- বইয়ের নামঃ জানি তুমি আসবে
- লেখকের নামঃ কাসেম বিন আবুবাকার
- বিভাগসমূহঃ উপন্যাস
০১. শফি বন্ধু রবিউলের সঙ্গে
জানি তুমি আসবে
কাসেম বিন আবুবাকার
উৎস্বর্গ
প্রাণ প্রিয় নাতি মুঃ মুস্তাকিম আহম্মদ খান (আহনাফ)
আল্লাহ ওকে তার প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
১. “স্থলভাগে ও জলভাগে মানুষের স্বহস্তকৃত কর্মসমূহের দরুন নানা প্রকার বালা-মুসীবত ছড়াইয়া পড়িতেছে, যেন আল্লাহ তাহাদিগকে তাহাদের মন্দ কাজের কিয়দংশের স্বাদ উপভোগ করান, যাহাতে তাহারা (উহা হইতে) ফিরিয়া আসে।”– আল-কুরআন; সূরা-রূম আয়াত-৪১, পারা-২১
২. “আল্লাহ যাহার মঙ্গল কামনা করেন, তিনি তাহাকে ধর্মজ্ঞান দান করেন,–বুখারী ও মুসলীম
৩. “উত্তম স্বাস্থ্য ও উত্তম স্ত্রী পুরুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।”–জন-রে
.
০১.
শফি বন্ধু রবিউলের সঙ্গে পাকা সড়ক দিয়ে যেতে যেতে দেখতে পেল, লাঠি হাতে এক বৃদ্ধ অন্ধ ভিক্ষুক বলছে, কে আছ বাবা আমাকে রাস্তাটা পার করে দাও।
শফির দৃষ্টি অনুসরণ করে রবিউল বলল, দাঁড়া হাসান, চাচাকে রাস্তাটা পার করে দিয়ে আসি।
শফি বলল ওনাকে চিনিস না কি?
রবিউল বলল, হ্যাঁ, চিনি। আমাদের গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় ঘর।
ওনার কোনো ছেলেমেয়ে নেই?
ছেলে নেই, দুটো মেয়েছিল। তাদের বিয়ে দিতে গিয়ে যেটুকু জমি ছিল বিক্রি করে দিয়েছেন। তারপর যতদিন শক্তি সামর্থ ছিল, গতর খাঁটিয়ে স্বামী স্ত্রীর পেট চালিয়েছেন। অন্ধ হয়ে ভিক্ষে করতে বাধ্য হয়েছেন।
তুই দাঁড়া আমি যাচ্ছি বলে শফি বৃদ্ধের কাছে এসে তার একটা হাত ধরে বলল, চলুন, আমি পার করে দিচ্ছি।
বৃদ্ধ হাসান যেতে যেতে বলল, কে বাবা তুমি? আল্লাহ তোমার দোজাহানে মঙ্গল করুক।
রাস্তার মাঝা-মাঝি এসেছে এমন সময় একটা হুণ্ডা তাদের পাশে এসে থেমে গেল।
শফি যদি বৃদ্ধকে টেনে না নিত, তা হলে হুণ্ডার হ্যাঁন্ডেলে ধাক্কা লাগত।
শফি সেদিকে চেয়ে দেখল, হুণ্ডার চালকের সীটে চব্বিশ-পঁচিশ বছরের একটা মেয়ে। আর পিছনে বসে আছে প্রায় ত্রিশ বছরের একটা ছেলে। কিছু বলতে গিয়ে মেয়েটির মুখের দিকে চেয়ে শফি মুগ্ধ হল। মেয়েটির গায়ের রং শ্যামলা হলেও এত সুন্দর মুখ সে আর কখনও দেখেনি। পরক্ষণে তার পরণে টাইটফিট প্যান্ট শার্ট দেখে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলল, আরও ভালো করে গাড়ি চালান শিখুন তারপর রাস্তায় গাড়ি চালাবেন। নচেৎ যে কোনো সময় একসিডেন্ট করে পথচারির ও নিজের জীবন বিপন্ন করে ফেলবেন। আমি যদি এই অন্ধ বৃদ্ধকে দ্রুত টেনে না নিতাম, তা হলে কী হত ভেবে দেখুন?
মেয়েটির বদলে ছেলেটি গাড়ি থেকে নেমে বলল, বৃদ্ধ অন্ধ হতে পারে; কিন্তু তুমি তো অন্ধ না, দেখেশুনে রাস্তা পার হতে পার না?
শফি বলল, আর আমি যদি বলি চোখ কান খোলা রেখে গাড়ি চালাতে হয়।
শফির কথা শুনে ছেলেটা রাগে লাল হয়ে বলল, আমাকে জ্ঞান দান করছিস? চড়িয়ে তোর দাঁতগুলো ফেলে দিতে পারি জানিস?
আপনাকে তো চিনি না, আপনার কত ক্ষমতা জানব কী করে?
এখনই জানতে পারবি বলে ছেলেটা এগিয়ে এসে তার গালে খুব। জোরে চড় মারতে গেল।
শফি হাতটা ধরে ফেলে বলল, ছি-ছি, এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে এতটা বাড়াবাড়ি করা কোনো ভদ্র ঘরের ছেলের উচিত নয়। তারপর মেয়েটির দিকে চেয়ে বলল, আপনিই বলুন তো, কী এমন অপরাধ করেছি যে, উনি চড়িয়ে আমার দাঁত ফেলে দিতে চাচ্ছেন?
ছেলেটা আরও রেগে গিয়ে হাতটা ছাড়াবার চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝতে পারল। প্রতিপক্ষের গায়ে অসুরের মতো শক্তি। হাত ছাড়ান তো দূরের কথা এতটুকু নাড়াতেও পারল না। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল, হাতটা ছেড়ে দে বলছি, নচেৎ পরিণাম ভালো হবে না।
শফি বলল, আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে দ্র ঘরের শিক্ষিত ছেলে; কিন্তু কথা-বার্তা ও আচার-আচরণ ছোটলোকের মতো কেন? আপনি নিজের হাত ছাড়াতে পারছেন না, আমার কী আর ভালো মন্দ করবেন? তারপর হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল, যান, এবার ভদ্র ছেলের মতো চলে যান। দেখছেন না, কত লোকজন দাঁড়িয়ে ঘটনাটা দেখছে? তাদের কাছে নিজেকে। আর হাস্যাস্পদ করবেন না।
হাত ছাড়া পেয়ে ছেলেটা ঝট করে রিভলবার বের করে বলল, দাঁড়া আমার ক্ষমতা দেখতে চাস বলে শফির দিকে তাক করল।
শফি এরকমই আশা করেছিল, তাই প্রস্তুত ছিল। দ্রুত তার রিভলবারধরা হাতটা ধরে উপরের দিকে ফায়ার করে সেল খালি করে বলল, মনে হয় লেখাপড়া করলেও মানুষের মতো মানুষ হতে পারেননি। হয়তো বড়লোকের একমাত্র ছেলে। তাই ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। তারপর চালকের আসনে বসা মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনাদের সম্পর্ক জানি না, তবু বলছি, এভাবে একসঙ্গে হুণ্ডায় চড়া উচিত নয়। আর সাবালিকা মেয়েদের এই রকম পোশাক পরা ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ। হাদিসে আছে, রসুল (সঃ) বলেছেন, যে সকল পুরুষ নারীর বেশ ধারণ করে এবং যে সকল নারী পুরুষের বেশ ধারণ করে, আল্লাহ তাহাদিগকে অভিশাপ দেন। [বর্ণনায় : হযরত আব্বাস (রা.)- বোখারী শরীফ] আর একটা কথা না বলে পারছি না, ইনাকে হয় পাবনা মানষিক হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করবেন। নচেৎ কোনো মনোবিজ্ঞানের ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করাবার ব্যবস্থা করবেন। কথা শেষ করে শফি রবিউলের কাছে এসে বলল, চল, কোথায় নিয়ে যাচ্ছিলি।