চেয়ারম্যান রাতে ঘরে ফিরে স্ত্রীর কাছে মেয়ের দুর্ঘটনার কথা শুনে তাকে ডেকে পাঠালেন।
রাহেলা এসে মায়ের কাছে বসল।
চেয়ারম্যান জিজ্ঞেস করলেন, তোর মায়ের কাছে যা শুনলাম তা কি সত্য?
রাহেলা ফুঁপিয়ে উঠে দু’হাতে মুখ ঢেকে বলল, হ্যাঁ বাবা, সত্য। তুমি এম.পি সাহেবকে ঘটনা জানিয়ে বিচার চাইবে।
চেয়ারম্যান বললেন, আমি তো ভাবতেই পারছি না ঘটককে ফিরিয়ে দিয়েছি বলে এম.পি সাহেবের ছেলে এরকম জঘন্য কাজ করবে?
রাহেলা রাগের সঙ্গে বলল, এম.পি. সাহেব ঘটককে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, সেকথা আমাকে জানাওনি কেন?
জানাবার প্রয়োজন মনে করিনি। কারণ ওনার ছেলেকে কয়েকবার দেখেছি। কালো কুৎসিত এবং মুখের শ্রীও ভালো না। তাই তোকে না। জানিয়ে ঘটকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি।
তবু আমাকে জানানো উচিত ছিল। তুমি কিন্তু এম.পি. সাহেবকে ঘটনা জানিয়ে বিচার চাইতে ভুলবে না।
পুরো ঘটনাটা বলতে শুনি।
রাহেলা পুরো ঘটনা জানিয়ে ছলছল চোখে বলল, শফি যদি ঐ সময়ে এসে না পড়তেন, তা হলে তোমরা আমার লাশ সেখান থেকে নিয়ে আসতে। তারপর চোখ মুছে আবার বলল, আমার একটা কথা রাখতেই হবে। বল রাখবে?
রাখব, বল কী কথা।
ভবিষ্যতে আর কখনও শফির এতটুকু ক্ষতি করার চেষ্টা করবে না। মনে রাখবে, তিনি তোমাদের মেয়ের শুধু ইজ্জৎ রক্ষা করেন নি, পুনর্জন্মও দিয়েছেন। ভাইয়াকেও ফোন করে ঘটনা জানিয়ে বলে দিও, সেও যেন। শফির এতটুকু ক্ষতি করার চেষ্টা না করে। তারপর চোখ মুছতে মুছতে সেখান থেকে চলে গেল।
চেয়ারম্যান স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, মেয়ের কথা শুনে কিছু বুঝতে পারলে?
আখতার বানু বললেন, না বোঝার কী আছে? শফি মহসিনকে দু’বার অপমান করেছিল? তাই তোমরা তাকে মারধর করে পঙ্গু করে দিতে চেয়েছিলে। তবু শফি আজ আমাদের মেয়েকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করে ঘরে পৌঁছে দিয়ে গেছে। তাই রাহেলা তার ক্ষতি করতে নিষেধ করল।
চেয়ারম্যান মৃদু হেসে বললেন, একেই বলে মেয়ে মানুষের বুদ্ধি।
আখতার বানু মুখ ভার করে বললেন বুদ্ধি আবার বুঝতে কী দোষ করল?
চেয়ারম্যান বললেন, যা শুনলে তা মেয়ের মুখের কথা, অন্তরের কথা হল, রাহেলা শফিকে ভালবেসে ফেলেছে।
তোমার যেমন কথা বলে আখতার বানু রাগে গরগর করতে করতে সেখান থেকে চলে গেলেন।
রাত্রে ঘুমাবার সময় রাহেলা চোখের পাতা এক করতে পারল না। চোখ বন্ধ করলেই দূর্ঘটনার কথা মনে পড়তে লাগল। সেই সাথে উদ্ধারকর্তা শফি কীভাবে বদমাস তিনজনকে অজ্ঞান করে তাকে বাঁচাল। তার অনিন্দ্য সুন্দর মুখটা মনের পাতায় ভেসে উঠতে লাগল। হঠাৎ ডালিয়ার কথা মনে পড়তে ফোন করল।
.
ডালিয়া কয়েকদিন শফির কথা চিন্তা করে করে ঘুমাতে পারছে না। সেদিনের পর প্রায় প্রতি রাতে তাকে ফোন করে। রিং হয়ে হয়ে লাইন কেটে যায়, তবু শফি ফোন ধরে না। আজও রাত এগারটার পর থেকে কিছুক্ষণ পর পর ফোন করছিল; কিন্তু শফি ফোন না ধরায় মনে কষ্ট পেলেও তার উপর রাগ করতে পারছে না। কারণ তার প্রতিটা শ্বাস-প্রশ্বাসে শফির কথা মনে পড়ে। তাকে এক দন্ডের জন্যও ভুলতে পারছে না। রাত বারটার সময় হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠতে তার বুকটা আনন্দে ছলকে উঠল। ভাবল নিশ্চয় শফি ফোন করেছে। তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করার সময় আনন্দের চুটে নাম্বার না দেখেই উফুল্ল কণ্ঠে সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছেন?
রাহেলা খুব অবাক হলেও সালামের উত্তর দিয়ে বলল, কীরে, মনে হচ্ছে খুব আপনজনের ফোনের অপেক্ষায় ছিলি?
রাহেলার গলা চিনতে পেরে ডালিয়া সামলে নিয়ে বলল, আমার কথা বাদ দে। এত রাতে ফোন করেছিস কেন বল?
তাতো বলবই, তার আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে।
তুই ঠিকই ধরেছিস, একজনের ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম। এবার তোরটা বল।
সেই একজনটা কে বলবি তো?
কী বলবে ভেবে ঠিক করতে না পেরে ডালিয়া বলল, সে কথা পরে শুনিস। এতরাতে ফোন করার কারণটা বলে ফেল। আমার তো মনে হচ্ছে। এ সময়ে ফোন করার বিশেষ কোনো কারণ ঘটেছে?
রাহেলা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, তুইও ঠিক ধরেছিস।
ডালিয়া ব্যাগ্র কণ্ঠে বলল, তা হলে তাড়াতাড়ি কারণটা বলে ফেল।
বাবা লেঠেল সর্দার মোবারক চাচাকে দিয়ে শফির হাত পা ভেঙ্গে লুলা করে দিতে চেয়েছিল; কিন্তু….
কথাটা শুনে ডালিয়ার বুকটা ধড়াস করে উঠল। তাড়াতাড়ি সামলে নিয়ে তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে বলল, মোবারক লেঠেল কি তাই করেছে?
আরে না, বরং উল্টো শফি মোবারক চাচার একটা হাত ভেঙ্গে একটা পাও ভেঙ্গে দিতে যাচ্ছিল। মোবারক চাচা স্যারেন্ডার করাতে তাকে ছেড়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, পুরস্কারের দশ হাজার টাকা দিয়ে হাতের চিকিৎসা। করাতে ও লেঠেলগীরি ছেড়ে দিয়ে সম্ভাবে জীবন যাপন করতে বলেছে।
এতক্ষণে ডালিয়ার ধড়ে যেন প্রাণ ফিরে এল। বলল, পুরস্কারের ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না।
রাহেলা চরদৌলতখানের মাতব্বরের লাঠিখেলার প্রতিযোগীতা করার কথা বলে বলল, আমি প্রতিযোগীতা দেখতে যাইনি। বাবা ও ভাইয়া গিয়েছিল। বাবা ফিরে এসে বলল, শফি মানুষ না জ্বিন অথবা ফেরেশতা।
পুরো ঘটনা শুনে ডালিয়ারও শফিকে তাই মনে হল। এখন বুঝতে পারল যখন ফোনে মোবারক লেঠেলের কথা বলে শফিকে সাবধানে থাকতে বলেছিলাম তখন কেন সে হেসে উঠেছিল। জিজ্ঞেস করল, এটা কতদিন আগের ঘটনা?