চুপ করে আছ কেন? তার পরিচয় বলবে তো?
বিশেষ কারণে তার পরিচয় বলতে পারছি না। সেজন্য মাফ চাইছি। তবে আমি হ্যাঁন্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর কথাটা সত্য।
ঠিক আছে তার পরিচয় বলার অসুবিধা থাকলে বলো না; কিন্তু তুমি কি মোবারক লেঠেলের সঙ্গে পারবে? না পারলে সে তো এই সুযোগে তোমাকে মেরে হাত পা লুলা করে দেবে? তার শরীর স্বাস্থ্য তোমার দ্বিগুণ, তোমার কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। তা ছাড়া তোমার মা, দাদি, চাচা এবং তোমার নানাবাড়ির কারও কাছে মুখ দেখাতে পারব না।
শফি বলল, আপনি ওসব নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না। আমি নিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ আমি কামিয়াব হব। আর মোবারক লাঠিয়াল ভবিষ্যতে যেন কখনও কোনো প্রতিযোগীতায় নামতে না পারে এবং লেঠেলগিরী করে কারও ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যবস্থাও করতে পারব ইনশাআল্লাহ। আপনি শুধু দোয়া করবেন।
তাতো করবই কিন্তু তবু ভাই আমার বিবেক সাড়া দিচ্ছে না। আল্লাহ করুক যদি তুমি কামিয়াব হতে না পার, তা হলে তার পরিণতি কী হবে ভেবে পাচ্ছি না।
শফি মাতব্বরের দু’পা জড়িয়ে ধরে বলল, তদিরের উপর কারও হাত নেই। তবু আবার বলছি, ইনশাআল্লাহ আমি কামিয়াব হব। আপনি কি চান, মোবারক লেঠেল গোপনে আচানক হামলা করে আমার হাত পা লুলা করে দিক?
না, তা চাই না বলে মাতব্বর সাহেব তার হাত ধরে তুলে বসতে বলে বললেন, ঠিক আছে, তোমার কথামতো সবকিছু কবর, তবে তুমি ওর সঙ্গে লড়বে সবার শেষে, তুমি যে লড়বে, সে কথা প্রথমে প্রচার করা হবে না।
শফি বলল, বেশ, তাই হবে। এবার হিসাব করে বলুন, কত টাকা লাগবে। দু’একদিনের মধ্যে দিয়ে যাব। আর একটা কথা, আপনি কি রবিউলকে চেনেন?
কোন রবিউল? আমাদের গ্রামে তো তিন পাড়ায় তিনটে রবিউল আছে।
আমি চৌধুরী পাড়ার জহীরুদ্দিন চাচার ছেলে রবিউলের কথা বলছি। ও কলেজে প্রফেসারী করছে নিশ্চয় শুনেছেন?
হ্যাঁ, শুনেছি। ওদের বাপ চাচা সবাইকে চিনি।
ঐ রবিউল আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। ও যেন এই লড়াই-এর কথা জানতে না পারে। আমি মোবারক লাঠিয়ালের সঙ্গে প্রতিযোগীতা করব শুনলে কিছুতেই আমাকে তা করতে দেবে না।
কিন্তু ঘোষক যখন ঘোষণা দেবে তখন তো জানতে পারবে এবং বাধাও দেবে।
তা জানুক, প্রতিযোগীতায় নামার সময় জানলে ও বাধা দেয়ার চান্স পাবে না।
মাতব্বর সাহেব বললেন, বেশ তাই হবে। আর তুমি যে টাকা পয়সার হিসাবের কথা বললে, সেসব পরে করা যাবে। আগে প্রতিযোগীতা হোক তারপর না টাকার হিসাব।
০৮. লাঠিখেলার প্রতিযোগিতা
লাঠিখেলার প্রতিযোগিতার কথা মাতব্বর সাহেব কয়েকজন লোক দিয়ে কাছের ও দূরের গ্রামগুলোতে ঢেড়া পিটিয়ে দিলেন।
সালাউদ্দিন চেয়ারম্যান জেনে ভাবলেন, ভালই হল এ বছর তাকে টাকা খরচ করে প্রতিযোগীতার ব্যবস্থা করতে হল না। একদিন মোবারক লেঠেলকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন, এ বছর চরদৌলতখান গ্রামের মাতব্বর লাঠিখেলার প্রতিযোগীতা করার ব্যবস্থা করেছেন, সেকথা শুনেছ নিশ্চয়?
মোবারক বলল, জি সাহেব শুনেছি এবং সে ব্যাপারে তৈরি হয়ে আছি। চেয়ারম্যান বললেন, আমরা প্রতিযোগীতা দেখতে যাব যদি শফি প্রতিযোগীতায় নামে, তা হলে খেলারছলে কাজ হাসিল করে ফেলবে। আর যদি না নামে, তা হলে লোক দিয়ে শফিকে চিনিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করব।
মোবারক বলল, প্রতিযোগীতায় নামলে এমন ধোলাই দেব, পাটাই করে তাকে ঘরে নিয়ে যেতে হবে।
আজ প্রতিযোগীতার দিন। প্রতিযোগীতা শুরু হবে বেলা তিনটে থেকে। মাতব্বর সাহেবের বাগান বাড়ির সামনের জমিতে প্রতিযোগীতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শামিয়ানা খাঁটিয়ে লোকজনের বসার জায়গা করা হয়েছে। পর্দা খাঁটিয়ে মেয়েদেরও আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকাল থেকে বিভিন্ন গ্রামের লোকজন ও প্রতিযোগীরা আসতে শুরু করল। চেয়ারম্যান ও অন্যান্য গন্যমান্য লোকেরা আসার পর ঠিক তিনটেয় প্রতিযোগীতা শুরু হল। পাঁচজন লেঠেল কেউ পাঁচ মিনিটের বেশি মোবারকের কাছে টিকতে পারল না। সবাইকে হারিয়ে দিয়ে মোবারক বুক চিতিয়ে লাঠি ঠুকে বলল, আর কোনো বাপের পুত থাকলে আমার সামনে এসে দাঁড়াক।
তিন মিনিট অপেক্ষা করার পর যখন বিচারকরা তাকে বিজয়ী বলে ঘোষণা দিতে যাবেন ঠিক তখন শফি লড়াই-এর ময়দানে ঢুকল।
ঘোষক শফির পরিচয় জানাল।
শফির আপনজনেরা ও পাড়া পড়শীরা হায় হায় করে উঠল। তারা বলাবলি করতে লাগল, একী সর্বনাশের কথা, লেঠেল সর্দার মোবারকের সঙ্গে এই ছেলে কী লড়বে? ও তো মার খেতে খেতে শেষ হয়ে যাবে। আর যারা শফিকে চেনে না, তারাও বলাবলি করতে লাগল, ছেলেটার সাহস তো কম না? যেখানে বড় বড় নাম করা লেঠেলরা মোবারকের কাছে গোহারা হেরে গেলো, সেখানে এই পুচকে ছোঁড়ার অবস্থা কী হবে আল্লাহ জানে।
রবিউল গত কয়েক বছর ধরে মোবারকের লাঠিখেলার প্রতিযোগীতা দেখে আসছে। তবুও শফিকে তার সঙ্গে লড়াই করার জন্য ময়দানে ঢুকতে দেখে একটুও ভয় পেল না বা ঘাবড়ালও না। কারণ তাকে যতটুকু জেনেছে তাতে সিওর শফি জিতবে। কিন্তু সে দুঃখ পেল এই ভেবে শফি তাকে এ ব্যাপারে কিছুই জানাইনি বলে।
মোবারক যখন পাঁচজন লেঠেলের সঙ্গে লড়ছিল তখন শফি পুংখানুপুংখভাবে তার খেলার কায়দা-কানুন দেখেছে। তাই তার সঙ্গে কীভাবে লড়বে ভেবে রেখেছে।