাকায় ব্যবসা করে ধনী হয়েছেন। তাই ধর্মের নিয়ম-কানুন মেনে চলার কথা স্ত্রীকে বললেও তেমন জোরালোভাবে বলতে পারেন না। তা ছাড়া তিনি শান্তিপ্রিয় লোক। তাই কোনো ব্যাপারেই স্ত্রীর সঙ্গে রাগারাগি করেন না। তবে মেয়ে ডালিয়াকে স্ত্রীর অগোচরে কুরআন হাদিসের কথা বলেন।
আতিক ছেলেবেলা থেকে নিয়মিত নামায রোযা করত। তাই তানভীর সাহেব তাকে মাদরাসায় পড়াচ্ছেন। এ ব্যাপারে শামীমা বেগম স্বামীর সঙ্গে বেশ রাগারাগি করেছেন। বলেছেন, নিজে মোল্লাহ, তাই আতিককেও মোল্লা করতে চাও।
বড় ছেলে তওফিক বাবার মতো হয়েছে। সে যাতে ধর্মের দিকে বেশি ঝুঁকে না পড়ে সেজন্য শামীমা বেগম নিজে পছন্দ করে বড়লোকের ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে নাজিয়াকে বড় বৌ করে এনেছেন।
নাজিয়া খুব চালাক-চতুর মেয়ে। স্বামীর বাড়ি এসে সেযে যেমন তার সঙ্গে তেমন ব্যবহার করে। ধর্মের বিধি-নিষেধ নিয়ে মাথা ঘামায় না। বলে ধর্ম নিজস্ব ব্যাপার। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা কারও উচিত নয়।
তওফিকও বাবার মতো শান্তিপ্রিয়। তাই ধর্মের ব্যাপারে স্ত্রীকে তেমন কিছু না বললেও তার এই কথার প্রতিবাদ করে বলে, তুমি ঠিক বলনি। প্রত্যেক মুসলমানকে ইসলামের বিধি বিধান মেনে চলতেই হবে। নচেৎ সে মুসলমান থাকবে কিনা সন্দেহ। তাদের ফাবিহা নামে দু’ বছরের একটা মেয়ে আছে।
ডালিয়া ছোটবেলা থেকে খুব জেদী ও খামখেয়ালি। একটা খেলনা এনে দিলে বড়জোর এক সপ্তাহ সেটা নিয়ে খেলবে। তারপর সেটা ভেঙ্গে ফেলে বলবে, এটা পুরোনো হয়ে গেছে বলে ভেঙ্গে ফেলেছি। অন্য আর একটা এনে দাও। ড্রেসের ব্যাপারেও তাই। এমন কি খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারেও সপ্তাহ অন্তর অন্তর খাবারের মেনু পাল্টাতে হত। অবশ্য কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ওরকম না করলেও মাঝে মাঝে বন্ধু-বান্ধবী চেঞ্জ করে।
তাই এবারে মামা বাড়িতে বেশ কিছুদিন থেকে ফিরে এসে মেয়েকে ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়তে দেখে শামীমা বেগম অসন্তুষ্ট হলেও ভাবলেন, এটাও তার খামখেয়ালি। কয়েকদিন পর ঐসব ছেড়ে দেবে। একদিন তিনি স্বামীকে কথাটা জানালেন।
শুনে তানভীর সাহেব খুশি হলেও স্ত্রীর মন রাখার জন্য মৃদু হেসে বললেন, ওর স্বভাব তো জান, কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখ এরকম কতদিন থাকে। তবে একটা কথা না বলে পারছি না, ডালিয়ার যদি এটা খামখেয়ালি না হয়ে আল্লাহ তাকে হেদায়েত দিয়ে থাকেন, তা হলে আল্লাহর দরবারে আমাদের শুকরিয়া জানান উচিত। কারণ ও দিন দিন যেভাবে উচ্ছল জীবন যাপন করছিল, সেকথা ভেবে আমি খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম।
শামীমা বেগম রেগে উঠে ঝংকার দিয়ে বললেন, তুমি তো এরকম কথা বলবেই। নিজে মোল্লা, তাই ছেলেমেয়েকেও মোল্লাহ বানাতে চাও। সেজন্যেই আতিককে আমার কাছ থেকে সরিয়ে মাদরাসায় পড়াচ্ছ।
স্ত্রী রেগে গেলে তানভীর সাহেব সব সময় চুপ করে থাকেন। এখনও চুপ করে রইলেন।
শামীমা বেগম ডালিয়াকে ছোটবেলা থেকে নিজের মতো করে মানুষ করেছেন। তাই সে যত বড় হয়েছে তত আপটুডেট হয়েছে। টাইটফিট প্যান্ট শার্ট পরে ভার্সিটি যায়। তাদের গাড়ি থাকলেও ব্যবহার করে না। শামীমা বেগম স্বামীকে দিয়ে মেয়ের জন্য হুন্ডা কিনিয়েছেন। ডালিয়া হুন্ডা নিয়ে সবখানে যাতায়াত করে। ভাবি নাজিয়ার সঙ্গে তার খুব ভাব। হুন্ডায় চড়িয়ে তাকে নিয়ে বেড়াতে যায়, মার্কেটিং করতে মার্কেটে যায়।