সুব্রতকে পাঠিয়ে দিয়েই আমি গোপনে পরের দিন সকালেই পাগলের ছদ্মবেশে এখানে চলে আসি এবং চারিদিকে নজর রেখে ব্যাপারটা বোঝবার চেষ্টা করি।
আমার কেন যেন মনে হয়, যে খুন করেছে এইভাবে পর পর ম্যানেজারদের, সে এখানে সর্বদা উপস্থিত থাকে। কিন্তু কি ভাবে সে এখানে থাকতে পারে? কর্মচারীদের মধ্যে একজন হয়ে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়, কেননা তাতে চট করে ধরা পড়বার সম্ভাবনা খুব বেশী। তবে কেমন করে সে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারে? অথচ এ কথা যখন অবধারিত, এখানে সর্বদা উপস্থিত না থাকলে চারিদিকে দেখেশুনে তার পক্ষে মানুষ খুন করা সম্ভব হয় না, তখন নিশ্চয়ই কুলিদের মধ্যেই তাদের একজন হয়ে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে।
সঙ্গে সঙ্গে অনুসন্ধান শুরু করে দিই।
এবং এখানে আসবার দিন রাত্রে যখন কুলিদের মধ্যে একজন খুন হল, সে-সময় আমি কুলিদের ধাওড়ার মধ্যেই কুলি সেজে উপস্থিত ছিলাম; কুলিটাকে খুন করে সুধাময় কুলির ছদ্মবেশে যখন পালায় তখন আমি অন্ধকারে অনুসরণ করে তার ঘরটা দেখে আসি।
বিমলবাবু ও চন্দনসিংয়ের সাহায্যে নজন কুলিকে রাতারাতি ধানবাদে কাজের অছিলায় হাঁটাপথে রেল লাইন ধরে প্রচুর টাকা ঘুষ দিয়ে বিদায় করে মাত্র একজন কুলি নিয়ে বিমলবাবুর সাহায্যে রামলোচনের জামার পকেট থেকে চাবি চুরি করে, খনির মধ্যে নেমে ডিনামাইট দিয়ে পিলার ধসিয়ে ১৩নং কাঁথি ভাঙা হয় তাও আমার নজর এড়ায় না। সুব্রত, তুমি রুমালে বাঁধা পলতে ও ডিনামাইট পেয়েছ!
পরের দিন সকলে জানল দশজন লোক মারা গেছে। যদিও মারা গেল একজন মাত্র। এটা শুধু কুলিদের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করবার জন্য সাজিয়ে করা হয়েছিল।
ম্যানেজারদের মারা হয় চারিদিকে সকলের মনে একটা ভয়াবহ আতঙ্ক জাগাবার জন্য, যাতে করে খনির কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং খনির কাজ বন্ধ হয়ে গেলে নিজে শেয়ার ছেড়ে দেবার ভান দেখিয়ে ঝুনঝুনওয়ালাকে দিয়ে তার শেয়ারও বিক্রি করিয়ে বেনামীতে সমগ্র খনিটা কিনে নিলেই কাজ হাসিল হয়ে যায়।
সব কিছু প্রায় হয়ে এল, সুধাময় ঝুনঝুনওয়ালার সঙ্গে চিঠিপত্র লিখে যখন সব ঠিক করে ফেললে, তখন তার অপকর্মের সহায়ক বিমলবাবু ও চন্দনসিংকে সরাবার মতলব করল।
গতকাল বিমলকে মারলেও চন্দনসিং নাগালের বাইরে পালিয়ে গেল। কেননা প্রভুর মনোগত ইচ্ছাটা সে আগেই টের পেয়েছিল। Metallic nails পরে তাতে বিষ মাখিয়ে হাতের আঙুলে পরে, তার সাহায্যে গলা টিপে সুধাময় কাজ হাসিল করত। Strangle করবার সময় সেই metallic nails গলার মাংসে বসে গিয়ে বিষের ক্রিয়ায় মৃত্যু ঘটাত। এখন কথা হচ্ছে, শার্দুলের ডাক যেটা শোনা যেত সেটা আর কিছুই নয় সুধাময় নিজেই মুখ দিয়ে বাঘের হুবহু অনুকরণ করতে পারত। তোমরা হয়ত শুনে থাকবে এক-একজন অবিকল পশুপক্ষীর ডাক মুখ দিয়ে অনুকরণ করতে পারে। এটা একটা মানুষকে ভয় দেখাবার ফন্দি। তাছাড়া খুব উঁচু হিলওয়ালা একপ্রকার কাঠের জুতো পরে গায়ে একটা ধূসরবর্ণের ওড়না চাপিয়ে সুধাময় মাঠের মধ্যে দিয়ে দ্রুতবেগে চলত। একে সে একটু বেশিরকম লম্বা ছিল, তার ওপরে কাঠের জুতো পরাতে তাকে বেশ অস্বাভাবিক রকম বলে মনে হত। কাঠের জুতো ব্যবহার করবার মধ্যে আর একটা মতলব তার ছিল; পায়ের ছাপ পড়ত না। সুব্রতকে মারবার জন্য একটা সাঁওতাল কুলিকে সুধাময়বাবুই engage করেছিলেন; কুলিটা বিষাক্ত তীর ছুঁড়ল, কিন্তু unsuccessfull হল। কিন্তু সুব্রতকে তীর ছোঁড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সুধাময়ও লোকটাকে গুলি করে মারে। আমি সেই সময় ওদের পেছনেfollow করতে করতে উপস্থিত ছিলাম বলে সব ব্যাপারটা নিজের চোখের সামনে ঘটতে দেখেছি। এই হল এখানকার খনির মৃত্যুরহস্য।
কিরীটী চুপ করল।
আমাদের গল্পও এইখানেই শেষ হল।