প্রায় পঁচিশ দিন আগের হবে।
এতদিন না জানিয়ে আজ জানালি কেন?
মনে করেছিলাম ভাইয়া তোকে বলেছে।
মহসিন ভাই তো আমাদের এখানে আর থাকে না।
রাহেলা অবাক হয়ে বলল, কই, সেকথা তো জানি না।
তারপর জিজ্ঞেস করল, কোথায় থাকে তা হলে?
তার এক বন্ধুর বাসায় পেয়িং গেষ্ট হিসাবে থাকে।
কবে থেকে বলতো?
এবারে ঢাকায় ফিরে এসে মাত্র দু’তিন দিন আমাদের বাসায় ছিল। তারপর চলে গেছে।
ফুপা ফুপু বাধা দেন নি?
তা আবার দেয়নি। তাদের কথা শুনেনি।
চলে যাওয়ার পিছনে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে?
তা আছে।
কারণটা বলতে শুনি।
কারণটা আমি। তোর কারণে ভাইয়া অন্য জায়গায় চলে গেল, ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না, খুলে বল।
ডালিয়া বলল, একজনকে অসিলা করে আল্লাহ আমাকে হেদায়েত দিয়েছেন। আগের মতো এখন আর হুন্ডায় চড়ে কোথাও যাই না। বোরখাপরে সব জায়গায় যাতায়ত করি। ভার্সিটিতেও বোরখা পরে যাই। মহসিন ভাই বাড়ি থেকে এসে সব কথা শুনে খুব রেগে গিয়ে আমাকে এসব পাগলামী ছাড়তে বলল। তার কাছে ইসলামের বিধি বিধান মেনে চলা নাকী পাগলামী। যাই হোক, আমি ঐ সব ছাড়তে রাজি না হতে খুব তর্ক বিতর্ক করে শেষে আমার উপর রাগ করে দু’তিন দিন পর বন্ধুর বাসায় চলে গেছে।
তুই যেতে দিলি কেন? আফটার অল কয়েকমাস পরে তোদের যখন বিয়ে হচ্ছে।
কারও ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা আমি পছন্দ করি না। তা ছাড়া সে তো ছোট না, যে তাকে জোর করে ধরে রাখব।
ফুপাফুপি ভাইয়ার চলে যাওয়ার কারণ জানেন?
জানে।
ওনারা তোকে কিছু বলেন নি?
তা আবার বলেন নি। বাবা অল্প রাগারাগি করলেও মা ভীষণ রাগারাগি করেছে।
তা তোর ঘাড়ে এরকম ভূত চাপলো কেন?
ভূত চাপেনি। বললাম না, একজনকে অসিলা করে আল্লাহ আমাকে হেদায়েত দিয়েছেন?
তোর পাগলামী দেখে ফুপাফুপি কিছু বলেননি?
বাবা কিছু বলেনি। রাগারাগী করে বলল, এসব বুড়ো বয়সের ব্যাপার এখন কার কথায় এরকম পাগলামী করছিস? তা ছাড়া মহসিন যখন এসব পছন্দ করে না তখন এসব করা ঠিক নয়। হাজার হোক কিছুদিনের মধ্যে তার সঙ্গে তোর বিয়ে হবে। তার কথা তোর মেনে চলাই উচিত। বললাম…
তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে রাহেলা বলে উঠল, ফুফু তো ঠিক কথা বলেছেন।
ডালিয়া বলল, যারা কুরআন হাসিদের ব্যাখ্যা পড়েনি তাদের কাছে ঠিক। কারণ শুধু স্বামী কেন, মা বাবাও যদি ইসলামের পরিপন্থি কোনো কাজ করতে বলে, তবু মানা চলবে না। আল্লাহ ও তাঁর রসুল (দ.) তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে বলেছেন। তুই তো কুরআন হাদিস পড়িসনি, এসব কথা জানবি কী করে? জেনে রাখ, জান গেলেও এপথ থেকে কেউ আমাকে ফেরাতে পারবে না।
রাহেলা বলল, এ পথ থেকে না ফিরলে ভাইয়া যদি তোকে বিয়ে করতে চায় না, তবু ফিরবি না?
ডালিয়া দৃঢ়স্বরে বলল, না, ফিরব না। এবার আমার কথা শোন, তোর ভাইয়া যদি আমি যে পথে চলেছি সেই পথে না চলে, তা হলে আমিও তাকে বিয়ে করব না। কারণ ধার্মিক ছেলে মেয়ের সঙ্গে ধর্ম বিমুখ ছেলে মেয়ের বিয়ে হওয়া যেমন একদম উচিত নয়, তেমনি তাদের দাম্পত্য জীবনও মোটেই সুখের হয় না। বরং দোযখের মতো অশান্তির আগুনে তারা সারাজীবন পুড়তে থাকে।
রাহেলা বলল, তুই যে বললি, একজনকে অসিলা করে আল্লাহ তোকে হেদায়েত দিয়েছেন, তা সেই একজনটা কে?
এখন বলতে পারব না।
কখন বলতে পারবি?
আল্লাহ যখন বলাবেন তখন বলব। তারপর ডালিয়া বলল, আমার কথা রেখে এবার তোর কথা বল। এতরাতে শুধু মোবারক লেঠেলের হাত ভাঙ্গার ঘটনা বলার জন্য নিশ্চয় ফোন করিসনি?
ভাইয়া ডালিয়াদের বাসা থেকে চলে গেছে শুনে রাহেলার খারাপ লাগছিল।
এখন তার কথা শুনে মন ভালো হয়ে গেল। বলল, তুই ঠিক বলেছিস। আজ একটা দুর্ঘটনার মাধ্যমে আমার মনে যে বিপ্লবের সৃষ্টি হয়েছে তা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।
তাই না কী? তা হলে তো দুর্ঘটনা ও বিপ্লবের কাহিনী শুনতেই হয়।
বলছি শোন, বলে রাহেলা এম.পি. সাহেবের ছেলে জুলহাসের সঙ্গে প্রথম দিনের সাক্ষাৎ থেকে আজ কলেজ থেকে ফেরার পথে যা কিছু ঘটেছে সব বলে ভিজে গলায় বলল, ঐ সময়ে শফি এসে যদি উদ্ধার না করতেন, তা হলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় থাকত না। কথা শেষ করে রাহেলা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
মোবারক লেঠেলের পরিণতির কথা শুনে শফির প্রতি ডালিয়ার শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গিয়েছিল। এখন আবার শফি তিনজন সন্ত্রাসীর সঙ্গে লড়াই করে রাহেলার ইজ্জৎ বাঁচিয়েছে শুনে সেই শ্রদ্ধা হাজারগুণ বেড়ে গেল। সেই সাথে তার প্রতি ভালবাসাও লক্ষগুণ বেড়ে গেল। বলল, তুই কাঁদছিস কেন? আল্লাহ শফির দ্বারা তোকে সাহায্য করেছেন। সেজন্যে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানা।
রাহেলা কান্না থামিয়ে বলল, তাতো জানিয়েছি। তারপর আবার বলল, শুনে তুই কী মনে করবি জানি না; ঐ ঘটনার পর থেকে শফি নাম আমার হৃদয়ের স্পন্দনের সঙ্গে স্পন্দিত হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা আমাকে সম্পূর্ণ না হলেও প্রায় বিবস্ত্র করে ফেলেছিল। শফি তাদেরকে অজ্ঞান করে নিজের গায়ের পাঞ্জাবী খুলে আমায় পরতে দিয়েছিল। সে সময় সে আমার শরীরের উপরের অনেক গোপন অংশ দেখেছে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকেই বিয়ে করব। তাকে পাওয়ার জন্য আমিও তোর মতো জীবনের গতি পাল্টে ফেলব ভেবেছি। শুনেছি শফি খুব ধার্মিক। তাই আমিও ধার্মিক হবার চেষ্টা করব।