৪৮। অতএব, তুমি ধৈর্য ধারণ কর তোমার প্রভুর আদেশের অপেক্ষায়, এবং মৎস্য সহচরের ন্যায় ৫৬২৯, [ অধৈর্য্য ] হয়ো না, – যখন সে দুঃসহ যন্ত্রণায় চীৎকার করেছিলো।
৫৬২৯। মৎসের সহচর বা মৎসগ্রাসে পতিত। হযরত ইউনুসকে মাছ ভক্ষণ করেছিলো বলে তাঁকে এরূপ বলা হতো। ‘Zun-nun’ – বা ইউনুস নবীর জন্য দেখুন সূরা [ ২১ : ৮৭ – ৮৮ ] আয়াতের টিকা ২৭৪৪। আরও দেখুন সূরা [ ৩৭ : ১৩৯ -১৪৮ ] আয়াত ও আয়াতগুলির টিকাসমূহ। হযরত ইউনুসকে নীণেভা নামক নগরীতে আল্লাহ্র বাণী প্রচারের জন্য আদেশ দান করা হয়। ঐ নগরীর অধিবাসীরা ছিলো দুষ্ট প্রকৃতির। তিনি তাঁর প্রচারকালে নগরীর অধিবাসীদের দ্বারা অত্যাচার ও নির্যাতনের শীকার হন এবং নগরী থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য জাহাজে আরোহণ করেন। রাস্তায় জাহাজ ঝড়ে পতিত হয় এবং নাবিকেরা তাঁকে সমুদ্র বক্ষে নিক্ষেপ করে। সমুদ্র বক্ষে তাকে এক বিরাট মাছ ভক্ষণ করে – সম্ভবতঃ তা হয়তো বা হবে বিশাল আকৃতির তিমি মাছ। সেখানে তিনি জীবিত থাকেন ও অনুতাপে দগ্ধ হতে থাকেন। ফলে আল্লাহ্ তাঁকে ক্ষমা করেন। অপরপক্ষে নিণেভা নগরীর বাসিন্দারা অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধন করে আল্লাহ্র ক্ষমা লাভ করে। এখানে আল্লাহ্র দুইটি গুণবাচক উপাধি দয়াময় ও ক্ষমাশীল এই দুটিকে রূপক নীতিগত মূলক কাহিনীর মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। আদেশ করা হয়েছে বাঁধা ও বিপর্যয়ের মুখে আল্লাহ্র উপরে নির্ভর করে ধৈর্য ধারণের জন্য। ধৈর্য, দৃঢ়তা ও আল্লাহ্র উপরে নির্ভরশীলতা এই গুণগুলি মোমেন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। তাহলেই আল্লাহ্র রহমত ও করুণা লাভ করা যায়।
আয়াতঃ 068.049
যদি তার পালনকর্তার অনুগ্রহ তাকে সামাল না দিত, তবে সে নিন্দিত অবস্থায় জনশুন্য প্রান্তরে নিক্ষিপ্ত হত।
Had not a Grace from his Lord reached him, he would indeed have been (left in the stomach of the fish, but We forgave him), so he was cast off on the naked shore, while he was to be blamed.
لَوْلَا أَن تَدَارَكَهُ نِعْمَةٌ مِّن رَّبِّهِ لَنُبِذَ بِالْعَرَاء وَهُوَ مَذْمُومٌ
Lawla an tadarakahu niAAmatun min rabbihi lanubitha bialAAara-i wahuwa mathmoomun
YUSUFALI: Had not Grace from his Lord reached him, he would indeed have been cast off on the naked shore, in disgrace.
PICKTHAL: Had it not been that favour from his Lord had reached him he surely had been cast into the wilderness while he was reprobate.
SHAKIR: Were it not that favor from his Lord had overtaken him, he would certainly have been cast down upon the naked Found while he was blamed.
KHALIFA: If it were not for his Lord’s grace, he would have been ejected into the desert as a sinner.
৪৯। তার প্রভুর অনুগ্রহ তার নিকট না পৌঁছুলে সে লাঞ্ছিত হয়ে নিক্ষিপ্ত হতো উন্মুক্ত প্রান্তরে। ৫৬৩০
৫৬৩০। দেখুন আয়াত [ ৩৭: ১৪৫ – ১৪৬ ] ও টিকা ৪১২৬।
আয়াতঃ 068.050
অতঃপর তার পালনকর্তা তাকে মনোনীত করলেন এবং তাকে সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন।
But his Lord chose him and made him of the righteous.
فَاجْتَبَاهُ رَبُّهُ فَجَعَلَهُ مِنَ الصَّالِحِينَ
Faijtabahu rabbuhu fajaAAalahu mina alssaliheena
YUSUFALI: Thus did his Lord choose him and make him of the Company of the Righteous.
PICKTHAL: But his Lord chose him and placed him among the righteous.
SHAKIR: Then his Lord chose him, and He made him of the good.
KHALIFA: But his Lord blessed him, and made him righteous.
৫০। এভাবেই তার প্রভু তাঁকে মনোনীত করলেন ৫৬৩১, এবং তাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভূক্ত করলেন। ৫৬৩২
৫৬৩১। হযরত ইউনুসকে আল্লাহ্ নিণেভা নগরীতে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন যেনো তিনি সেখানে আল্লাহ্র করুণা ও মহিমার বাণী প্রচার করতে পারেন। যদিও তিনি নবী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সাধারণ মানুষের ভুলভ্রান্তির উর্দ্ধে ছিলেন না। যার ফলে নিণেভাবাসীদের প্রত্যাখান ও অত্যাচারে তাঁর ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে। যেহেতু তিনি আল্লাহ্ কর্তৃক মনোনীত, সুতারাং তার দায়িত্বও সাধারণ মানুষ থেকে অনেক বেশী। তাঁর এই ধৈর্যচ্যুতিতে আল্লাহ্ তাঁকে কঠিন শাস্তি দান করেন। মাছের পেটে থাকা অবস্থায় তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হন এবং আল্লাহ্র করুণা ও ক্ষমা ভিক্ষা করেন। প্রকৃত অনুতাপ সর্বদাই আল্লাহ্ গ্রহণ করেন এবং পাপীর পাপকে ক্ষমা করে থাকেন। ইউনুস নবীও আল্লাহ্র ক্ষমা লাভ করেন এবং তিনি মাছের পেট থেকে উদ্ধার লাভ করে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পুণরুদ্ধার করেন। আল্লাহ্র নূর আবার তাঁর আধ্যাত্মিক জগতকে সমুজ্জ্বল করে তোলে।
৫৬৩২। দেখুন সূরা [ ৪ : ৬৯ ] আয়াত ও টিকা ৫৮৬। “সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভূক্ত করিলেন।” এই আয়াত থেকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, সৎকর্মপরায়ণদের বিশাল গোষ্ঠির সদস্যপদ লাভ করা। এই গোষ্ঠিতে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে বিভিন্ন শ্রেণীর মানব সন্তান। কেউ সৎকর্মপরায়ণে হন অতি উচ্চে অধিষ্ঠিত আবার কারও অধিষ্ঠান সুউচ্চ নাও হতে পারে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাজের পরিমাণ অনুযায়ী সৎকর্মপরায়ণদের শ্রেণীতে অর্ন্তভূক্ত হবেন। গণতন্ত্রে যেরূপ প্রত্যেক নাগরিকের জন্য তাঁর অধিকারকে সংরক্ষিত করা হয়; আধ্যাত্মিক জগতেও সেরূপ সৎকর্মপরায়ণের জন্য আছে নাগরিক অধিকার। যারা এই অভিজ্ঞানে সমৃদ্ধ তাদের মাঝে বিরাজ করে এক অদৃশ্য ভাতৃত্ববোধের বন্ধন। যে বন্ধনের সুত্রে কেউ থাকেন উচ্চমার্গে কেউ থাকেন নিম্নে। কিন্তু এর ফলে তাদের সৌহার্দ নষ্ট হয় না বরং আদান প্রদানের মাধ্যমে আরও দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়।