অফকোর্স।
তা হলে আমিও এখন তোমাকে মাফ করে দিলাম।
কবে আসছ?
তুমি বললে এক্ষুনি রওয়ানা দেব।
ডালিয়া মুখ থেকে আবার সত্য বলছ তো কথাটা বেরিয়ে যাচ্ছিল। সামলে নিয়ে বলল, এক্ষুনি রওয়ানা দিলে নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করব।
আমার বুঝি তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করে না?
সেকথা আমার চেয়ে তুমি ভালো জান।
জমিলা খাতুনও ফজরের নামাজ পড়ে কুরআন তেলাওয়াত করছিলেন। তেলাওয়াত শেষ করে ইসরাকের নামায পড়ে বেরিয়ে এসে শফিকে ফোনে কথা বলতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কার সঙ্গে কথা বলছিস?
দাদিকে রুম থেকে বেরোতে দেখেই শফি ডালিয়াকে বলল, আল্লাহ রাজি থাকলে এক্ষুনি রওয়ানা দেব। তাই লাইন কেটে দিচ্ছি বলে মোবাইল অফ করে দিল। তারপর দাদিকে বলল, ঢাকা থেকে ফোন এসেছিল, আমাকে এক্ষুনি রওয়ানা দিতে হবে। আপনি নাস্তা রেডি করুন, আমি গোসল করে আসি। জমিলা খাতুন জানেন, শফি নিজের থেকে কিছু না বললে কোনো কথার উত্তর দেয় না। তাই কে এবং কেন ফোন করেছিল জিজ্ঞেস না করে নাস্তার জোগাড়ে গেলেন।
১০. চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন একদিন
চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন একদিন মেয়ের উপর হামলাকারী তিনজনের খোঁজ নিতে শামসের নামে একজন চামচাকে কালকিনি পাঠালেন।
শামসের ফিরে এসে জানাল, এমপি সাহেবের ছেলে জুলহাসের কোমর ভেঙ্গে গেছে। সে কুঁজো হয়ে চলাফেরা করে।
যে তলপেটে আঘাত পেয়েছিল, তার একটা কিডনী নষ্ট হয়ে গেছে। আর যে ঘাড়ে আঘাত পেয়েছিল, তার ঘাড় বসে গেছে। জীবনে কোনোদিন আর ঘাড় ঘোরাতে পারবে না।
চেয়ারম্যান তিনজনের পরিণতির কথা মেয়েকে জানিয়ে বললেন, বিচার আল্লাহই করে দিয়েছেন। আর কিছু করার দরকার নেই। করতে গেলে এমপি সাহেব শফির কথা জানতে পারবেন। তখন আবার শফিকে নিয়ে টানাটানি পড়বে। ক্ষমতার জোরে আইনের প্যাঁচে ফেলে তাকে জেলে পাঠাতে পারেন অথবা তার অন্য কোনো ক্ষতি করতে পারেন। তুই তো আবার শফির কোনো ক্ষতি হোক চাস না।
রাহেলা বলল, আল্লাহ যখন বিচার করে দিয়েছেন তখন আর কিছু করার দরকার নেই। আচ্ছা বাবা, এমপি সাহেব যদি তোমাকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করেন, কে আপনার মেয়েকে তিনজন সন্ত্রাসীর হাত থেকে উদ্ধার করেছে? তখন কী বলবে?
ওসব নিয়ে তুই চিন্তা করিস না। বলব, আমি তাকে দেখিনি।
কিন্তু যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ছেলেটাকে চিনি কিনা?
বলবি, ছেলেটাকে ঔদিনের আগে কখনও দেখিনি, আর পরেও দেখিনি।
কী জানো বাবা, আমার যেন কেমন ভয় ভয় করছে। তুমি বোরখা কিনে দেবে। বোরখা পরে কলেজে যাব। আর একা যাব না। সঙ্গে একজন লোক দেবে।
চেয়ারম্যান বললেন, ঠিক আছে, তাই হবে। আর শোন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যাদেরকে ভয় পাওয়ার কথা তারা তো একরকম পঙ্গু হয়ে গেছে। তা ছাড়া আমার সাহায্যে বসির মোল্লা ভোটে জিতে এমপি হয়েছেন। ইলেকসানের সময় নানাভাবে সাহায্য করেছি। যখন জানবেন, তার ছেলে বন্ধুদের নিয়ে আমার মেয়ের ইজ্জৎ নষ্ট করতে চেয়েছিল তখন এটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করবেন বলে মনে হয় না। শুনেছি, ওদের প্রত্যেকের। বুক পকেটে একটা করে চিরকুট পাওয়া গেছে। সেগুলোতে লেখা ছিল, কি জন্যে তাদেরকে এরকম শাস্তি দেয়া হল।
বাবার কথা শুনে রাহেলা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, একেই বলে আল্লাহর বিচার। তুমি কিন্তু বোরখা কিনে না আনা পর্যন্ত আমি কলেজে যাব না।
এতদিন শফির ভালোমন্দ চিন্তা করে রাহেলা তার ফোন নাম্বার জানা সত্ত্বেও ফোন করেনি। আজ বাবার কথা শুনে নিশ্চিন্ত হয়ে রাত সাড়ে ন’টার সময় ফোন করল।
শফি সবেমাত্র খেয়ে নিজের রুমে এসেছে। মোবাইল বেজে উঠতে অচেনা নাম্বার দেখে ভাবল, কেউ দুষ্টুমী করে মিস কল দিয়েছে, নচেৎ রং নাম্বারে ফোন করেছে। তাই লাইন কেটে দিল। একটু পরে আবার মোবাইল বেজে উঠতে একই নাম্বার দেখে নিশ্চিত হল কেউ দুষ্টুমী করছে। তাই এবারও লাইন কেটে দিয়ে সুইচ অফ করে দিল। বলাবাহুল্য সে রাহেলার মোবাইল নাম্বার জানে না।
রাহেলা আবার ফোন করে বুঝতে পারল, শফি মোবাইলের সুইচ অফ করে দিয়েছে। তবু কিছুক্ষণ পরপর ফোন দিতে লাগল।
আজ শফিকে ফোন করার পালা ডালিয়ার। তাই সাড়ে দশটা বেজেছে দেখে শফি মোবাইলের সুইচ অন করে বালিশে মাথা রাখল। ডালিয়াও সে সময়ে প্রতিদিন শুয়ে শুয়ে ফোনে আলাপ করে। আজ বালিশে মাথা রাখার সাথে সাথে মোবাইল বেজে উঠতে নাম্বার দেখে বুঝতে পারল, সাড়ে নটার সময় যে ফোন করেছিল তারই নাম্বার। ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলল, আপনি প্রায় একঘণ্টা আগে থেকে ফোন করছেন কেন? কে আপনি?
রাহেলা সালামের উত্তর দিয়ে বলল, কেমন আছেন? চিনতে পারছেন?
শফির স্মরণশক্তি খুব প্রখর। একবার কাউকে দেখলে অথবা কারও সঙ্গে আলাপ করলে বহুদিন পর্যন্ত মনে থাকে। তাই চিনতে পেরে বলল, হ্যাঁ চিনতে পেরেছি। আপনি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সাহেবের মেয়ে রাহেলা। কিছু মনে নেবেন না, আপনার মোবাইল নাম্বার জানা ছিল না। তাই দুষ্টুমি করে কেউ মিসকল দিচ্ছে ভেবে প্রথমে রিসিভ করিনি। পরে বার বার রিং হতে সুইচ অফ করে দিয়েছি।
রাহেলা বলল, না, কিছু মনে করিনি।
তা ফোন করেছেন কেন? এনি প্রবলেম? সে
কথা পরে, আগে বলুন কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?