তার কথা শুনে ডালিয়ার হার্টবিট বন্ধ হবার উপক্রম হল। কিছু না বলে অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে নিজেকে সামলানর চেষ্টা করতে লাগল।
রাহেলা বলল, কীরে, চুপ করে আছিস কেন? আমার সিদ্ধান্ত ঠিক না বেঠিক বলবি তো?
ডালিয়া ততক্ষণে সামলে নিয়েছে। বলল, জেনেছি আল্লাহ যার সঙ্গে যার জোড়া করে পয়দা করেছেন তার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শোন, ঘড়ির। দিকে চেয়ে দেখ কটা বেজেছে। আমার মাথা ধরেছে। এখন রাখছি বলে লাইন কেটে দিল।
তারপর ডালিয়া আর ঘুমাতে পারল না। চিন্তা করতে লাগল,রাহেলা প্রেম নিবেদন করলে শফি কী করবে? আবার রাহেলা যখন জানবে তার আগেই আমরা প্রেমে পড়েছি তখন সে কী করবে? এইসব চিন্তা করতে করতে ফজরের আজান হয়ে গেল। বাথরুমের কাজ সেরে অজু করে এসে নামায পড়ে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে গুনাহখাতা মাফ চেয়ে শফিকে স্বামী হিসাবে পাওয়ার জন্য দোয়া করল। তারপর কিছুক্ষণ কুরআনের ব্যাখ্যা ও কিছুক্ষণ হাদিস পড়তে পড়তে ঘুম পেতে ঘুমাতে গেল। কিন্তু চোখে ঘুম এল না। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে পড়ে থেকে চিন্তা করতে লাগল, শফি এতদিন ফোন করেনি কেন? তাকে ফোন করলেও ধরেনি কেন? এখন ফোন করে দেখা যাক কী হয় ভেবে ফোন করল।
শফি মসজিদ থেকে ফজরের নামায পড়ে এসে প্রতিদিনের মতো আজও কুরআন তেলাওয়াত করছিল। মোবাইল বেজে উঠতে কুরআন বন্ধ করল। তারপর নাম্বার দেখে বুঝতে পারল, ডালিয়া ফোন করেছে। এর আগে যতবার করেছে ততবার শফি ইচ্ছা করে ধরেনি। কারণ শহরের বড় লোকের শিক্ষিত ছেলে মেয়েদের ব্যাপারে অনেক কিছু শুনেছে। তারা অনেকের সঙ্গে প্রেম করে। এখন মোবাইল চালু হওয়ার পরে তাদের প্রেমিক প্রেমিকার সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। অবশ্য ডালিয়া সেরকম মেয়ে নয় বুঝতে পারলেও মহসিনের সঙ্গে তার বিয়ের কথা এক রকম পাকা হয়েই আছে সেকথা সে জানে। তাই তার প্রেমের গভীরতা ও সত্য মিখ্যা যাচাই করার জন্য ফোন রিসিভ করেনি। আজ রিসিভ করে সালাম দিল।
শফিকে ফোন রিসিভ করে সালাম দিতে শুনে আনন্দে ডালিয়ার হার্টবিট বেড়ে গেল। এতদিন ফোন রিসিভ না করার ফলে তার প্রতি ডালিয়ার যত রাগ অভিমান ছিল, সেসব গলে পানি হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সামলে নিয়ে সালামের উত্তর দিয়ে তবু ফুঁপিয়ে উঠল।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শফি বলল, কান্না মানুষের মনের ময়লা দূর করে দেয়।
ডালিয়া কান্নাভেজা কন্ঠে বলল, আমাকে কষ্ট দিয়ে খুব আনন্দ পান তাই না?
তাই বুঝি আপনার মনে হয়?
এতদিন অসংখ্যবার ফোন করেছি, রিং হয়ে হয়ে কেটে গেছে, এটাই কী তার প্রমাণ নয়?
যা বলব বিশ্বাস করবেন?
এ জগতে কাউকে যদি বিশ্বাস করি, তিনি হলেন আপনি।
আপনি ফোন করলে মোবাইলে যতক্ষণ রিং হতে থাকে ততক্ষণ আমার হৃদয় আনন্দে তড়পাতে থাকে। তখন নিজের সত্ত্বা হারিয়ে ফেলি। তাই ফোন রিসিভ করার কথা মনেই থাকে না।
শফির কথা শুনে ডালিয়ার হৃদয়ে আনন্দের তুফান দেড়শ দুশ মাইল বেগে বইতে শুরু করল। কোনো রকমে সুবহান আল্লাহ বলে অনেকক্ষণ চুপ করে রইল।
চুপ করে আছেন কেন? কথাটা বিশ্বাস হচ্ছে না?
ডালিয়া অনেক কষ্টে তুফানের বেগ সামলে নিয়ে বলল, এক্ষুনি কী বললাম মনে নেই বুঝি? আবার বলছি “এ জগতে কাউকে যদি বিশ্বাস করি, তিনি হলেন আপনি।” তারপর আবার বলল, আপনার কথা শুনে হৃদয়ে আনন্দের যে তুফান উঠেছিল, তা সামলাবার জন্য কথা বলতে পারিনি।
তোমার ভালো নাম কী? শাকেরা সাবিহা।
বাহ- খুব সুন্দর নাম। নামের অর্থ জান?
আগে জানতাম না, কয়েকদিন আগে একটা নামের বই কিনে এনে জেনেছি।
শফি বলল, আমি কিন্তু তোমাকে তুমি করে বলছি। কারণ এখন আর আপনি করে বলা ঠিক নয়। তুমিও তাই বলবে।
না বাবা না, আমি পারব না।
কেন পারবে না।
আপনি সব বিষয়ে আমার থেকে অনেক বড়। তা ছাড়া আপনি কত মহৎ। মহৎ ব্যক্তিকে ছোটর তুমি করে বলা কি উচিত?
না, উচিত নয়, তোমার আমার সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে সেখানে আপনি করে বলা মানে প্রেমকে অপমান করা। এবার তুমি করে বলবে নিশ্চয়? তবু যখন ডালিয়া চুপ করে রইল তখন বলল, তুমি করে না বললে লাইন কেটে দেব। পরে রিং করলেও রিসিভ করব না।
তোমার দীল খুব শক্ত তাইতো শুধু আমাকে কাঁদাও।
তুমি করে বলছ যখন তখন আর কাদাব না।
প্ৰমিশ?
প্রমিশ। এবার খুশিতে কৃতজ্ঞতা স্বীকার কারিনী বালিকা?
আমি বুঝি এখনও বালিকা?
তাতো বলিনি, তোমার নামের অর্থ বলেছি।
তোমার নামের অর্থ কি?
শফি অর্থ অনুস্বরণকারি।
নামের আগে পরে কিছু নেই?
পুরো নাম মুহাম্মদ শফি। মুহাম্মদের অর্থ হল প্রশংসিত।
তোমার নামটা আমার নামের থেকে ভালো। একটা কথা বলতে খুব ইচ্ছা করছে।
ইচ্ছা যখন করছে তখন দেরি না করে বলেই ফেল।
তুমি মাইন্ড করবে না বল?
না, করব না।
তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে।
এই ইচ্ছাও পূরণ হবে।
কী করে?
সেটা তোমার ব্যাপার। কী করে করবে সে উপায় তুমি বের কর।
যদি তোমাকে আসতে বলি?
বলেই দেখ না।
সত্যি বলছ?
কিছুক্ষণ আগে তুমিই তো বললে, নিজের থেকে বেশি আমাকে বিশ্বাস কর। এখন আবার সত্য মিথ্যার প্রশ্ন আসছে কেন?
হঠাৎ মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। মাফ করে দাও।
আমারও মুখ দিয়ে হঠাৎ যদি কখন কিছু বেরিয়ে যায়, তা হলে মাফ করে দেবে তো?