কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শফি বলল, কীরে, কারণটা বলছিস না কেন? মনে হচ্ছে ডালমে কুছ কালা হ্যাঁয়। এ কথা বলার পরও তাকে চুপ করে থাকতে দেখে শফি আবার বলল। না বললে কিন্তু মাইন্ড করব।
রবিউল বলল, বললেও মাইন্ড করবি।
ঠিক আছে ওয়াদা করছি মাইন্ড করব না।
যখন ক্লাস টেনে পড়ি তখন থেকে রাহেলাকে ভালবাসি।
শফি হেসে উঠে বলল, মনে হচ্ছে কথাটা রাহেলা তখনও জানত না এবং এখনও জানে না। কি, ঠিক বলি নি।
কথাটা সত্য; কিন্তু তুই জানলি কী করে?
যেমন করে জানলাম ডালিয়া আমাকে ভালবেসে ফেলেছে।
তাই যদি জানিস, তা হলে বল, রাহেলার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে কিনা।
হবে, আমাদের মতো তোদেরও অনেক কাঠ খড় পুড়বে।
হেঁয়ালী করে না বলে খোলাখুলি বল।
যা বলেছি এর বেশি একটা কথাও বলতে পারবনা। তবে এতটুকু বলতে পারি, আল্লাহ যার সঙ্গে যার জোড়া করে পয়দা করেছেন, তার সঙ্গে তার বিয়ে হবেই। তুই কিন্তু একটা মারাত্মক আর একটা অমারাত্মক ভুল করেছিস। প্রথমটা হল ক্লাস টেনে পড়ার সময়েই রাহেলাকে কথাটা জানান উচিত ছিল। আর দ্বিতীয়টা হল, আমি ফিরে আসার পর পর আমাকেও কথাটা জানান উচিত ছিল।
রবিউল বলল, প্রথম ভুলটার কারণ হল, অনেকবার জানাতে চেষ্টা করেও সাহসের অভাবে জানাতে পারিনি। আর দ্বিতীয় ভুলটার কারণ, বলব বলব করেও বলা হয়নি। যাই হোক, দ্বিতীয় ভুলটা তুই মাফ করে দে।
শফি হেসে উঠে বলল, আর প্রথম ভুলটা কে মাফ করবে? তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বলল, রাহেলাই তোকে মাফ করবে।
রবিউল বলল, তুই মাঝে মাঝে এমন কথা বলিস, যার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারি না।
না বুঝলে না বুঝবি, কে তোকে বুঝতে বলেছে?
কথাটা কী ঠিক বললি? শুনে মনে হচ্ছে আমাকে দূরে সরিয়ে দিতে চাচ্ছিস।
তোর ধারণা ভুল। দাদি আর তুই ছাড়া এ দুনিয়ায় আমার আপন কেউ নেই।
কেন, তোর মা?
মা তো মাই-ই। তার তুলনা কারও সঙ্গে দেয়া যায় না। তবু বলব মা। এখন অন্য লোকের স্ত্রী। যাই হোক, এ প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি চল। নচেৎ মাগরিবের নামায ধরতে পারব না।
.
ডালিয়া বারবার শফির দিকে চেয়ে দেখলেও যতবার রবিউলের দিকে চেয়েছে, ততবারই তাকে রাহেলার দিকে অপলক নয়নে চেয়ে থাকতে দেখেছে। তাই তারা চলে যাওয়ার পর রাহেলার মন বোঝার জন্য বলল, প্রফেসার সাহেবকে দেখলাম বারবার তোর মুখের দিকে চেয়ে থাকতে। ব্যাপারটা কি তুই লক্ষ্য করেছিস?
রাহেলা হেসে উঠে বলল, তা আবার করিনি। শোন, ক্লাসেও অনেকবার লক্ষ্য করেছি, উনি চোরাচোখে বারবার আমার দিকে চেয়ে থাকেন।
ডালিয়াও হেসে উঠে বলল, সত্যি বলছিস?
হ্যাঁরে, সত্যি বলছি।
এতে তোর মনে কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি?
খুব রাগ হয়।
রাগ হবে কেন? বরং অন্য কিছুতো হওয়ার কথা।
অন্য কিছু মানে?
মানে, উনি হয়তো তোকে ভালবাসেন। তাই বারবার তোর মুখের দিকে চেয়ে দেখেন।
আমি ওসব ভালবাসা-টালবাসা একদম পছন্দ করি না।
উনি কিন্তু খুব হ্যাঁন্ডসাম, মেয়েরা ঐরকম ছেলেই পছন্দ করে।
রাহেলা বিরক্ত কণ্ঠে বলল, হ্যাঁন্ডসাম হোক আর অন্য মেয়েরা ওনাকে পছন্দ করুক, তাতে আমার কী? শোন, যেসব ছেলেরা চোরাচোখে মেয়েদেরকে দেখে, তাদেরকে আমি মোটেই দেখতে পারি না। এসব বাজে প্যাচাল বাদ দিয়ে বলতো, ভাইয়ার সঙ্গে তোর বিয়ে ঠিক হয়ে থাকা সত্ত্বেও বারবার কেন শফির দিকে চেয়ে দেখছিলি?
ডালিয়া শফির চোখে এমন কিছু দেখেছে, যা বারবার তাকে দেখতে বাধ্য করেছে। সেকথা বলা উচিত হবে না ভেবে চালাকি করে বলল, শুধু শফির দিকে নয়, রবিউল স্যারের দিকেও চেয়ে দেখছিলাম, কে বেশি সুন্দর। রবিউল স্যারের দিকে চেয়ে মনে হল গ্রীষ্মকালের চাতক পাখি, যেমন একফোঁটা বৃষ্টির আশায় আকাশের দিকে হা করে চেয়ে থাকে, ঠিক সেইভাবে উনি তোর মুখের দিকে চেয়েছিলেন। তুই যে বললি উনি চোরা চোখে দেখে, কিন্তু আজ তো করেন নি। আমি হ্যাঁন্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর উনি তোকে ভীষণ ভালবাসেন।
রাহেলা বলল, কী জানি, তোর কথা হয় তো ঠিক; কিন্তু একটু আগে বললাম না, ভালবাসা টালবাসা একদম পছন্দ করি না। সমাজে ভালবাসার কাহিনী শুনে ও তার পরিণতি দেখে প্রতিজ্ঞা করেছি, জীবনে কোনো দিন ও পথে পা বাড়াব না।
ডালিয়া বলল, ওরকম কথা অনেকে বলে; কিন্তু শেষমেষ তারাই ভালবাসা করে হাবুডুবু খায়। আমার তো মনে হচ্ছে তুইও একদিন ভালবাসা করে হাবুডুবু খাবি।
তোর মুন্ডু খাব বলে রাহেলা তার কাছ থেকে চলে গেল।
০৬. সদর হাসপাতাল থেকে হাত প্লাস্টার
সদর হাসপাতাল থেকে হাত প্লাস্টার করে ঘরে ফিরে রাহেলার মুখে শফি ও রবিউল এসে মোবাইল সেট ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে মহসিন ভীষণ রেগে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, শালা হারামীর বাচ্চার এত বড় সাহস থাকলে মোবাইল গাঁড়ে ঢুকিয়ে দিতাম।
রাহেলা বলল, হুট করে তুমি রেগে যাও কেন? এই যে তাকে গালাগালি করলে, এটা কী ঠিক হল?
মহসিন রাগের সঙ্গেই বলল, আমার কথার উপর কথা বলছিস কেন? দেব এক থাপ্পড়।
রাহেলা বলল, থাক, অত আর বাহাদূরী দেখিও না। ডালিয়ার মুখে শুনেছি তোমাদের ছ’জনকে কীভাবে শফি একাই মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিয়ে বুক ফুলিয়ে চলে গেছে। কই, কিছুইতো তার করতে পারলে না।
ছোট বোনের কথা শুনে মহসিন লজ্জা পেয়ে রাগ সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, মোবাইল নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা বাবা জানে?