তাকে ওদের দিকে চেয়ে থাকতে দেখে শফি সালাম দিয়ে বলল, চেয়ারম্যান সাহেব বা ওনার ছেলে বাড়িতে আছেন?
শাহাদতকে কেউ কখনও সালাম দেয়নি। শফিকে সালাম দিতে দেখে অবাক হয়ে সালামের উত্তর দিয়ে বলল, না, কেউ নেই।
তা হলে চেয়ারম্যান সাহেবের মেয়েকে ডেকে দাও। ওবেলা আমার মোবাইল হারিয়ে গিয়েছিল, ওনার কাছে আছে। উনি এই সময়ে আসতে বলেছিলেন মোবাইলটা নেয়ার জন্য।
আপনারা বৈঠকখানায় বসুন, আমি আপাকে ডেকে দিচ্ছি। তারপর যেতে যেতে চিন্তা করল, আপা বললেন একজন আসবে; কিন্তু এসেছে দু’জন।
বাড়ির ভিতরে গিয়ে আপাকে দু’জন আসার কথা জানাল।
রাহেলা ডালিয়ার দিকে চেয়ে বলল, কী ব্যাপার বল দেখি? আসার কথা। শুধু শফির, দু’জন এসেছে কেন? মনে হয় ভয় পেয়েছে। তাই একজনকে সাথে করে এনেছে।
তারা আগে থেকে সেজেগুঁজে ছিল। ডালিয়া তার কথা শুনে ভাবল, শফি তো ভয় পাওয়ার মতো ছেলে না, হয়তো অন্য কোনো কারণে একজনকে সাথে নিয়ে এসেছে। মুখে বলল, সে যাই হোক দু’জন আসুক আর তিনজন আসুক তাতে আমাদের কী? চল যাই।
শফি ও রবিউল দু’টো চেয়ারে বসেছিল। তাদেরকে দেখে দাঁড়িয়ে সালাম দিল।
রাহেলা ও ডালিয়া শালওয়ার কামিজ পরে ওড়না ঘাড়ের দু’পাশ থেকে বুকের উপর ঝুলিয়ে দিয়েছে। দু’জনেই সালামের উত্তর দিয়ে বসতে বলল। রাহেলা রবিউলকে চিনতে পেরে অবাক কণ্ঠে বলল, স্যার আপনি?
রবিউল বলল হ্যাঁ। মোবাইলটা ওর বলে শফিকে দেখাল। তারপর শফিকে বলল, রাহেলা আমার কলেজের ছাত্রী।
কথাটা শুনে শফি রবিউলের উপর অসন্তুষ্ট হল। ভাবল, এ কথা আগে জানাল না কেন।
প্রথম ঘটনার দিন ডালিয়া শফির সঙ্গে রবিউলকে দেখেছে। তার পরিচয় পেয়ে জিজ্ঞেস করল, উনি কি আপনার কাজিন বলে শফিকে দেখাল।
রবিউল কিছু বলার আগে রাহেলা বলল ও ডালিয়া, আমার ফুপাত বোন, ওদের বাড়ি ঢাকায়।
তা জানি বলতে গিয়েও রবিউল বলল না। চুপ করে রইল।
ডালিয়া তার দিকে চেয়ে বলল, আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না যে?
রবিউল বলল, কাজিন না হলেও আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের গভীর সম্পর্ক। বাড়ি একই গ্রামে।
রবিউল থেমে যেতে শফি বলল, আমার মোবাইলটা দিন। এবার আমাদেরকে ফিরতে হবে।
ডালিয়া যে চোরাচোখে বারবার শফিকে দেখছে রাহেলা তা বুঝতে পেরে বলল, এত তাড়া কিসের? স্যার যখন সঙ্গে আছেন তখন ভয়ের কোনো কারণ নেই। তা ছাড়া বাবা ও ভাইয়া কেউ বাড়িতে নেই। ভাইয়া বন্ধুদের নিয়ে সদর হাসপাতালে গেছে প্লাস্টার করাবার জন্য। আর বাবা পাশের গ্রামে মিটিং এ গেছেন।
শফি মৃদু হেসে বলল, আল্লাহকে ছাড়া আমি কাউকে ভয় করি না। আর ভয়ই যদি করতাম, তা হলে সকালের ঘটনার পর বিকেলে আসতাম না।
রাহেলা বলল, তা অবশ্য ঠিক কথা বলেছেন। অন্য যে কোনো ছেলের এত সাহস হত না। তারপর শাহাদত নাস্তার প্লেট নিয়ে এলে বলল, এখন কথা বাদ দিয়ে মুখে হাতে পানি দিয়ে নিন, নাস্তা খাবেন।
শফি বলল, এসব কষ্ট করে করতে গেলেন কেন?
রাহেলা বলল, কষ্ট হবে কেন? অতিথিকে আপ্যায়ন করান উচিত নয় কি? কথা শেষ করে নাস্তা পরিবেশন করল।
তাদেরকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে রাহেলা আবার বলল, কী হল, খাচ্ছেন না কেন? তবু যখন তারা চুপ করে বসে রইল তখন জিজ্ঞেস করল, আপনারা কি আমাদেরকে অবিশ্বাস করছেন?
শফি বলল, কী ব্যাপারে অবিশ্বাস করব?
রাহেলা বলার আগে ডালিয়া বলল, এই যেমন আমরা হয়তো খাবারে বিষ মাখিয়ে এনেছি আপনাদেরকে মেরে ফেলার জন্য অথবা অজ্ঞান করে। মারধর করে সকালের ঘটনার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য।
শফি মৃদু হেসে বলল, “ঠাকুর ঘরে কেরে? আমি কলা খায়নি” কথাটার মতো হয়ে গেল না?
ডালিয়া বলল, আপনার কথাটা ঠিক হলেও এক্ষেত্রে নয়। সব থেকে বড় কথা রাহেলার কলেজের স্যার রয়েছেন। উনি সম্মানিত ব্যক্তি। ওনার উপস্থিতিতে এরকম কাজ আমরা করতে পারি না। তারপর দু’জনে প্লেট থেকে অল্প একটু নাস্তা খেয়ে বলল, এবার নিশ্চয় খেতে অসুবিধে নেই?
শফি বলল, আপনারা আমাদেরকে বুঝতে ভুল করেছেন। ওসব চিন্তাই আমরা করিনি। আসল কথা আমি বাইরের কারও বাড়িতে খাই না। তারপর রবিউলকে বলল, তুই খাচ্ছিস না কেন?
রবিউল বলল, তুই না খেলে আমি একা খাই কী করে?
ঠিক আছে, আমি এক গ্লাস পানি খাচ্ছি বলে শফি পানি খেয়ে রবিউলকে বলল, এবার তুই খা।
ডালিয়া শফিকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনি যে কথা বললেন, তার পিছনে নিশ্চয় কারণ আছে?
আছে।
কারণটা বলবেন?
মাফ করবেন বলতে পারব না।
.
নাস্তা খাওয়ার পর মোবাইল সেট নিয়ে ফেরার পথে রবিউল বলল, ডালিয়া সর্বক্ষণ তোর দিকে চেয়েছিল।
আর তুই সর্বক্ষণ রাহেলাকে চোরাচোখে দেখছিলি কেন সেটা আগে বল।
আমার দেখার পিছনে কারণ আছে; কিন্তু ডালিয়ার কী আছে?
তোর মতো তারও কারণ থাকতে পারে।
তা থাকতেই পারে না। কেন পারে না?
কারণ, মহসিনের ফাঁইন্যাল পরীক্ষার পর তার সঙ্গে ডালিয়ার বিয়ে হওয়ার কথা পাকা হয়ে আছে।
পাকা কথা হয়ে থাকলে কী হবে তকৃদিরে থাকতে হবে। তকদিরে না থাকলে হবে না।
তুই কি বলতে চাচ্ছিস ওদের বিয়ে হবে না?
না।
রবিউল খুব অবাক হয়ে বলল, এ তুই কী বলছিস?
বলছি বাংলা, তবু যদি বুঝতে না পারিস, তা হলে এ প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে তোর কারণটা বল।
রবিউল কিছু না বলে চুপচাপ হাঁটতে লাগল।