জমানো টাকা নয়, বলছি মাইনেটা আজ মিলবে?
না, আজও ক্যাশে টাকা নেই। কাল-পরশু নাগাদ পেতে পারেন। হ্যাঁ ঐ ভদ্রলোকটি আপনাকে খুজছিলেন বিনতা দেবী।
আমাকে খুজছেন!
বিনতা দেবী যেন কতকটা বিস্ময়ের সঙ্গে কিরীটীর মুখের দিকে ঘুরে তাকালেন।
কিরীটী উঠে দাঁড়াল এবং নমস্কার করে বললে, আপনি অবিশ্যি আমাকে চেনেন না বিনতা দেবী। আমার নাম কিরীটী রায়। কলকাতা থেকে আসছি। আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল।
আমার সঙ্গে!
হ্যাঁ। অবশ্য বেশী সময় আপনার আমি নেবো না।
কি বলুন তো?
কথাটা একটু মানে, কিরীটী একটু ইতস্তত করতে থাকে।
বিনতা দেবী বোধ হয় বুঝতে পারেন। বললেন, চলুন পাশের ঘরে যাওয়া যাক।
পাশের ঘরটি ঠিক বসবার উপযুক্ত নয়। স্কুলের বাড়তি জিনিসপত্র ভাঙ্গাচোরা চেয়ার বোড় ইত্যাদিতে ঠাসা ছিল।
একপাশে একটা ছোট বেঞ্চ ছিল, তারই উপরে কিরীটীকে বসতে বলে বিনতা দেবীও তার পাশেই বসলেন নিঃসংকোচেই।
কিরীটী বিনতা দেবীর সপ্রতিভ ব্যবহারে প্রথম আলাপেই বুঝে নিয়েছিল ভদ্রমহিলার বিশেষ কোন সঙ্কোচের বালাই নেই।
বলুন কি বলছিলেন!
কিরীটী কোনরুপ ভণিতা না করেই স্পষ্টাস্পষ্টি সোজাসুজিই তার বক্তব্য শুরু করে, দেখুন আপনাকে আগেই বলেছি বিনতা দেবী, আমি আসছি কলকাতা থেকে এবং অনিলবাবুর আকস্মিক রহস্যজনক মৃত্যু সম্পর্কে
অনিল! চমকে কথাটা বলে বিনতা কিরীটীর মুখের দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালেন।
হ্যাঁ। অনিলবাবু, আপনার যে বিশেষ পরিচিত ছিলেন তা আমি জানি।
কিন্তু আপনি
আমার একমাত্র পরিচয় একটু আগেই তো আপনাকে আমি দিয়েছি। তার বেশী বললেও তো আমাকে আপনি চিনতে পারবেন না। তবে ঐ সঙ্গে সামান্য একটু যোগ করে বলতে পারি মাত্র যে অনিলবাবুর মৃত্যুরহস্যটা জানবার আমি চেষ্টা করছি।
বিনতা অতঃপর কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন। প্রায় মিনিট দুয়েক। তারপর মুখ তুলে কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, তা সেজন্য আমার কাছে আপনি এসেছেন কেন? আপনি কি পুলিসের কোন লোক?
না না-পুলিসের লোক ঠিক আমি নই। তবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে আমার।
কিন্তু সেজন্য আমার কাছে না এসে পুলিসের সাহায্য নিলেই তো আপনি পারতেন!
কথাটা ঠিক তা নয়।
তবে?
পুলিস অনেক সময় অনেক কিছুই জানতে পারে না। ঐ ধরনের হত্যারহস্যের সঙ্গে এমন অনেক কিছুই হয়ত রহস্য থাকে যা জানতে পারলে পুলিসের পক্ষেও অনেক জটিলতার সমস্যা হয়তো সহজেই মিলতে পারত। বুঝতে পারছেন বোধ হয় আমি ঠিক কি বলতে চাইছি আপনাকে!
বিনতা দেবী চুপ করে রইলেন কিছুক্ষণ। কিরীটী আবার ডাকে, বিনতা দেবী?
বলুন।
আপনি তাঁর বিশেষ পরিচিত ছিলেন। তাই আপনার কাছে এসেছি যদি তাঁর সম্পর্কে এমন কোন বিশেষ খবর
কি জানতে চান আপনি কিরীটীবাবু?
আমি কয়েকটা প্রশ্ন আপনাকে করবে, তার জবাব পেলেই আমি সন্তুষ্ট হবো।
কিন্তু, বিনতা দেবী ইতস্ততঃ করতে থাকেন।
আপনি কি তাঁকে—কিছু মনে করবেন না, ভালবাসতেন না?
প্রশ্নোত্তরে বিনতা দেবী কোন জবাব দেন না।
কেবল কিরীটী দেখতে পায় তাঁর চোখের কোল দুটি যেন হঠাৎ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে।
তাই বলছিলাম, আপনি কি চান বিনতা দেবী, তাঁর মৃত্যুর রহস্যটা উঘাটিত হোক?
চাই।
তবে বলুন, অনিলবাবুর মৃত্যুর কয়দিন আগে শেষবার কবে আপনার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল?
তার মৃত্যুর আগের দিন রবিবার কলকাতায় আমি গিয়েছিলাম। সেই সময়েই শেষবার আমাদের দেখা হয়েছিল।
আচ্ছা তাঁর মৃত্যুর আগে ইদানীং এমন কোন কথা কি তাঁর মুখে আপনি শুনেছেন বা তিনি আপনাকে বলেছেন বা তাঁর ঐ সময়কার ব্যবহারে এমন কোন কিছু আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল যেটা আপনার অন্যরকম কিছু মনে হয়েছিল! বুঝতে পারছেন নিশ্চয় আশা করি কি আমি বলতে চাইছি :
একটু চুপ করে থেকে বিনতা বললেন, না, তেমন কিছু মনে পড়ছে না। তবে
তবে? কিরীটী একটু যেন কৌতূহলী হয়ে ওঠে।
তবে শেষবার দেখা হওয়ার আগে এক শনিবার সে এখানে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে কথায় কথায় বলেছিল, ন্যায়রত্ন লেনের বাসা নাকি
কি! কি বলেছিলেন অনিলবাবু?
বলেছিল ন্যায়রত্ন লেনের বাসা নাকি সে ছেড়ে দেবে।
একথা কেন বলেছিলেন?
তা তো জানি না। তবে বলেছিল বাসাটা নাকি ভাল না।
অন্য কোন কারণ বলেননি বাসাটা ছেড়ে দেবার?
না।
আচ্ছা বাড়িওয়ালা কবিরাজ মশাই সম্পর্কে বা তাঁর ফ্যামিলির অন্য কারো সম্পর্কে কোন কথা কি তিনি আপনাকে বলেছিলেন কখনো কোনদিন কোন কথাপ্রসঙ্গে?
না, তবে—
তবে কি?
তবে কবিরাজ মশাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল শুনেছিলাম তারই মুখে একদিন কথায় কথায়।
ও। আচ্ছা আপনি নিশ্চয়ই জানেন, অনিলবাবু, কতদিন ঐ ন্যায়রত্ন লেনের বাড়িতে ছিলেন ঘর নিয়ে?
তা মাস আষ্টেক হবে।
তার আগে কোথায় ছিলেন?
এক দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়ের বাসায় যাদবপুরে।
আর একটা কথা বিনতা দেবী, অনিলবাবুর ইদানীং আয় কি একটু বেড়েছিল?
কিরীটীর প্রশ্নে বিনতা ওর মুখের দিকে বারেকের জন্য চোখ তুলে তাকালেন এবং তাঁর ভাবে বোধ হল যেন একটু ইতস্তত করছেন। কিরীটী তাঁর ইতস্তত ভাবটা বুঝতে পেরে বলে, ভয় নেই আপনার বিনতা দেবী, নির্ভয়ে আমার কাছে সব কথা বলতে পারেন।
মৃদুকণ্ঠে জবাব দিলেন এবারে বিনতা দেবী, হ্যাঁ। অন্তত মুখে সে না বললেও হাবে-ভাবে-আচরণে সেটা আমার কাছে চাপা থাকেনি, তাছাড়া– কথার শেষাংশে পৌছে বিনতা যেন আবার একটু ইতস্তত করতে থাকেন।