ভাবুক দাদা । সে ঘুম নয়, সে ঘুম নয়, ভাবের ঝোঁকে টং ভাবের কাজল চোখে দিয়ে দেখছি ভাবের রঙ; মহিষ যেমন পড়ে রে ভাই শুকনো নদীর পাঁকে, ভাবের পাঁকে নাকটি দিয়ে ভাবুক পড়ে থাকে।
প্রথম ভাবুক । তাই তো বটে, মনের নাকে ভাবের তৈল গুঁজি ভাবের ঘোরে ভোঁ হয়ে যাই চক্ষু দুটি বুজি!
দ্বিতীয় ভাবুক । হাঃ হাঃ হা— দাদা তোমার বচনগুলো খাসা, ভাবের চাপে জমাট, আবার হাস্য রসে ঠাসা।
ভাবুক দাদা । ভাবের ঝোঁকে দেখতেছিলেম স্বপ্ন চমৎকার কোমর বেঁধে ভাবুক জগৎ ভবের পগার পার। আকাশ জুড়ে তুফান চলে, বাতাস বহে দমকায়, গাছের পাতা শিহরি কাঁপে, বিজলী ঘন চমকায় মাভৈ রবে ডাকছি সবে খুঁজছি ভাবের রাস্তা (এই) ভণ্ডগুলোর গণ্ডগোলে স্বপ্ন হল ভ্যাস্তা।
প্রথম ভাবুক । যা হবার তা হয়ে গেছে— বলে গেছেন আর্য— গতস্য শোচনা নাস্তি বুদ্ধিমানের কার্য।
দ্বিতীয় ভাবুক । কি আশ্চর্য, ভাবতে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে মশায় এমনি করে মহাত্মারা পড়েন ভাবের দশায়!
ভাবুক দাদা । অন্তরে যার মজুত আছে ভাবের খোরাকি— (তার) ভাবের নাচন মরণ বাঁচন বুঝবি তোরা কি?
দ্বিতীয় ভাবুক । পরাবিদ্যা ভাবের নিদ্রা— আর কি প্রমাণ বাকি পায়ের ধুলো দাও তো দাদা মাথায় একটু মাখি!
ভাবুক দাদা । সবুর কর স্থিরোভব, রাখ এখন টিপ্পনী, ভাবের একটা ধাক্কা আসছে, সরে দাঁড়াও এক্ষুনি।
প্রথম ভাবুক । বিনিদ্র চক্ষু, মুখে নাহি অন্ন আক্কেল বুঝি জড়তাপন্ন! স্নানবিহীন যে চেহারা রুক্ষ— এত কি চিন্তা— এত কি দুঃখ?
দ্বিতীয় ভাবুক । সঘন বহিছে নিশ্বাস তপ্ত— মগজে ছুটিছে উদ্দাম রক্ত। দিন নাই রাত নাই— লিখে লিখে হাত ক্ষয়— একেবারে পড়ে গেলে ভাবের পাতকোয়!
ভাবুক দাদা ।
শৃঙ্খল টুটিয়া উন্মাদ চিত্ত
আঁকুপাঁকু ছন্দে করিছে নৃত্য—
নাচে ল্যাগব্যাগ তাণ্ডব তালে
ঝলক জ্যোতি জ্বলিছে ভালে।
জাগ্রত ভাবের শব্দ পিপাসা
শূন্যে শূন্যে খুঁজিছে ভাষা।
সংহত ভাবের ঝংকার মাঝে
বিদ্রোহ ডম্বরু অনাহত বাজে।
দ্বিতীয় ভাবুক । (হ্যাঁ-হ্যাঁ) ঐ শোনো দুড়দাড় মার-মার শব্দ দেবাসুর পশুনর ত্রিভুবন স্তব্ধ।
প্রথম ভাবুক । বাজে শিঙা ডম্বরু শাঁখ জগঝম্প, ঘন মেঘ গর্জন, ঘোর ভূমিকম্প—।
ভাবুক দাদা ।
কিসের তরে দিশেহারা ভাবের ঢেঁকি পাগল পারা
আপনি নাচে নাচে রে!
ছন্দে ওঠে ছন্দে নামে নিত্যধ্বনি চিত্তধামে
গভীর সুরে বাজে রে।
নাচে ঢেঁকি তালে তালে যুগে-যুগে কালে-কালে
বিশ্ব নাচে সাথে রে!
রক্ত-আঁখি নাচে ঢেঁকি, চিত্ত নাচে দেখাদেখি
নৃত্য মাতে মাতে রে!
প্রথম ভাবুক ।
চিন্তা পরাহতা বুদ্ধি বিশুষ্কা
মগজে পড়েছে ভীষণ ফোসকা!
সরিষার ফুল যেন দেখি দুই চক্ষে!
ডুবজলে হাবুডুবু কর দাদা রক্ষে!
দ্বিতীয় ভাবুক । সূক্ষ্ম নিগূঢ় নব ঢেঁকিতত্ত্ব, ভাবিয়া-ভাবিয়া নাহি পাই অর্থ!
ভাবুক দাদা ।
অর্থ! অর্থ তো অনর্থের গোড়া!
ভাবুকের ভাত-মারা সুখ-মোক্ষ-চোরা;
যত সব তালকানা অঘামারা আনাড়ে
‘অর্থ-অর্থ’ করি খুঁজে মরে ভাগাড়ে!
(আরে) অর্থের শেষ কোথা কোথা তার জন্ম
অভিধান ঘাঁটা, সে কি ভাবুকের কম্ম?
অভিধান, ব্যাকরণ, আর ঐ পঞ্জিকা—
ষোল আনা বুজরুকী আগাগোড়া গঞ্জিকা।
মাখন-তোলা দুগ্ধ, আর লবণহীন খাদ্য,
(আর) ভাবশূন্য গবেষণা— একি ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ?
ভাবের নামতা
ভাবের পিঠে রস তার উপরে শূন্যি—
ভাবের নামতা পড় মাণিক বাড়বে কত পুন্যি—
(ওরে মানিক মানিক রে নামতা পড় খানিক রে)
ভাব এক্কে ভাব, ভাব দুগুণে ধোঁয়া,
তিন ভাবে ডিসপেপ্শিয়া— ঢেকুর উঠবে চোঁয়া
(ওরে মানিক মানিক রে চুপটি কর খানিক রে)
চার ভাবে চতুর্ভুজ ভাবের গাছে চড়—
পাঁচ ভাবে পঞ্চত্ব পাও গাছের থেকে পড়।
(ওরে মানিক মানিক রে এবার গাছে চড় খানিক রে)
।। যবনিকা ।।