তবে লাইন কেটে দেয়ার কথা বললেন কেন?
ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখুন কটা বাজে।
দেড়টা বেজে গেছে দেখে ডালিয়া বলল, সরি, এক্সট্রিমলি সরি, সত্যিই আর সময় নেয়া উচিত নয়। তবু আর একটা মাত্র কথা বলে লাইন কেটে দেব।
বলুন,
লেঠেল সর্দার মোবারককে চেনেন?
না, চিনি না। হঠাৎ তার কথা বলছেন কেন?
আমার মামা সালাউদ্দিন চেয়ারম্যান তাকে অনেক টাকা দিয়ে বলেছেন, আপনার হাত পা ভেঙ্গে লুলা করে দিতে। আপনি খুব সাবধানে থাকবেন।
শফি হেসে উঠে বলল, তাই নাকি?
ডালিয়া বলল, হ্যাঁ, তাই। আমি খুব বিশ্বস্তসূত্রে কথাটা জানতে পেরেছি। তারপর জিজ্ঞেস করল, হাসলেন কেন?
হাসবার কারণ আছে তাই হাসলাম।
কারণটা বলবেন তো?
এখন বলা যাবে না। তবে কিছুদিনের মধ্যে এমনই জানতে পারবেন। তারপর বলল, সাবধান করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আর সময় দিতে পারছি না। রাখি আসোলামু আলাইকুম।
ডালিয়া ওয়া আলাইকুম সালাম বলে বলল, মাঝে মাঝে ফোন করার অনুমতি চাই।
দিলুম বলে শফি লাইন কেটে দিল
.
চাচা জাকির হোসেনের সঙ্গে শফি কয়েকদিন ঘুরে ঘুরে বাবার জমি জায়গা, আগান-বাগান, পুকুর-ডোবা দেখে বলল, এত দেখছি প্রচুর বিষয় সম্পত্তি। প্রতি বছর এসব থেকে আয়ও হয় সেরকম। মনে হয় দাদির কাছে বহু টাকা পয়সা জমেছে, তাই না চাচা?
জাকির হোসেন ভাইপোর কথা শুনে প্রমাদ গুণলেন। ভাবলেন, ও যদি সব কিছু একবছর দেখাশোনা করে, তা হলে ফসল বিক্রি করে কত টাকা মেরেছি ধরা পড়ে যাবে।
ওনাকে চুপ করে থাকতে দেখে শফি বলল, আমার কথার জবাব দেবেন না?
জাকির হোসেন তাড়াতাড়ি বললেন, তা তো জমেছেই। কত জমেছে জানি না, তুমি তোমার দাদিকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিও।
চাচাকে চুপ করে ভাবতে দেখে শফি যা বোঝার বুঝে গেল। বলল, ঠিক আছে, তাই জেনে নেব।
.
একদিন মাতব্বর সাহেব বেঠকখানায় কয়েকজন লোকের সঙ্গে শফির ব্যাপারে আলাপ করছিলেন। তাকে আসতে দেখে একজন বলল, ঐ তো শফি আসছে।
মাতব্বর সাহেব সেদিকে তাকিয়ে তাদেরকে চলে যেতে বললেন। তারপর শফি কাছে এলে হাসি মুখে বললেন, দাদুর কথা তা হলে মনে আছে?
শফি সালাম বিনিময় করে বলল, নাতি কী দাদুর কথা ভুলতে পারে? কেমন আছেন বলুন।
আল্লাহ যে অবস্থায় রেখেছেন তাতেই শোকর আদায় করছি। তারপর তাকে বসতে বলে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন আছ?
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
তা বাবার জমি জায়গা চাষবাস করবে নাকি?
শুধু ফসলী জমিগুলো চাচাকে ভাগে করতে বলেছি। খরচ বাদে অর্ধেক ফসল দেবেন। আর অন্যান্য সবকিছু আমি দেখাশোনা করব।
মাতব্বর সাহেব বললেন, ভালো- খুব ভালো।
আচ্ছা দাদু, লেঠেল সর্দার মোবারককে চেনেন?
মাতব্বর হেসে উঠে বললেন, তাকে আশপাশের দশ গ্রামের মানুষ চেনে। তা হঠাৎ তার কথা জিজ্ঞেস করলে কেন?
শফি বলল, আমিও শুনেছি। তাই জিজ্ঞেস করলাম। উনি খুব বিখ্যাত লেঠেল?
হ্যাঁ, ওর বাবাও খুব বিখ্যাত লেঠেল ছিল। মোবারকের মতো লেঠেল পাঁচ দশ গ্রামে নেই। শুধু তাই নয়, আগ্নেয় অস্ত্র চালাতেও ওস্তাদ। আজ পর্যন্ত লাঠিখেলায় ও আগ্নেয় অস্ত্র চালনায় কেউ হারাতে পারেনি।
আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে মাঝে মধ্যে লাঠিখেলা ও আগ্নেয়অস্ত্রের প্রতিযোগীতা হয়?
হ্যাঁ, হয়। প্রতি বছর সালাউদ্দিন চেয়ারম্যান তাদের গ্রামে প্রতিযোগীতার আয়োজন করেন। প্রতিযোগীতায় যে জীতে তাকে দশ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হয়। অবশ্য এই পর্যন্ত মোবারকই প্রতি বছর পুরস্কার পেয়ে আসছে। কারণ কেউ-ই তাকে হারাতে পারেনি।
এ বছর আমাদের গ্রামে আপনি প্রতিযোগীতার ব্যবস্থা করবেন।
কথাটা শুনে মাতব্বর সাহেব খুব অবাক হয়ে শফির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শফি বলল, মনে হচ্ছে আমার কথা শুনে আপনি খুব অবাক হয়েছেন?
হ্যাঁ, হয়েছি। কী ব্যাপার বলতো ভাই, হঠাৎ এরকম কথা বললে কেন?
বলব, তবে তার আগে আপনি বলুন, যা বললাম করবেন?
করতে পারব না কেন? কিন্তু এসব করতে গেলে অনেক টাকার দরকার। চেয়ারম্যান করেন তার স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। আমি কেন শুধু শুধু এতটাকা খরচ করতে যাব? তা ছাড়া এটা অপব্যয়। আল্লাহ কুরআন পাকে বলেছেন, “নিশ্চয় অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই।” [সূরা-বনি ইসরাইল, আয়াত-২৭, পারা-১৫]
তা আমিও জানি এবং মানিও। কিন্তু এই আয়োজন করার পিছনে বিশেষ কারণ আছে। আর এজন্য যত টাকা লাগবে আমি দেব।
তা হলে এবার নিশ্চয় কারনটা বলবে।
জি বলব,তারপর চেয়ারম্যান কীভাবে তার হাত পা ভেঙ্গে লুলা করার জন্য মোবারক লেঠেলকে ভাড়া করেছে শফি সবকিছু বলল।
মাতব্বর সাহেব কথাটা শুনে মোটেই অবাক হলেন না। বরং মৃদু হেসে বললেন, আমি তার চরিত্র জানি। ছেলের হয়ে বাপ প্রতিশোধ নিতে চান। এরকমই কিছু একটা আশা করেছিলাম; কিন্তু তুমি একথা জানলে কী করে?
শফি বলল, আমি খুব বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি?
কিন্তু চেয়ারম্যান অত কাঁচা লোক নন যে, ওনার প্ল্যান প্রোগ্রাম অন্য কেউ জানতে পারবে। তা ছাড়া শোনা কথা যাচাই না করে বিশ্বাস করতে নেই। এটা হাদিসের কথা।
তা আমিও জানি। যার কাছ থেকে জেনেছি, সে জীবন গেলেও মিথ্যা বলতে পারবে না।
তার পরিচয় বল।
ডালিয়ার কথা বলা ঠিক হবে কিনা শফি চিন্তা করতে লাগল।